ই-ভ্যালির বিষয়ে তদন্তে ভোক্তা অধিকার ও প্রতিযোগিতা কমিশন

মেসবাহুল হক
মেসবাহুল হক মেসবাহুল হক , নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১০:৩০ পিএম, ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২০

অডিও শুনুন

>> প্রতারণার বিষয়টি খতিয়ে দেখবে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর
>> অস্বাভাবিক অফারে বাজারে প্রভাবের বিষয়ে তদন্ত করবে প্রতিযোগিতা কমিশন

ডিজিটাল বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান ই-ভ্যালির বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ ওঠায় প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম ইতোমধ্যেই তদন্ত করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। প্রাথমিক তদন্তের ভিত্তিতে এবার ই-ভ্যালির কার্যক্রম অধিকতর তদন্তে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর ও প্রতিযোগিতা কমিশনকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। একইসঙ্গে এ প্রসঙ্গে আগামী সাত কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন বাণিজ্য সচিবের কাছে পাঠাতে বলা হয়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

ই-ভ্যালির বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ ওঠায় প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম খতিয়ে দেখতে গত ২৫ আগস্ট এফটিএ অনুবিভাগের যুগ্ম সচিব মো. আবদুছ সামাদ আল আজাদকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এ কমিটি তাদের তদন্ত প্রতিবেদন বৃহস্পতিবার (৩ সেপ্টেম্বর) বাণিজ্য সচিব ড. জাফর উদ্দীনের কাছে হস্তান্তর করেছে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, ই-ভ্যালির প্রতারণার সঙ্গে ভোক্তার স্বার্থ জরিত। এ জন্য ই-ভ্যালির কার্যক্রম অধিকতর তদন্তে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরকে দায়িত্ব দেয়া উচিত। পাশাপাশি ই-ভ্যালি অস্বাভাবিক অফার দিয়ে বাজারে একচেটিয়া প্রভাব বিস্তার করছে কিনা এ বিষয়টি দেখার দায়িত্ব প্রতিযোগিতা কমিশনের। তাই তদন্ত কমিটি এ দুই সংস্থাকে তদন্তের সুপারিশ করে।

এ প্রতিবেদনের প্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবারই বাণিজ্য সচিব ই-ভ্যালির বিষয়ে অধিকতর তদন্তের জন্য জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর ও প্রতিযোগিতা কমিশনকে দায়িত্ব দেন। একইসঙ্গে আগামী সাত কর্মদিবসে এ বিষয়ে তদন্ত প্রতিবেদন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে জমা দিতে বলেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাণিজ্য সচিব ড. জাফর উদ্দীন জাগো নিউজকে বলেন, ‘ই-ভ্যালির কার্যক্রম বিশেষভাবে খাতিয়ে দেখতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর ও প্রতিযোগিতা কমিশনকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। এ দুই সংস্থার তদন্তে যদি অনিয়ম পাওয়া যায় তাহলে প্রচলিত আইন অনুযায়ী ই-ভ্যালির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

সূত্র জানায়, দেশে ই-বাণিজ্যের প্রসার ঘটাতে চাচ্ছে সরকার। তবে সম্প্রতি ডিজিটাল বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান ই-ভ্যালির বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ উঠেছে। তাই ই-ভ্যালিসহ ই-বাণিজ্যকে নিয়মের মধ্যে আনতে ইতোমধ্যেই কাজ শুরু করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা গত ২৭ আগস্ট নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে ই-বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিয়মের মধ্যে থেকে কার্যক্রম পরিচালনা করতে বাধ্য করার তাগিদ দেন। ই-বাণিজ্যের প্রসার ঘটাতে গিয়ে যেন কোনো ভোক্তা প্রতারিত না হয় সেদিকে কঠোরভাবে নজরদারি করতে বলা হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানকে নিয়মের মধ্যে থেকে ব্যবসা পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

এদিকে ই-ভ্যালির বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ ওঠায় প্রতিষ্ঠানটিসহ এর চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিন ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. রাসেলের পরিচালিত সব ব্যাংক হিসাব স্থগিত করার নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

গত ২৭ আগস্ট কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অধীন বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) থেকে সব ব্যাংকে চিঠি দিয়ে এ নির্দেশনা দেয়া হয়। চিঠিতে তাদের নামে থাকা সব হিসাব আগামী ৩০ দিন স্থগিত রাখতে বলা হয়েছে। বিএফআইইউ সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।

ব্যাংকগুলোতে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়, ই-ভ্যালি লিমিটেডের নামে এবং প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিন, এনআইডি নম্বর- স্মার্ট (২৮০....৭১) ও এমবি মো. রাসেল এনআইডি নম্বর- স্মার্ট (১৪৮...৪৪) এর নামে পরিচালিত সব হিসাবের লেনদেন মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের ক্ষমতাবলে পত্র ইস্যুর তারিখ থেকে ৩০ দিনের জন্য স্থগিত রাখার নির্দেশনা দেয়া হলো। লেনদেন স্থগিতাদেশের ক্ষেত্রে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ বিধিমালা ২০১৯ এর ২৬ (২) ধারা বিধান প্রযোজ্য হবে।

এছাড়া বর্ণিত প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিদের নামে পরিচালিত হিসাবসমূহের হিসাব খোলার ফরম কেওয়াইসি হিসাব খোলার শুরু থেকে হালনাগাদ লেনদেন বিবরণী এবং বর্ণিত সময়ে ওই হিসাবে ৫০ লাখ বা তার বেশি টাকা জমা ও উত্তোলন সংশ্লিষ্ট তথ্য দলিলাদি পাঠানোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

এমইউএইচ/বিএ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।