রফতানিমুখী শিল্পে উৎসে কর কমানোর প্রস্তাব ডিসিসিআইয়ের

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৬:০৬ এএম, ১২ জুলাই ২০২০

রফতানিমুখী শিল্পের জন্য উৎসে কর কমিয়ে ০.২৫ শতাংশ করার প্রস্তাব করেছেন ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সভাপতি শামস মাহমুদ।

শনিবার (১১ জুলাই) ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত ‘বেসরকারি খাতের দৃষ্টিতে বাংলাদেশের অর্থনীতির বর্তমান অবস্থা ও ভবিষ্যৎ প্রেক্ষিত’ শীর্ষক ওয়েবিনারে তিনি এ প্রস্তাব করেন। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। ডিসিসিআই থেকে পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এসব জানানো হয়েছে।

এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন- ডিসিসিআই সভাপতি শামস মাহমুদ, যেখানে দেশের অর্থনীতির ২০টি খাতের বর্তমান অবস্থা ও খাতগুলোর উন্নয়নে সুপারিশ উপস্থাপন করেন। মূল প্রবন্ধে তিনি বলেন, ‘চলমান কোভিড মহামারি পরিস্থিতিতে জীবন-জীবিকার চাকা সচল রাখতে অনেক কঠোর পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনা করতে হচ্ছে।’

ঢাকা চেম্বারের সভাপতি বলেন, ‘কোভিড পরবর্তী অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়ায় সরকারের যথাযথ নীতি সহায়তা ও প্রণোদনার সঠিক ব্যবহার একান্ত অপরিহার্য।’ রফতানিমুখী শিল্পের জন্য উৎসে কর কমিয়ে ০.২৫ শতাংশ করারও প্রস্তাব করেন তিনি।

চীন থেকে বাংলাদেশে বিনিয়োগ স্থানান্তরের ক্ষেত্রে সহায়ক পরিবেশ তৈরিতে সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ ও কৌশল এখনই নেয়া জরুরি বলেও মন্তব্য করেন শামস মাহমুদ।

তিনি বলেন, ‘গত অর্থবছরে রফতানি লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২৬ শতাংশ কম রফতানি অর্জিত হয়েছে।’ ডিসিসিআই’র সভাপতি আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বৃদ্ধির ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে জিএসপি ফিরে পাওয়া, অশুল্ক বাধাসমূহ দূরীকরণ ও সম্ভাবনাময় অংশীদারদের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষরের ওপর জোরারোপ করেন।

ঢাকা চেম্বারের সভাপতি বলেন, ‘তৈরি পোশাক খাতে উৎসে কর ০.৫ শতাংশ হতে ০.২৫ শতাংশে নামিয়ে আনলে এ খাতে রফতানি আরও বৃদ্ধি পাবে।’ চামড়া খাতের উন্নয়নে তিনি দ্রুত সিইটিপি স্থাপন ও ট্যানারি মালিকদের স্বল্পসুদে ঋণ প্রদানের প্রস্তাব করেন। এছাড়াও কোভিড-১৯ এর কারণে এমএসএমই খাত সবচেয়ে বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে এবং ব্যাংকগুলো হতে তারা প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় ঋণ সুবিধা পাচেছ না, এ অবস্থা উত্তরণে স্বল্প সুদে ক্রেডিট গ্যারান্টি স্কিম ও রিফাইন্যান্সিং স্কিম আরও বেশি হারে বাস্তবায়নে তিনি আহ্বান জানান।

অনুষ্ঠানের নির্ধারিত আলোচনায় পলিসি এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান ড. মাশরুর রিয়াজ, আনোয়ার গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও ডিসিসিআই’র প্রাক্তন সভাপতি হোসেন খালেদ, বিল্ডের চেয়ারম্যান ও ঢাকা চেম্বারের প্রাক্তন সভাপতি আবুল কাসেম খান এবং চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ ও ঢাকা চেম্বারের প্রাক্তন সভাপতি আসিফ ইব্রাহীম অংশগ্রহণ করেন।

ড. মাশরুর রিয়াজ কোভিড-১৯-এর ফলে ক্ষতিগ্রস্ত অর্থনীতি মোকাবিলায় টিকে থাকা, স্থিতিশীলতা বজায় রাখা এবং অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ অত্যাবশ্যক বলে মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, ‘কোভিড-১৯ এর ফলে বৈশ্বিক চাহিদা ও সাপ্লাই দুটোই উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে।’ তিনি অর্থনীতির এ অবস্থা উত্তরণে স্বল্প ও মধ্যমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণের আহ্বান জানান।

এছাড়াও তিনি করপোরেট কর, টার্নওভার কর প্রভৃতি কমানোর প্রস্তাব করেন এবং কোভিড-১৯ মোকাবিলায় সংশ্লিষ্ট নীতিমালাসমূহের সংষ্কার ও বন্ড মার্কেট আরও কার্যকরের ওপর জোরারোপ করেন।

হোসেন খালেদ বলেন, ‘ব্যাংক খাত থেকে সরকারের বেশিমাত্রায় ঋণ নেয়ার প্রবণতা বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহকে কমিয়ে দিতে পারে। তিনি বলেন, ‘আমাদের শিল্পখাত বর্তমানে কর্মসংস্থানের সুযোগ ধরে রাখার জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছে এবং এ অবস্থা মোকাবিলায় ব্যাংক ও বেসরকারি খাতকে একযোগে কাজ করতে হবে।’

তিনি পুঁজিবাজারের ওপর সকলের আস্থা বাড়ানোর জন্য নিয়ন্ত্রক সংস্থার প্রতি আহ্বান জানান এবং পরিবেশ সুরক্ষায় আরও বেশি হারে ‘সবুজ প্রকল্প’ গ্রহণের আহ্বান জানান। এছাড়াও তিনি ইলেকট্রিক্যাল ভিহাইক্যালের আরও ব্যবহার বাড়ানোর জন্য নীতি সহায়তা প্রদানের ওপর জোরারোপ করেন।

আবুল কাসেম খান বলেন, ‘ভুয়া কোভিড সনদ নিয়ে দেশের বাইরে যাওয়ার ফলে ইতোমধ্যে বাংলাদেশের ইমেজ ক্ষুণ্ণ হয়েছে এবং এ পরিস্থিতি যেন আর বাড়তে না পারে সেজন্য সরকারকে আরও সর্তকতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণের ওপর জোরারোপ করতে হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ আরও বাড়ানোর জন্য আমাদের অবশ্যই সহায়ক করা কাঠামা থাকতে হবে, যা কি না এশিয়া অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে উদাহরণ তৈরি করবে।’

তিনি সরকার ঘোষিত প্রণোদনার প্যাকেজ থেকে বিশেষ করে এসএমই খাতের উদ্যোক্তারা যেন ঋণ সহায়তা পেতে পারেন, সে বিষয়ে সরকারকে আরও মনোযোগী হওয়ার আহ্বান জানান।

আসিফ ইব্রাহীম বলেন, বাংলাদেশের জিডিপি ও পুঁজিবাজারের অনুপাত মাত্র ১১.১ শতাংশ, যা তুলনামূলকভাবে এশিয়া ও পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর মধ্যে অনেক কম।’ তিনি দেশের বন্ড মার্কেট আরও কার্যকর করার মাধ্যমে দীর্ঘমেয়াদী প্রকল্পসমূহে অর্থায়ন নিশ্চিতকল্পে সেগুলোকে পুঁজিবাজারে নিয়ে আসার প্রস্তাব করেন।

আসিফ ইব্রাহীম বলেন, আমাদের পুঁজিবাজারে ভালো আইপিও-এর যথেষ্ট অভাব রয়েছে, তিনি পুঁজিবাজারের উন্নয়ন বিএসইসি, ডিএসই এবং সিএসই-এর কঠোর নজরদারিও প্রস্তাব করেন।

এমইউএইচ/এফআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।