এবার পেঁয়াজের বাজার নিয়ন্ত্রণে আগে থেকেই প্রস্তুত সরকার
>> হঠাৎ করে দাম বাড়ার কারণ অনুসন্ধানে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়
>> আগামী সপ্তাহ থেকে কম দামে পেঁয়াজ বিক্রি করবে টিসিবি
>> মজুত যথেষ্ট, দাম বাড়ার কোনো শঙ্কা নেই : বাণিজ্য সচিব
গত বছর এই সেপ্টেম্বরেই ভারত প্রথমে পেঁয়াজের রফতানিমূল্য বৃদ্ধি এবং পরে রফতানি বন্ধ করে দিলে দেশের বাজারে দেখা দেয় অস্থিরতা। ৫০ টাকার পেঁয়াজের দাম ওঠে ২৫০ থেকে ৩০০ টাকায়। এবারও ঠিক সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহেই মাত্র দুদিনে ভারতীয় পেঁয়াজের দাম ৫০ শতাংশ বেড়েছে।
হঠাৎ করে কেন দাম বাড়ল তার কারণ জানতে সংশ্লিষ্টদের নিয়ে রোববার বৈঠক করেন বাণিজ্য সচিব। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বলছে, গত বছরের অভিজ্ঞতা থেকে এবার আগে থেকেই যথেষ্ট প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। পেঁয়াজের মজুতও যথেষ্ট। আমদানিও স্বাভাবিক রয়েছে।
সরকারি বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) কাছেও পর্যাপ্ত পেঁয়াজ মজুত রয়েছে। এবার পেঁয়াজের বাজারে অস্থিরতার কোনো শঙ্কা নেই। হঠাৎ করে যেটুকু দাম বেড়েছে সেটা দু-একদিনের মধ্যে কমে যাবে। বাজার স্থিতিশীল রাখতে আগামী সপ্তাহ থেকে টিসিবির মাধ্যমে সাশ্রয়ী মূল্যে খোলাবাজারে পেঁয়াজ বিক্রি করা হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাণিজ্য সচিব ড. জাফর উদ্দীন জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমরা পেঁয়াজের মূল্যবৃদ্ধির বিষয়ে যথেষ্ট সচেতন। একদিন আগে হঠাৎ করে পেঁয়াজের দাম কিছু বাড়লেও আজ পাইকারি বাজারে আবার কিছুটা কমেছে। হঠাৎ করে দাম কেন বাড়ল সে তথ্যগুলো আমরা সংগ্রহ করছি।’
তিনি আরও বলেন, এবার গতবারের মতো পরিস্থিতি সৃষ্টির কোনো শঙ্কা নেই। গতবার একেবারে অস্বাভাবিকভাবে ওই ধরনের পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল। এবার আমরা খুব সতর্ক। এছাড়া আগামী সপ্তাহ থেকে নতুন পেঁয়াজ না ওঠা পর্যন্ত খোলাবাজারে পেঁয়াজ বিক্রি করবে টিসিবি। আশা করি যেটুকু বেড়েছে দু-একদিনের মধ্যে সেটুকু কমে যাবে। টিসিবিসহ দেশে পর্যাপ্ত পেঁয়াজ মজুত রয়েছে।
এদিকে গত বৃহস্পতিবার যে দেশি পেঁয়াজ ৫৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে, গতকাল শনিবার তা ৬৫ টাকায় বিক্রি করেছেন বিক্রেতারা। বাছাই করা দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকায়। ৪০ টাকা কেজির ভারতীয় পেঁয়াজের দাম উঠেছে ৬০ টাকায়।
আরেকটু পেছনে তাকালে দেখা যাবে, পেঁয়াজের বাজারে কতটা সুসময় ছিল। এক মাস আগেই দেশের বাজারে দেশি পেঁয়াজের কেজি ৪০ টাকার মধ্যে ছিল। ভারতীয় পেঁয়াজের কেজি ছিল ২৫ থেকে ৩০ টাকা।
আবারও এই সেপ্টেম্বরেই পেঁয়াজের মূল্যবৃদ্ধিতে জনমনে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে- এবারও কি পেঁয়াজের বাজার অস্থির হয়ে উঠবে। তবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জনগণকে আশ্বস্ত করে বলছে, এবার দাম বাড়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। বাজার যাতে কোনোভাবেই অস্থির না হয় সেজন্য আগামী সপ্তাহ থেকে নতুন পেঁয়াজ না ওঠা পর্যন্ত কম দামে টিসিবির মাধ্যমে পেঁয়াজ বিক্রি করবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
দেশের বাজারে হঠাৎ লাফিয়ে লাফিয়ে দাম বাড়ার কারণ- ভারতে মূল্যবৃদ্ধি। ভারতীয় গণমাধ্যম তাদের প্রতিবেদনে জানায়, দেশটিতে বৃষ্টিতে মজুত থাকা পেঁয়াজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। একই কারণে নতুন মৌসুমের পেঁয়াজ উঠতেও বিলম্ব হবে। বাংলাদেশের বাজারেও এই নিত্যপণ্যটির দাম বেড়েছে।
হঠাৎ পেঁয়াজের দাম বাড়ার কারণ জানতে চাইলে পুরান ঢাকার শ্যামবাজারের পেঁয়াজের আড়ত আমানত ভাণ্ডারের মালিক মানিক সাহা বলেন, ভারতে বন্যার কারণে সম্প্রতি ভারতীয় পেঁয়াজের সরবরাহ কমে গেছে, সেই সাথে দামও বেড়েছে। ভারতীয় পেঁয়াজের সাথে পাল্লা দিয়ে গত এক সপ্তাহে দেশি পেঁয়াজের বাজারও বেড়েছে। যেহেতু গতকালের চেয়ে আজ পেঁয়াজের দাম কিছুটা কম তাতে মনে হচ্ছে, দাম এবার কমে যাবে।
‘ঘরপোড়া গরু যেমন সিঁদুরে মেঘ দেখলেই ভয় পায়’, ক্রেতার অবস্থাও হয়েছে তেমন। গত বছর দেশে পেঁয়াজের কেজি ৩০০ টাকা পর্যন্ত উঠেছিল। মূল্যবৃদ্ধির শুরুটা হয়েছিল এই সেপ্টেম্বরেই ভারত প্রথমে পেঁয়াজের রফতানি মূল্যবৃদ্ধি এবং পরে রফতানি বন্ধ করে দিলে দেশের বাজারে দেখা দেয় অস্থিরতা।
ভারত নিজেদের বাজার সামাল দিতে গত বছরের ১৩ সেপ্টেম্বর পেঁয়াজ রফতানিতে ন্যূনতম মূল্য প্রতি টন ৮৫০ ডলার বেঁধে দেয়। ৩০ সেপ্টেম্বর রফতানিই নিষিদ্ধ করে। এরপর দেশের বাজারে পেঁয়াজের দামে শতক হয়, দ্বিশতক হয়। নভেম্বরে ৩০০ হাঁকায় পেঁয়াজ। তখন মিয়ানমার, চীন, মিসর ও পাকিস্তান থেকে নানা রঙের পেঁয়াজ এনে পরিস্থিতি সামাল দেয়ার চেষ্টা করে সরকার। আকাশপথেও আমদানি করতে হয়।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের হিসাবে, বাংলাদেশে গত মৌসুমে সাড়ে ২৫ লাখ টন পেঁয়াজ উৎপাদন হয়েছে। অবশ্য উৎপাদন ও চাহিদার হিসাব নিয়ে নানা বিভ্রান্তি রয়েছে। আমদানি পেঁয়াজের প্রায় ৯৫ শতাংশ আসে ভারত থেকে। কোনো কারণে ভারত থেকে আমদানি বিঘ্ন হলে অন্য দেশে পেঁয়াজের খোঁজ করেন আমদানিকারকরা।
এমইউএইচ/বিএ/এমকেএইচ