কাঁচা মরিচের কড়া ঝাল
বন্যা ও বৃষ্টিতে মরিচের খেতের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এজন্য রান্নার অপরিহার্য এ পণ্যটির দামও ব্যাপক চড়া। রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে ২০০-২৫০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে কাঁচা মরিচ।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, এবার দীর্ঘসময় ধরে বন্যা হয়েছে। এর সঙ্গে দেশের সব অঞ্চলেই বৃষ্টিও হয়েছে অনেক। এতে অর্ধেকের বেশি মরিচের খেত নষ্ট হয়ে গেছে।
তারা বলছেন, খেতে পানি জমে মরিচ গাছ পচে যাওয়ার কারণে বাজারে কাঁচা মরিচের সরবরাহ কমেছে। যে কারণে মরিচের দাম বেড়ে গেছে।
বুধবার (১২ আগস্ট) কারওয়ান বাজারে গিয়ে দেখা যায়, ব্যবসায়ীরা কাঁচা মরিচের পোয়া (২৫০ গ্রাম) ৪০ থেকে ৫০ টাকা বিক্রি করছেন।
বাজারটিতে ৫০ টাকা পোয়া কাঁচা মরিচ বিক্রি করা আলী বলেন, ‘বন্যা আর বৃষ্টি মরিচের খেত খেয়ে (নষ্ট করা) ফেলেছে। প্রায় সব অঞ্চলেই মরিচের খেতে পানি জমে গাছ পচে গেছে। এতে স্বাভাবিকভাবেই বাজারে কাঁচা মরিচের সরবরাহ কমে গেছে। আর সরবরাহ কমলে দাম বাড়বে এটাই স্বাভাবিক।’
তিনি বলেন, আড়তে আসা চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানতে পেরেছি, অর্ধেকেরও বেশি খেতে পানি জমে মরিচের গাছ পচে গেছে। সহসা পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ার সম্ভাবনা কম।’
এদিকে রামপুরা ও মালিবাগ অঞ্চলের বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ব্যবসায়ীরা ২৫০ গ্রাম কাঁচা মরিচ ৫০-৫৫ টাকা বিক্রি করছেন। খিলগাঁও ও শান্তিনগর বাজারে ৬০ টাকা পোয়া মরিচ বিক্রি হতে দেখা গেছে।
মরিচের এই দামের বিষয়ে রামপুরার ব্যবসায়ী কামাল বলেন, ‘আড়তে এখন মরিচের আকাল। ভালো মানের মরিচ কিনতে আমাদের মতো খুচরা ব্যবসায়ীদের এক প্রকার লড়াইয়ে নামতে হয়। তারপর মাঝে মধ্যে চাহিদা অনুযায়ী কাঁচা মরিচ কিনতে পারি না।’
তিনি বলেন, ‘ঢাকায় যে কাঁচা মরিচ আসে তার একটা বড় অংশ আসে মানিকগঞ্জ থেকে। শুনছি মানিকগঞ্জের প্রায় সব মরিচের খেতে পানি জমে খেতের বেশ ক্ষতি হয়েছে। উত্তরবঙ্গে দীর্ঘসময় ধরে বন্যা চলছে। বন্যায় প্রায় সব ফসল নষ্ট হয়ে গেছে। মরিচের গাছ পচে গলে গেছে। সবকিছু মিলিয়ে মরিচের দাম বেড়েছে।’
খিলগাঁও থেকে কাঁচা মরিচ কেনা আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘অনেক দিন ধরেই কাঁচা মরিচের দাম বেশি। তবে ঈদের পর আরও বেড়েছে। ঈদের আগে ৪০ টাকা পোয়া কাঁচা মরিচ কেনা গেলেও এখন ৬০ টাকা পোয়া কিনতে হচ্ছে।’
তিনি বলেন, কাঁচা মরিচ এমন একটি পণ্য, রান্না করতে গেলে লাগবেই। ফলে দাম যতই হোক মানুষ কাঁচা মরিচ কিনবেই।
মালিবাগ হাজীপাড়া বৌ-বাজার থেকে বাজার করা রাবেয়া খাতুন বলেন, ‘বাজারে এখন ৫০ টাকার কমে কাঁচা মরিচের পোয়া পাওয়া যাচ্ছে না। অনেক দিন ধরেই কাঁচা মরিচ এমন চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে। আগে এত দীর্ঘসময় ধরে এত বেশি দামে বিক্রি হতে দেখিনি।’
তিনি বলেন, ‘আগে দেখেছি টানা বৃষ্টি হলে কাঁচা মরিচের দাম কিছুদিনের জন্য বেড়ে যেত। বৃষ্টির শেষে আবার দাম কমে যেত। এবার সেই চিত্র নেই। ঈদের পর থেকে ঢাকায় তেমন বেশি বৃষ্টি হচ্ছে না। এরপরও মরিচের দাম কমছে না। সে কারণে বাধ্য হয়ে কাঁচা মরিচ ও শুকনা মরিচ মিশিয়ে রান্না করছি।’
সবজিসহ মালিবাগে ভ্যানে কাঁচা মরিচ বিক্রি করা সোহেল বলেন, ‘মরিচের দাম বাড়ার কারণে ক্রেতারা এখন কেনার পরিমাণও কমিয়ে দিয়েছে। আগে যারা এক পোয়া, আধা কেজি করে কিনতেন, তারা এখন ১০০-১৫০ গ্রাম করে কাঁচা মরিচ কিনছেন। আমার নিজের বাসায়ও কাঁচা মরিচ খাওয়া কমিয়ে দিয়েছি।’
এদিকে বিভিন্ন বাজারের তুলনায় সুপার শপে তুলনামূলক কম দামে কাঁচা মরিচ বিক্রি হতে দেখা গেছে। স্বপ্নের খিলগাঁও শাখায় গিয়ে দেখা যায়, কাঁচা মরিচের কেজি ১৮৫ টাকা বিক্রি হচ্ছে।
মরিচের দামের বিষয়ে শাখার এক বিক্রয়কর্মী বলেন, ‘অনেক দিন ধরেই কাঁচা মরিচের দাম বেশি। আমাদের পক্ষে দাম কমানোর কোনো সুযোগ নেই। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ যে দাম বেঁধে দেয়, আমরা সেই দামে বিক্রি করতে বাধ্য হয়।’
এমএএস/এসআর/জেআইএম