বিনিয়োগ সহজে যুক্তরাজ্যের একগুচ্ছ সুপারিশ
বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগকারী দেশগুলোর মধ্যে যুক্তরাজ্যের অবস্থান দ্বিতীয়। বর্তমানে ২০০টি ব্রিটিশ কোম্পানির বিনিয়োগ রয়েছে এ দেশে। তাদের বিনিয়োগের পরিমাণ প্রায় ২ দশমিক ৪৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
বাংলাদেশে সক্রিয় প্রতিষ্ঠানগুলো নতুন করে বিনিয়োগ বাড়ানোর পাশাপাশি আরও কিছু ব্রিটিশ কোম্পানি বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে আগ্রহ দেখাচ্ছে। এরই অংশ হিসেবে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের কতিপয় সমস্যা সমাধানে সুপারিশ।
অর্থ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) সূত্রে এমন তথ্য জানা গেছে। সূত্র জানায়, সম্প্রতি ঢাকায় ব্রিটিশ হাইকমিশনার বিডা’র নির্বাহী চেয়ারম্যানের নিকট চিঠি লিখে এ বিষয়ে একগুচ্ছ সুপারিশ দিয়েছে। চিঠিটি বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান অর্থ সচিবের নিকট পাঠিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানিয়েছে।
চিঠিতে ব্রিটিশ হাইকমিশন বিদেশি বিনিয়োগকারীদের কতিপয় সমস্যা সমাধানের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে। এক্ষেত্রে কমিশনের সুপারিশগুলো হচ্ছে- দেশের আর্থিক ব্যবস্থাপনায় দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ এবং এডহক পরিবর্তন না করা। ডাবল ট্যাক্সেসন ট্রিটির সুবিধা সহজ ও দ্রুতকরণ, কোম্পানির প্রচারণামূলক কার্যক্রম বাজেট ০.৫ শতাংশে সীমিত রাখার বিধান পর্যালোচনা করা।
এছাড়া যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন, বন্দরসমূহের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি, প্রক্রিয়াগত জটিলতা (ট্যাক্সের ক্ষেত্রে) নিরসন, দেশি ও বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য উদ্দীপনা বা প্রণোদনা প্যাকেজ প্রদান, পাশাপাশি আইনি প্রক্রিয়া দ্রুততরকরণের ব্যবস্থা গ্রহণের কথা উল্লেখ করা হয় চিঠিতে।
এদিকে গত ৩ সেপ্টেম্বর বিডার চতুর্থ বর্ষপূর্তি উদযাপন অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ‘বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগ কম’ জানিয়ে বলেন, ‘পৃথিবীতে এ মুহূর্তে জিডিপি সাইজ হচ্ছে ১৮ ট্রিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে ৬০ শতাংশ হচ্ছে ডিরেক্ট ফরেন ইনভেস্টমেন্ট (প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ)। ভেরি আনফরচুনেটলি (খুবই দুর্ভাগ্যজনক) এফডিআই (সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগ) পরিমাণ আমাদের কম। এফডিআই সবচেয়ে বেশি এনজয় (উপভোগ) করে যুক্তরাষ্ট্র এরপর চীন। সিঙ্গাপুর করে ১০৫ বিলিয়ন ডলার, ভারত ৫১ বিলিয়ন ডলার। বেশিরভাগ এফডিআই তাদের দখলে।
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি, যে ভৌত অবকাঠামোগুলো তৈরি করেছি এখন বিনিয়োগ আসবে। ফিজিক্যাল ইনফ্রাস্ট্রাকচার (দৃশ্যমান অবকাঠামো) আমাদের হয়েছে কিন্তু নন-ফিজিক্যাল ইনফ্রাস্ট্রাকচার (অদৃশ্যমান অবকাঠামো) অর্থাৎ মানবিক কাজগুলো দরকার, মানুষের হৃদয় স্পর্শ করা, মানুষকে ভালোবাসা— এ কাজগুলো এখন করতে হবে।’
অর্থমন্ত্রী বলেন, দেশি বা বিদেশি সব বিনিয়োগকারী আমাদের কাছে সমান। আমরা কোনো ডিসক্রিমিনেইট (পক্ষপাতমূলক আচরণ) করব না, করিও না। যারা বিনিয়োগ করবে তারাই আমাদের সম্পদ। যেসব জায়গায় ঘাটতি রয়েছে সেগুলো ঠিক করার তাগিদ দিয়ে অর্থমন্ত্রী আরও বলেন, ‘ভিয়েতনাম যেভাবে পেরেছে, সেভাবে আমাদেরও করতে হবে।’
ব্রিটিশ হাইকমিশনের চিঠির বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান মো. সিরাজুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, বাংলাদেশে যুক্তরাজ্যের যে বিনিয়োগ রয়েছে, সেটি রাখার পাশাপাশি তারা নতুন করে বিনিয়োগ করতে চায়। এজন্য কিছু বিষয়ে তারা দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। বাংলাদেশ সরকারও দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।
তিনি আরও বলেন, ব্রিটিশ হাইকমিশন যেসব বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে সেগুলো সব বিদেশি বিনিয়োগকারীরই চাওয়া। বিশেষ করে আর্থিক ব্যবস্থাপনায় দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ এবং এডহক পরিবর্তন না করার বিষয়টি সবারই চাওয়া। আমরাও সরকারকে বলেছি যে, কোনো আইন যেন হুটহাট পরিবর্তন করা না হয়। কারণ যারা বিনিয়োগ করবে তারা দীর্ঘমেয়াদের ব্যবসার জন্যই বিনিয়োগ করবে।
বিডা’র নির্বাহী চেয়ারম্যান বলেন, বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য আমরা ইতোমধ্যে বেশকিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। আরও পদক্ষেপ গ্রহণ প্রক্রিয়াধীন। আশা করি, খুব শিগগিরই বিনিয়োগকারীদের এসব সমস্যা দূর হবে।
ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশে বিনিয়োগকারী দেশগুলোর মধ্যে যুক্তরাজ্যের অবস্থান দ্বিতীয়, যেখানে ২০২০ সালের মার্চ পর্যন্ত যুক্তরাজ্যভিত্তিক প্রতিষ্ঠানসমূহ বাংলাদেশে ২ দশমিক ৪৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করেছে এবং প্রায় ২০০টি ব্রিটিশ প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে সক্রিয়।
২০১৯-২০ অর্থবছরে বাংলাদেশ ৩.৪৫ বিলিয়ন মূল্যের পণ্য যুক্তরাজ্যে রফতানি করে, যেখানে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে এর পরিমাণ ছিল ৪.৮৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
এ প্রসঙ্গে ডিসিসিআই সভাপতি শামস মাহমুদ বলেন, ব্রিটিশ বিনিয়োগ আকর্ষণে নতুন পণ্যের উদ্ভাবন এবং পণ্যের বহুমুখীকরণের ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। বাংলাদেশের অবকাঠামো খাতের বড় প্রকল্পসমূহে যুক্তরাজ্যের বিনিয়োগ আকর্ষণে ‘ইনফ্রাস্ট্রাকচার বন্ড’ চালুর পক্ষেও মত দেন তিনি। বলেন, ‘দেশের অর্থনীতির গতি চলমান রাখা, কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি এবং কোডিভ-পরবর্তী অর্থনীতির চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশি পণ্যের রফতানিতে শুল্ক ও কোটামুক্ত সুবিধা আরও দীর্ঘ সময়ের জন্য বলবৎ রাখা একান্ত প্রয়োজন। পাশাপাশি বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্যের মধ্যকার বাণিজ্য সম্প্রসারণে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) স্বাক্ষরের জন্য দুই দেশের সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে।
এমইউএইচ/এমএআর/এমএস