রেমিট্যান্স ও রিজার্ভে রেকর্ড
>> রেমিট্যান্স আহরণ ১৮.২ বিলিয়ন ডলার
>> রিজার্ভ ৩৬.১৪৪ বিলিয়ন ডলার
করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যেও দেশে প্রবাসী আয় তথা রেমিট্যান্স আহরণের রেকর্ড হয়েছে। সদ্য সমাপ্ত ২০১৯-২০ অর্থবছর শেষে প্রবাসী বাংলাদেশিরা এক হাজার ৮২০ কোটি ডলার বা ১৮ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স দেশে পাঠিয়েছেন, যা বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স আহরণ।
এছাড়া ২০১৯-২০ অর্থবছর শেষে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার সঞ্চয়ন (রিজার্ভ) প্রথমবারের মতো ৩৬ বিলিয়ন ডলারের (তিন হাজার ৬০০ কোটি) মাইলফলক অতিক্রম করেছে। বৃহস্পতিবার (২ জুলাই) দিন শেষে রিজার্ভের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩৬ দশমিক ১৪৪ বিলিয়ন ডলার বা তিন হাজার ৬১৪ কোটি ডলার।
বৃহস্পতিবার (২ জুলাই) বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক কাজী ছাইদুর রহমান এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, সদ্য সমাপ্ত ২০১৯-২০ অর্থবছরে প্রবাসীরা মোট এক হাজার ৮২০ কোটি ৪৯ লাখ ডলার সমপরিমাণ অর্থ দেশে পাঠিয়েছেন। দেশীয় মুদ্রায় যার এক লাখ ৫৪ হাজার ৭৪২ কোটি টাকা (পরিমাণ প্রতি ডলার ৮৫ টাকা ধরে)। এর আগে কোনো অর্থবছরে এত অর্থ দেশে আসেনি। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে দেশে রেমিট্যান্স আহরণে রেকর্ড হয়। ওই সময়ে প্রবাসীরা এক হাজার ৬৪২ কোটি ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিলেন। সেই হিসাবে আগের অর্থবছরের তুলনায় সদ্য সমাপ্ত অর্থবছরে রেমিট্যান্স বেড়েছে ১৭৮ কোটি ৫৩ লাখ ডলার বা ১৫ হাজার কোটি টাকা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, অর্থবছরের শেষ মাস জুনে ১৮৩ কোটি ২৫ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স এসেছে, যা আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ৪৬ কোটি ৮৩ লাখ ডলার বেশি। গত বছর জুনে রেমিট্যান্স এসেছিল ১৩৬ কোটি ৪২ লাখ ডলার। চলতি বছরের জুনে একক মাস হিসাবে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স আহরণ হয়েছে। এর আগে এক মাসে সর্বোচ্চ ১৭৪ কোটি ৮১ লাখ ডলার রেমিট্যান্সের রেকর্ড ছিল গত বছরের মে মাসে।
জানা গেছে, গত অর্থবছরে রেমিট্যান্সের ওপর ঘোষিত ২ শতাংশ প্রণোদনা ঘোষণা করে সরকার। এরপর থেকেই বৈধ চ্যানেলে রেমিট্যান্সপ্রবাহ বাড়তে থাকে। তবে করোনাভাইরাসের কারণে বিশ্বব্যাপী লকডাউনের ফলে মার্চ ও এপ্রিল দুই মাস রেমিট্যান্স আসার পরিমাণ কিছুটা কমে যায়। পরে পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলে ঈদের মাস মে’তে আবারও রেমিট্যান্সপ্রবাহ বেড়ে যায়। যার ধারাবাহিকতায় রেকর্ড পরিমাণ রেমিট্যান্স পেল বাংলাদেশ। করোনায় বৈশ্বিক অর্থনীতির পরিস্থিতি অবনতি না হলে রেমিট্যান্স আরও বেশি হতো বলে মনে করছেন খাতসংশ্লিষ্টরা।
এদিকে ২০১৯-২০ অর্থবছরের মতো রেমিট্যান্স বাড়াতে চলতি অর্থবছরও এ খাতে ২ শতাংশ হারে প্রণোদনা দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বাজেট বক্তৃতায় তিনি বলেন, ‘প্রবাসীদের সামগ্রিক কল্যাণ ও সুযোগের সমতা নিশ্চিতকরণ, কূটনৈতিক প্রচেষ্টার মাধ্যমে নতুন নতুন শ্রমবাজার সৃষ্টি এবং ওই বাজারের চাহিদা অনুযায়ী প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ জনশক্তি তৈরিতে সরকার কাজ করছে’।
অর্থমন্ত্রী জানান, বর্তমানে বিশ্বের ১৭৪টি দেশে এক কোটি ২০ লাখের অধিক অভিবাসী কর্মী কর্মরত। গত ১০ বছরে পেশাজীবী, দক্ষ, আধাদক্ষ ও স্বল্প দক্ষ ক্যাটাগরিতে মোট ৬৬ লাখ ৩৩ হাজারের বেশি বৈদেশিক কর্মসংস্থান হয়েছে, যা এ পর্যন্ত মোট কর্মসংস্থানের প্রায় ৬০ শতাংশ। এর মধ্যে ২০১৯ সালে ৭ লাখের বেশি মানুষের বৈদেশিক কর্মসংস্থান হয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে দেশে রেমিট্যান্স আহরণে রেকর্ড হয়। ওই সময় প্রবাসীরা এক হাজার ৬৪২ কোটি ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। তারও আগে বিগত চার বছরের মধ্যে ২০১৪-১৫ অর্থবছরে দেশে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স এসেছিল। সে সময় রেমিট্যান্স আসে এক হাজার ৫৩১ কোটি ৬৯ লাখ মার্কিন ডলার। এরপর ২০১৫-১৬ অর্থবছরে আসে এক হাজার ৪৯৩ কোটি ১১ লাখ মার্কিন ডলার, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে প্রবাসীদের রেমিট্যান্স পাঠানোর পরিমাণ ছিল এক হাজার ২৭৬ কোটি ৯৪ লাখ মার্কিন ডলার। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে রেমিট্যান্স আসে এক হাজার ৪৯৮ কোটি ডলার, যা তার আগের অর্থবছরের চেয়ে ১৭ দশমিক ৩ শতাংশ বেশি।
এসআই/এফআর/এমকেএইচ