করোনায় বিক্রি নেই বেনারসিপল্লীতে, পেশা বদলের চিন্তা ব্যবসায়ীদের!
করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) কারণে স্থবির হয়ে পড়েছে গোটা বিশ্ব। এর মারাত্মক প্রভাব পড়েছে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য এবং অর্থনৈতিক কার্যক্রমে। এমনকি ঈদুল আজহার সপ্তাহখানেক বাকি থাকলেও ব্যবসা-বাণিজ্যের সেই ‘সুদিন’ দেখছেন না ব্যবসায়ীরা। ঢাকাসহ দেশের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো ভুগছে মন্দায়।
এ মন্দাবস্থায় পড়েছে ঢাকার মিরপুরের ঐতিহ্যবাহী বেনারসিপল্লীও। পুরো মার্কেট ভুগছে এক রকমের ক্রেতাশূন্যতায়। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত দোকান খুলে রাখলেও দেখাই মিলছে না ক্রেতার। অবস্থার কোনো সন্তোষজনক গতি মিলছে না বিধায় অনেকে পারিবারিক পরম্পরার এ ব্যবসা বন্ধ করে দেয়ারও চিন্তাভাবনা করছেন।
গতকাল শুক্রবার (২৪ জুলাই) বেনারসিপল্লী ঘুরে দেখা যায়, ঈদের মাত্র এক সপ্তাহ বাকি থাকলেও দোকানগুলো প্রায় ক্রেতাশূন্য। বেনারসি শাড়ি, লেহেঙ্গা, জামদানি, সুতি শাড়ি, কাতান শাড়িসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানকেন্দ্রিক রেডিমেড পোশাক দোকানে নানাভাবে সাজিয়ে রাখা হলেও তা যেন নামানোর প্রয়োজন পড়ছে না। কয়েকটি দোকানে দু-একজন ক্রেতার দেখা মিললেও তাতে দোকান ভাড়া মিটিয়ে কর্মচারীর বেতন-ভাতাও দেয়া যাচ্ছে না বলে জানান মালিকরা। অনেকে তিন চারদিনে কিছুই বিক্রি করতে পারেননি বলেও আক্ষেপ করেন।
বেশকিছু দোকানে ঢুকে দেখা যায়, ক্রেতার দেখা নেই বলে কর্মচারীরা অলস সময় পার করছেন। বড় ধরনের ডিসকাউন্ট দিয়েও ক্রেতাদের নজর কাড়তে পারছেন না দোকানিরা। কেনাবেচা না হাওয়ায় অনেক মালিক দোকানে আসাই বন্ধ করে দিয়েছেন।
এ পল্লীর বেনারসি কুঠিরে ১০ জন বিক্রয়কর্মী কাজ করেন। স্বাভাবিক সময়ে শুক্রবার উপচেপড়া ভিড় থাকে তাদের কুঠিরে। কিন্তু করোনার কারণে এদিন বিকেল পর্যন্ত মাত্র একটি শাড়ি বিক্রি হয়েছে।
এ দোকানের বিক্রেতা সুমন বলেন, যেখানে প্রতিদিন ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকার বেনারসি শাড়ি-লেহেঙ্গাসহ বিক্রি হতো, সেখানে এখন ১০ হাজার টাকাই বিক্রি করা কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। ঈদেও মানুষ কেনাকাটা করতে আসছে না। যে পরিমাণ বিক্রি হচ্ছে তাতে দোকান ভাড়া এবং কর্মচারীদের বেতনের টাকাও হচ্ছে না। সেজন্য অনেকে গত দুই মাস ধরে বেতন পাচ্ছেন না।
পাশেই খোরশেদ অ্যান্ড সন্সের মালিক মো. বাদশা বলেন, করোনাভাইরাসের ভয়ে মানুষ বেনারসিপল্লীতে শাড়ি কিনতে আসছে না। ভাইরাসের কারণে কমিউনিটি সেন্টার, বিয়ে-শাদিসহ সব অনুষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বেনারসির চাহিদায় ভাটা পড়েছে।
তিনি বলেন, কোরবানির ঈদের আগে যে পরিমাণ বিক্রি হয়ে তার ৯০ শতাংশ কমে গেছে। বর্তমানে দোকান ভাড়া ও কর্মচারীদের বেতন দেয়াই কঠিন হয়ে গেছে। এ কারণে ব্যবসা পরিবর্তনের চিন্তাভাবনা করতে হচ্ছে আমাদের।
রাকিব উদ্দিন এক বছর আগে লাল বেনারসি নামে একটি দোকান খুলেছেন। ৫০ লাখ টাকা খরচ করে ব্যবসা চালু করলেও করোনা পরিস্থিতির কারণে তার মাথায় হাত।
রাকিব উদ্দিন বলেন, দোকান খুলে কোনো কোনো দিন কিছু বেচতে পারি না। আল্লাহ যদি ভাগ্যে লেখেন, তবে সেদিন হয়তো কিছু বিক্রি হয়। শুক্রবার সকাল ১০টায় দোকান খুললেও বিকেল ৪টা পর্যন্ত কিছুই বিক্রি হয়নি। ক্রেতা টানতে বড় ধরনের ডিসকাউন্ট দিয়েও বিক্রি হচ্ছে না। দু-একজন ক্রেতা দোকানে এলেও কিছুই বিক্রি হয়নি। এমন পরিস্থিতি হলে দোকান ভাড়া ও কর্মচারীদের বেতন কীভাবে দেব?
ছোট ভাইয়ের বিয়ে উপলক্ষে এই দোকানে আরও দুজনকে নিয়ে শাড়ি কিনতে এসেছেন মিরপুরের বাসিন্দা মামুন। তিনি বলেন, ঈদের পরে আমার ছোট ভাইয়ের বিয়ের অনুষ্ঠান হওয়ার কথা রয়েছে, এ কারণে বেনারসিতে শাড়ি দেখতে এসেছি। পছন্দ হলে কিনে নিয়ে যাব।
সার্বিক বিষয়ে বেনারসিপল্লী মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. সিরাজুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, বেনারসি শাড়ির ব্যবসায় প্রায় সবাই ধরা খাচ্ছে। ভাইরাস আতঙ্কে মানুষ কেনাকাটা করতে মার্কেটে আসছে না।
তিনি বলেন, লোকসমাগম হওয়ার ভয়ে সব ধরনের পার্টি ও অনুষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে। এ কারণে জামদানি কাপড় কিনতেও কেউ আসছে না। পাঁচ মাস ধরে অনেকেই জমানো টাকা দিয়ে কর্মচারী ও দোকান ভাড়া পরিশোধ করছেন। এমন পরিস্থিতি চলতে থাকলে দোকানের মালিকরা ব্যবসা পরিবর্তন করতে বাধ্য হবেন।
এমএইচএম/এইচএ/এমএস