এক যুগের মধ্যে সর্বনিম্ন লেনদেনের রেকর্ড
দীর্ঘ বিরতির পর দেশের শেয়ারবাজারে লেনদেন চালু হলো মারাত্মক লেনদেন খরা দেখা দিয়েছে। ধারাবাহিকভাবে লেনদেন খরা চলতে থাকা শেয়ারবাজারে রোববার এক যুগেরও বেশি সময় পর সর্বনিম্ন লেনদেনের রেকর্ড হয়েছে।
মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে টানা ৬৬ দিন বন্ধ থাকার পর গত ৩১ মে থেকে দেশের শেয়ারবাজারে আবার লেনদেন চালু হয়েছে। দীর্ঘ বন্ধের পর এখনো পর্যন্ত শেয়ারবাজারে ১৬ কার্যদিবস লেনদেন হয়েছে।
এর মধ্যে প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) একশ কোটি টাকার ওপরে লেনদেন হয়েছে মাত্র ৫ কার্যদিবস। বাকি ১১ কার্যদিবস একশ কোটি টাকার কম লেনদেন হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে রোববার ১৩ বছরেরও বেশি সময় পর সর্বনিম্ন লেনদেনের রেকর্ড হলো।
এদিন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে লেনদেন হয়েছে মাত্র ৩৮ কোটি ৬২ লাখ টাকা। ২০০৭ সালের ২৩ এপ্রিলের পর ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে এতো কম লেনদেন হয়নি। ২০০৭ সালের ২৩ এপ্রিল লেনদেন হয় ৩৭ কোটি ৬৯ লাখ টাকা।
শেয়ারবাজারে এই লেনদেন খরা দেখা দেয়ার বিষয়ে ডিএসই’র এক সদস্য বলেন, ফ্লোর প্রাইসের (শেয়ারের সর্বনিম্ন দাম) কারণে বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার লেনদেন হচ্ছে না। কোম্পানিগুলোর শেয়ারের যে দাম বেঁধে দেয়া হয়েছে ওই দামে বিনিয়োগকারীরা কিনতে আগ্রহী হচ্ছে না।
তিনি বলেন, শেয়ারবাজারের লেনদেন খরা কাটানোর জন্য ফ্লোর প্রাইস তুলে দেওয়া উচিত। এতে হয়তো প্রথমদিকে দরপতন হবে। তবে কিছুদিন পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যাবে। বিনিয়োগকারীরা শেয়ার বিক্রি করে কিছু টাকা তুলতে পারবেন। সেই টাকা দিয়ে নতুন শেয়ার কিনতে পারবেন। এতে বাজারে গভীরতা বাড়বে।
এতো দিন ফ্লোর প্রাইসের পক্ষে থাকলেও এখন ফ্লোর প্রাইস উঠিয়ে নেওয়ার পক্ষে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) পরিচালক রকিবুর রহমান। এ বিষয়ে তিনি জাগো নিউজকে বলেন, একটি বিশেষ সময়ের প্রেক্ষিতে ফ্লোর প্রাইস নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছিল। আমি মনে করি এখন ফ্লোর প্রাইস উঠিয়ে নেয়ার সময় এসেছে।
তিনি বলেন, ফ্লোর প্রাইসের কারণে অনেক বিনিয়োগকারীর টাকা আটকে রয়েছে। তারা শেয়ার বিক্রি করতে চাইলেও বিক্রি করতে পারছেন না। ফ্লোর প্রাইস উঠিয়ে নিলে তারা বিক্রি করার সুযোগ পাবেন এবং দাম কমে গেলে নতুন করে কিনে সমন্বয় করতে পারবেন। সুতরাং বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে এখন ফ্লোর প্রাইস উঠিয়ে নেয়া উচিত।
লেনদেন খরার বাজারে লেনদেনে অংশ নেয়া বেশিরভগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। তবে যে কয়কটি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বেড়েছে কমেছে তার থেকে কম। ফলে সূচকের কিছুটা উত্থান হয়েছে।
লেনদেন শেষে ডিএসইর প্রধান মূল্য সূচক ডিএসইএক্স আগের কার্যদিবসের তুলনায় ২ পয়েন্ট বেড়ে ৩ হাজার ৯৬২ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। অপর দুই সূচকের মধ্যে ডিএসই-৩০ সূচক ১ পয়েন্ট বেড়ে ১ হাজার ৩২৬ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। আর ডিএসই শরিয়াহ্ দশমিক ৩৪ পয়েন্ট বেড়ে ৯১৮ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।
ডিএসইতে লেনদেন অংশ নেওয়া মাত্র ১৭টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ১৪টির। আর ২১৪টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।
টাকার অঙ্কে বাজারটিতে সব থেকে বেশি লেনদেন হয়েছে লিন্ডসে বিডি শেয়ার। কোম্পানিটির ২ কোটি ৯৯ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা সেন্ট্রাল ফার্মাসিউটিক্যালস ২ কোটি ৮৮ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। ২ কোটি ৪৯ লাখ টাকার লেনদেনের মাধ্যমে এর পরের স্থানে রয়েছে বেক্সিমকো ফার্মাসিটিক্যালস।
এছাড়া লেনদেনের শীর্ষ ১০ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে- রেকিট বেনকিজার, বাংলাদেশ সাবমেরিন কেবলস, ফিনিক্স ফাইন্যান্স ফার্স্ট মিউচ্যুয়াল ফান্ড, ইন্দো-বাংলা ফার্মাসিটিক্যাল, স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস, বেক্সিমকো, ইস্টার্ন লুব্রিকেন্ট এবং ফেডারেল ইন্স্যুরেন্স।
অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই কমেছে ৩ পয়েন্ট। লেনদেন হয়েছে ৯ কোটি ২৩ লাখ টাকা। লেনদেন অংশ নেওয়া ৯১ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে দাম বেড়েছে ৮টির, কমেছে ৯টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৭৪টির।
এমএএস/এসএইচএস/জেআইএম