১০০ টাকা আয়ে ডায়মন্ড লাইফের ব্যয় ১৩৮!

সাঈদ শিপন
সাঈদ শিপন সাঈদ শিপন , জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১২:০৮ পিএম, ২৩ আগস্ট ২০২০

১০০ টাকা আয় করতে গিয়ে ১৩৮ টাকা ব্যয় করে ফেলছে নতুন প্রজন্মের জীবন বিমা কোম্পানি ডায়মন্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্স। এমন অস্বাভাবিক অর্থ ব্যয়ের কারণে প্রতিষ্ঠানটিতে কোনো উদ্বৃত্ত অর্থ থাকছে না। যে কারণে ব্যবসা শুরুর পর একে একে ছয় বছর পার হলেও লাইফ ফান্ড ঋণাত্মকই রয়ে গেছে। এতে প্রতিষ্ঠানটি থেকে বিমা পলিসি কেনা গ্রাহকদের অর্থ ফেরত পাওয়া ঝুঁকির মধ্যে পড়ে গেছে।

জাগো নিউজের অনুসন্ধানে জানা গেছে, সর্বশেষ সমাপ্ত হিসাব বছর ২০১৯ সালে ডায়মন্ড লাইফ প্রথম বর্ষ প্রিমিয়াম আয় করেছে নয় কোটি ৬৭ লাখ টাকা। এর বিপরীতে ব্যয় করেছে ১৩ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। অর্থাৎ প্রতিষ্ঠানটি যে আয় করেছে তার থেকে তিন কোটি ৬৮ লাখ টাকা বেশি ব্যয় করেছে। অন্যভাবে বলা যায়, কোম্পানিটি ১০০ টাকা আয় করতে ব্যয় করেছে ১৩৮ টাকা।

শুধু ২০১৯ সাল নয়, ব্যবসা শুরুর পর থেকে এই জীবন বীমা কোম্পানি এমন অস্বাভাবিক অর্থ ব্যয় করছে। ২০১৮ সালে কোম্পানিটি প্রথম বর্ষ বীমা পলিসি বিক্রি করে প্রিমিয়াম আয় করে আট কোটি ২৫ লাখ টাকা। এর বিপরীতে ব্যয় করে ১২ কোটি ৪২ লাখ টাকা। অর্থাৎ ১০০ টাকা আয় করতে ব্যয় হয় ১৫১ টাকা।

তার আগের বছর অর্থাৎ ২০১৭ সালে প্রথম বর্ষ প্রিমিয়াম বাবদ আয় হয় ১০ কোটি ৯৮ লাখ টাকা। এর বিপরীতে ব্যয় হয় ১৩ কোটি ৩০ লাখ টাকা। এ হিসাবে ১০০ টাকা আয় করতে ব্যয় হয় ১২১ টাকা।

বীমা পলিসি বিক্রি করতে এমন অস্বাভাবিক অর্থ ব্যয় হলেও পরবর্তী বছরে নবায়ন প্রিমিয়াম বাবদ আদায় হচ্ছে খুবই নগণ্য পরিমাণ অর্থ। ২০১৯ সালে নবায়ন প্রিমিয়াম বাবদ আয় হয় তিন কোটি ২৫ লাখ টাকা। তার আগে অর্থাৎ ২০১৮ সালে দুই কোটি ৮২ লাখ টাকা এবং ২০১৭ সালে এক কোটি ৭০ লাখ টাকা নবায়ন প্রিমিয়াম বাবদ আয় করে তারা। অর্থাৎ কোম্পানিটি প্রতি বছর যে টাকার নতুন বীমা পলিসি বিক্রি করছে, পরের বছরে তার অর্ধেকের বেশি আদায় হচ্ছে না।

এদিকে আইন দ্বারা ব্যবস্থাপনা ব্যয়ের সীমা নির্ধারণ করে দেয়া হলেও তা মানছে না কোম্পানিটি। বছরের পর বছর ধরে বীমাগ্রাহকদের টাকা অবৈধভাবে ব্যয় করছে ডায়মন্ড লাইফ। ব্যবস্থাপনা খাতে আইন লঙ্ঘন করে ২০১৯ সালে চার কোটি ১৭ লাখ টাকা খরচ করেছে তারা। এর আগের বছর অর্থাৎ ২০১৮ সালে চার কোটি ৭৪ লাখ টাকা এবং ২০১৭ সালে দুই কোটি ৮৫ লাখ টাকা অবৈধভাবে খরচ করে কোম্পানিটি।

আইন লঙ্ঘন করে এভাবে অবৈধ ব্যয়ের কারণে কোম্পানিটির আর্থিক ভিত্তি অত্যন্ত দুর্বল হয়ে পড়েছে। খরচ মেটাতে পরিশোধিত মূলধনের টাকা উত্তোলন করতে হয়েছে। জীবন বীমা কোম্পানির প্রাণ হিসেবে পরিচিত লাইফ ফান্ডও ঋণাত্মক হয়ে পড়েছে প্রতিষ্ঠানটির। ২০১৯ সাল শেষে কোম্পানিটির লাইফ ফান্ডের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ঋণাত্মক তিন কোটি ৪৩ লাখ টাকা। আগের বছর ২০১৮ সালে লাইফ ফান্ডের পরিমাণ ছিল ঋণাত্মক তিন কোটি ৬০ লাখ টাকা।

একাধিক বীমা কোম্পানির শীর্ষ কর্মকর্তাদের মতে, মানুষ রক্তশূন্য হয়ে পড়লে যেমন বাঁচে না, তেমনি লাইফ ফান্ডও একটি কোম্পানির রক্তের মতো। সুতরাং যে কোম্পানির লাইফ ফান্ড ঋণাত্মক, ওই কোম্পানিতে গ্রাহকদের টাকা মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। গ্রাহক তার জমানো টাকা ফেরত পাবে কিনা, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।

তারা বলেন, ডায়মন্ড লাইফের প্রথম বর্ষ প্রিমিয়াম ও নবায়ন প্রিমিয়ারের চিত্র সন্দেহজনক। যেমন- ২০১৮ সালে প্রথম বর্ষ প্রিমিয়াম আয় হয় আট কোটি ২৫ লাখ টাকা। কিন্তু ২০১৯ সালে নবায়ন প্রিমিয়াম আদায় হয়েছে তিন কোটি ২৫ লাখ টাকা। তাহলে বাকি পাঁচ কোটি টাকা কোথায় গেল? এতে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন ওঠে, কোম্পানিটি প্রথম বর্ষ প্রিমিয়াম আয় যা দেখাচ্ছে, প্রকৃতপক্ষে আয় তা হচ্ছে কিনা, নাকি অতিরিক্ত প্রিমিয়াম দেখিয়ে কোম্পানি থেকে কমিশনসহ বিভিন্ন খাতের খরচ বাবদ টাকা সরিয়ে নেয়া হচ্ছে? নিয়ন্ত্রক সংস্থা বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) বিষয়টি খতিয়ে দেখা উচিত।

যোগাযোগ করা হলে ডায়মন্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্সের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) পিপুল বিশ্বাস জাগো নিউজকে বলেন, নতুন কোম্পানি হওয়ার কারণে আমাদের খরচ একটু বেশি হচ্ছে। তবে আমরা চেষ্টা করছি ঘুরে দাঁড়ানোর।

নিবন্ধন সনদের অন্যতম শর্ত ছিল তিন বছরে মধ্যে পুঁজিবাজারে আসতে হবে। কিন্তু ছয় বছরেও আপনারা পুঁজিবাজারে আসতে পারেননি। আবার লাইফ ফান্ডও ঋণাত্মক। তাহলে আপনাদের গ্রাহকের টাকা ফেরত পাওয়া ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে কিনা? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা পুঁজিবাজারে আসব। ভ্যালুয়েশনের জন্য অপেক্ষা করছি। আর আমরা এ বছর চেষ্টা করছি, আশা করছি লাইফ ফান্ড পজিটিভ হয়ে যাবে।’

এমএএস/এইচএ/এমএআর/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।