সরকারি অর্থ ব্যয়ে পরিকল্পনা না থাকার কথা স্বীকার করল অর্থ বিভাগ
অডিও শুনুন
অর্থবছরের শুরুর দিকে বাজেটে নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী রাজস্ব আহরণ ও ব্যয়ে তেমন কোনো পরিকল্পনা থাকে না। তবে বছরের শেষদিকে ইউটিলিটি বিল পরিশোধ, মেরামত সংরক্ষণ, নির্মাণ ও পূর্ত এবং মালামাল ক্রয়ের হিড়িক পড়ে যায়। সেজন্য অনেক ক্ষেত্রে সরকারি ব্যয়ের গুণগতমান নিশ্চিত করা সম্ভব হয় না। অথচ সরকারকেই অপরিকল্পিত ঋণের দায়ভার গ্রহণ করতে হয়। ফলে বাজেট শৃঙ্খলা নিশ্চিত করা যায় না।
জাতীয় সংসদ কর্তৃক অনুমোদিত বাজেট সুষ্ঠুভাবে সময়মতো বাস্তবায়নের লক্ষ্যে আগাম পরিকল্পনা গ্রহণ এবং তা বাস্তবায়ন সম্ভব হলে অপরিকল্পিত সরকারি ঋণ এড়ানো এবং ঋণজনিত ব্যয় কমানো সম্ভব বলে মনে করছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ।
তাই আগামীতে সরকারের আয় ও ব্যয়ের মধ্যে ভারসাম্য ফিরিয়ে আনতে মন্ত্রণালয় বা বিভাগ ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের বাজেটের সুষ্ঠু বাস্তবায়ন নিশ্চিতের লক্ষ্যে অর্থবছরের শুরুতেই একটি বাজেট বাস্তবায়ন পরিকল্পনা গ্রহণ, যথাযথভাবে পরিকল্পনা বাস্তবায়ন এবং বাজেট বাস্তবায়ন নিয়মিতভাবে পরিবীক্ষণে একটি পরিপত্র জারি করেছে অর্থ বিভাগ। গতকাল সোমবার (৩১ আগস্ট) পরিপত্রটি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়সহ সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সচিবের কাছে পাঠানো হয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
পরিপত্রে বলা হয়, সব মন্ত্রণালয় বা বিভাগ বর্তমানে কম্পিউটারভিত্তিক মাল্টিমডিউল ডাটাবেজ তথা সরকারের কেন্দ্রীভূত সমন্বিত বাজেট প্রণয়ন, বাস্তবায়ন ও হিসাবরক্ষণে ‘আইবাস ++’ পদ্ধতিতে বাজেট প্রণয়ন করছে। ইতোমধ্যে সকল মন্ত্রণালয় বা বিভাগে বাজেট বাস্তবায়নে এ মডিউল চালু হয়েছে। সরকারের নীতি, উদ্দেশ্য ও অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে বাজেট প্রণয়ন, সরকারি দফতর ও সংস্থাসমূহের কর্মকৃতি মূল্যায়নের লক্ষ্যে কর্মকৃতি ও ফলাফল নির্দেশক এবং বছরভিত্তিক লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণের ক্ষেত্রেও মন্ত্রণালয় বা বিভাগ ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানসমূহ যথেষ্ট দক্ষতা অর্জন করেছে। তবে সময়মতো ও সুষ্ঠু বাজেট বাস্তবায়ন এখনো একটি প্রধান চ্যালেঞ্জ।
অর্থ বিভাগ বলছে, প্রতিবছর বাজেটে কিছু নতুন নীতি, কর্মসূচি ও কার্যক্রম ঘোষণা হয়। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বা বিভাগের আন্তরিক প্রচেষ্টায় ২০০৯-১০ অর্থবছর থেকে ২০১৯-২০ অর্থবছর পর্যন্ত বাজেটে ঘোষিত কার্যক্রমসমূহের মধ্যে অধিকাংশ কার্যক্রম ইতোমধ্যে সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। তবে বিগত তিন অর্থবছরে ঘোষিত কিছু কার্যক্রম এখনো বাস্তবায়নাধীন।
এছাড়া চলতি ২০২০-২০২১ অর্থবছরের বাজেটেও কিছু কার্যক্রম ঘোষণা করা হয়েছে। এ সকল কার্যক্রম যথাসময়ে সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সুনির্দিষ্ট ও সময়নিষ্ঠ পরিকল্পনা গ্রহণ করা প্রয়োজন। বিগত বছরের অভিজ্ঞতা থেকে দেখা যায়, বিভিন্ন মন্ত্রণালয় বা বিভাগ ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের বাজেট বাস্তবায়ন সাধারণত অর্থবছরের প্রথমার্ধে ধীরগতিতে চলে। অর্থবছরের শুরুর দিকে বাজেটে নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী রাজস্ব আহরণের ক্ষেত্রে যেমন ধীরগতি পরিলক্ষিত হয়, তেমনি বেতন-ভাতা ছাড়া অন্যান্য আইটেমের বিপরীতে ব্যয়ের পরিমাণও কম থাকে।
বিশেষ করে বিভিন্ন ইউটিলিটি বিল পরিশোধ, মেরামত সংরক্ষণ, নির্মাণ ও পূর্ত এবং মালামাল ক্রয় বা সংগ্রহের ক্ষেত্রে অর্থবছরের শেষদিকে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়ে থাকে। ফলে অনেক ক্ষেত্রে সরকারি ব্যয়ের গুণগতমান নিশ্চিত করা সম্ভব হয় না। উপরন্তু বছরের শেষে এসে সরকারকে অপরিকল্পিত ঋণের দায়ভার গ্রহণ করতে হয়। ফলে বাজেট শৃঙ্খলা নিশ্চিত করা যায় না।
পরিপত্রে বলা হয়, সরকারের আয় ও ব্যয়ের মধ্যে ভারসাম্যহীনতার একটি প্রধান কারণ রাজস্ব আহরণ ও সরকারি অর্থ ব্যয়ের ক্ষেত্রে সুষ্ঠু পরিকল্পনা না থাকা। জাতীয় সংসদ কর্তৃক অনুমোদিত বাজেট সুষ্ঠুভাবে সময়মতো বাস্তবায়নের লক্ষ্যে আগাম পরিকল্পনা গ্রহণ এবং তা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হলে অপরিকল্পিত সরকারি ঋণ এড়ানো এবং ঋণজনিত ব্যয় উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমানো সম্ভব হবে বলে আশা করা যায়।
এসব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে প্রত্যেক মন্ত্রণালয় বা বিভাগ ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের বাজেটের সুষ্ঠু বাস্তবায়ন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে অর্থবছরের শুরুতেই একটি বাজেট বাস্তবায়ন পরিকল্পনা গ্রহণ, যথাযথভাবে উক্ত পরিকল্পনা বাস্তবায়ন এবং বাজেট বাস্তবায়ন নিয়মিতভাবে পরিবীক্ষণ করা প্রয়োজন। বিভিন্ন মন্ত্রণালয় বা বিভাগ যেন বাজেট বাস্তবায়নের একটি সুষ্ঠু পরিকল্পনা গ্রহণ করতে পারে সে লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় নীতিমালা ও পদ্ধতিসহ বিভিন্ন ফরম প্রস্তুত করা হয়েছে। উক্ত নীতিমালা ও পদ্ধতি অনুসরণে প্রত্যেক মন্ত্রণালয় বা বিভাগ ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠান কর্তৃক বাজেট বাস্তবায়ন পরিকল্পনা প্রণয়ন করা একান্ত জরুরি।
এমইউএইচ/এইচএ/জেআইএম