বাজেটে মন্ত্রিসভার অনুমোদন
>> নতুন বাজেটের আকার ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকা
>> মোট আয় ৩ লাখ ৮২ হাজার ১৬ কোটি টাকা
>> ঘাটতি ১ লাখ ৮৫ হাজার ৯৮৪ কোটি টাকা
>> জিডিপি আকার ৩১ লাখ ৭১ হাজার ৮০০ কোটি টাকা
বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) দুর্যোগে স্থবির দেশের অর্থনীতি। এমন নাজুক পরিস্থিতিতে অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের প্রত্যাশা সামনে রেখে আগামী অর্থবছরের জন্য ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব করবেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। তাই তিনি এবারের বাজেটের শিরোনাম ঠিক করেছেন ‘অর্থনৈতিক উত্তরণ ও ভবিষ্যৎ পথ পরিক্রমা’।
এ বাজেটে অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। এ বাজেট অনুমোদনের জন্য বৃহস্পতিবার (১১ জুন) দুপুরে জতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে এক বিশেষ মন্ত্রিসভার বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ওই বৈঠকে আগামী বাজেটের অনুমোদন দেয়া হয়েছে বলে সংসদ সচিবালয় সূত্রে জানা গেছে।
এ বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন সরকারের ১০ মন্ত্রী। তারা হলেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, স্থানীয় সরকার বিভাগমন্ত্রী তাজুল ইসলম, শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এবং পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান।
এরপর নিয়ম অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এতে অনুমোদন দিয়ে স্বাক্ষর করবেন।
তারপর বিকেল সাড়ে ৩টায় স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত সংসদ অধিবেশনে ২০২০-২১ অর্থবছরের জন্য এ বাজেট উপস্থাপন করবেন তিনি।
বাজেটে কী বিষয়ে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে জানতে চাইলে বুধবার (১০ জুন) অর্থমন্ত্রী জাগো নিউজকে বলেন, বাজেটে করোনাভাইরাসে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ এবং দেশের অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে জরুরি, স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি সব ধরনের পরিকল্পনা অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘আগামী বাজেট করোনাভাইরাসে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ এবং দেশের অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে কাজ করবে। এ বছর এক কঠিন সময়ে আমরা বাজেট উপস্থাপন করতে যাচ্ছি। তাই আগামী বাজেটের মূল উদ্দেশ্যই হচ্ছে- দেশের মানুষের জীবন রক্ষা করা এবং সচল রাখা।’
মন্ত্রী আরও বলেন, আগামী বাজেটে জরুরি, স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি সব ধরনের পরিকল্পনা অন্তর্ভুক্ত থাকবে, যাতে করে করোনায় যা ক্ষতি হয়েছে তা কমানো যায়। এ বাজেট দেশের অর্থনীতির চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
এদিকে অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, নতুন অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত এই ব্যয় তথা আকার চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের চেয়ে ১৩ দশমিক ২৪ শতাংশ বেশি। টাকার অংকে যা ৬৬ হাজার ৪২৩ কোটি টাকা বেশি। চলতি (২০১৯-২০) অর্থবছরের জন্য ৫ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা করা হলেও পরবর্তীতে সংশোধিত বাজেটে এর আকার দাঁড়ায় ৫ লাখ ১ হাজার ৫৭৭ কোটি টাকা।
করোনাভাইরাসের থাবায় থমকে গেছে ব্যবসা-বাণিজ্য। দেশে ৬৬ দিন লকডাউন থাকার পর এখন সীমিত আকারে অফিস আদালত খুললেও করোনার ধাক্কা কাটিয়ে উঠতে বেশ সময় লাগবে বলেই দেশীয় ও বিদেশি বিভিন্ন সংস্থার পূর্বাভাস থেকে জানা যাচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতেও আগামী বাজেটের আকার বা ব্যয় ও আয়ের লক্ষ্যমাত্রার দিকে নজর দিলে করোনার কোনো প্রভাবই পাওয়া যাবে না। তবে বাজেটে এ ধরনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণকে বাস্তবায়ন অযোগ্য বলছেন অর্থনীতিবিদরা। বাজেট বাস্তবায়নে সরকারের অন্যতম প্রধান সংস্থা এনবিআরও বলছে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী রাজস্ব আদায় কোনোভাবেই সম্ভব নয়।
এদিকে করোনাকালীন এই দুঃসময়ে আয়ের মূল উৎস রাজস্ব আদায় তলানিতে ঠেকলেও বেড়েছে ব্যয়ের খাত। তাই আসছে বাজেটে মোট রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩ লাখ ৭৮ হাজার ৩ কোটি টাকা। এছাড়া আগামী অর্থবছরে সরকার বৈদেশিক অনুদান পাবে ৪ হাজার ১৩ কোটি টাকা। সব মিলে সরকারের আয় হবে ৩ লাখ ৮২ হাজার ১৬ কোটি টাকা।
এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা দেয়া হচ্ছে ৩ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। এনবিআরবহির্ভূত করসমূহ থেকে রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১৫ হাজার কোটি টাকা। এছাড়া কর ব্যতীত রাজস্বের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৩ হাজার কোটি টাকা।
মোট ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়াচ্ছে ১ লাখ ৮৫ হাজার ৯৮৪ কোটি টাকা। আয় ও ব্যয়ের এ বিশাল ফারাকে এবারই প্রথম দেশের ইতিহাসে মোট বাজেট ঘাটতি জিডিপির ৫ দশমিক ৮ শতাংশ নির্ধারণ করা হচ্ছে। এর আগের বছরগুলোতে সাধারণত জিডিপির ৫ শতাংশ হারে ঘাটতি ধরে বাজেট প্রণয়ন করা হত।
আগামী (২০২০-২১) অর্থবছরের বাজেটে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) যে ৩ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা দেয়া হচ্ছে তা অর্জন করা সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন সংস্থাটির চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম। সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়ে তিনি বিষয়টি জানান।
চিঠিতে তিনি উল্লেখ করেন, ‘বিভিন্ন সূচক বিবেচনায় নিয়ে গবেষণা ও পরিসংখ্যানের ভিত্তিতে জানা যায় যে, চলতি অর্থবছরের শেষে সর্বমোট ২ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব অহরিত হতে পারে।’
তিনি আরও উল্লেখ করেন, ‘পূর্ববর্তী গড় প্রবৃদ্ধি ১৪ শতাংশ হিসেবে আগামী অর্থবছরের সর্বমোট রাজস্ব আহরণ ২ লাখ ৫০ হাজার কোটি টাকার বেশি হবে না। অর্থনীতিবিদরাও বলেছেন, রাজস্ব আদায়ের এ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন কোনোভাবেই সম্ভব নয়। তাই বাজেটে ঘাটতির পরিমাণ আরও বেড়ে যাবে।’
আসছে বাজেটে সরকারের আয়
সরকারের মূল আয় হয় রাজস্ব আহরণের মধ্য দিয়ে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এটি আহরণ করে। এনবিআরবহির্ভূত কিছু কর ও কর ব্যতীত কিছু আয়ও হয়। আসছে বাজেটে সরকারের মোট রাজস্ব প্রাপ্তির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩ লাখ ৭৮ হাজার ৩ কোটি টাকা। এছাড়া আগামী অর্থবছরে সরকার বৈদেশিক অনুদান পাবে ৪ হাজার ১৩ কোটি টাকা। সব মিলে সরকারের আয় হবে ৩ লাখ ৮২ হাজার ১৬ কোটি টাকা।
এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা দেয়া হচ্ছে ৩ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। এনবিআর বহির্ভূত করসমূহ থেকে রাজস্বে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১৫ হাজার কোটি টাকা। এছাড়া কর ব্যতীত রাজস্বের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৩ হাজার কোটি টাকা।
এদিকে চলমান করোনাভাইরাসে সৃষ্ট অচলাবস্থার প্রভাব পড়েছে রাজস্ব আহরণে। চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরে মোট রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা থেকে ২০ হাজার ২৯৭ কোটি টাকা কাটছাঁট করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এতে সংশোধিত আয়ের লক্ষ্যমাত্রা দাঁড়িয়েছে তিন লাখ ৫৭ হাজার ৫১৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে এনবিআর আহরণ করবে তিন লাখ ১৩ হাজার ৭০ কোটি টাকা এবং এনবিআর বহির্ভূত উৎস থেকে আসবে ৪৪ হাজার ৪৪৬ কোটি টাকা।
আসছে বাজেটে সরকারের মোট ব্যয়
এবারের বাজেটে সরকার মোট ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। চলতি বাজেটে যা ছিল ৫ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকা। আবার সংশোধিত বাজেটে সেটি কমিয়ে করা হয় ৫ লাখ ১ হাজার ৫৭৭ কোটি টাকা।
এর মধ্যে আগামী বাজেটে সরকার পরিচালন ব্যয় বাবদ খরচ ধরা হচ্ছে ৩ লাখ ৪৮ হাজার ১৮০ কোটি টাকা। অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদ পরিশোধ বাবদ রাখা হচ্ছে ৫৮ হাজার ২৫৩ কোটি টাকা। বৈদেশিক ঋণের সুদ পরিশোধ বাবদ বরাদ্দ রাখা হচ্ছে ৫ হাজার ৫৪৮ কোটি টাকা। সম্পদ সংগ্রহ, ভূমি অধিগ্রহণ, নির্মাণ ও পূর্ত কাজ, শেয়ার ও ইক্যুইটিতে বিনিয়োগ ইত্যাদি পরিচালন বাবদ মূলধন ব্যয় হিসেবে বরাদ্দ রাখা হচ্ছে ৩৬ হাজার ৯৯০ কোটি টাকা। খাদ্য হিসাব বাবদ খরচ দেখানো হয়েছে ৫৬৭ কোটি টাকা। সরকারি প্রতিষ্ঠান সমূহে ঋণ ও অগ্রিম (নীট) বাবদ বরাদ্দ রাখা হচ্ছে ৪ হাজার ২১০ কোটি টাকা।
এছাড়া উন্নয়ন ব্যয় বাবদ বরাদ্দ রাখা হচ্ছে ২ লাখ ১৫ হাজার ৪৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) বরাদ্দ রাখা হচ্ছে ২ লাখ ৫ হাজার ১৪৫ কোটি টাকা। এডিপি বহির্ভূত বিশেষ প্রকল্পে বরাদ্দ রাখা হচ্ছে ৪ হাজার ৭২২ কোটি টাকা। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে অন্তর্ভুক্ত নয় এবং নিজস্ব উৎসের রাজস্ব থেকে অর্থায়নকৃত উন্নয়নমূলক কর্মসূচি তথা স্কিম বাবদ বরাদ্দ রাখা হচ্ছে ২ হাজার ৫২২ কোটি টাকা। এছাড়া এডিপি বহির্ভূত কাজের বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচি প্রকল্পে বরাদ্দ রাখা হচ্ছে ২ হাজার ৬৫৪ কোটি টাকা।
ইতিহাসে এবারই প্রথম জিডিপির ৫ দশমিক ৮ শতাংশ ঘাটতি
আয় ও ব্যয়ের এ বিশাল ফারাকের বাজেটে অনুদান ব্যতীত মোট ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়াচ্ছে ১ লাখ ৮৯ হাজার ৯৯৭ কোটি টাকা। তবে অনুদানসহ ঘাটতি দাঁড়াচ্ছে ১ লাখ ৮৫ হাজার ৯৮৪ কোটি টাকা। যা মোট জিডিপির ৫ দশমিক ৮ শতাংশ। দেশের ইতিহাসে এবারই প্রথম বাজেটে ঘাটতি জিডিপির ৫ দশমিক ৮ শতাংশ ধরা হচ্ছে। এর আগের বছরগুলোতে সাধারণত জিডিপির ৫ শতাংশ হারে ঘাটতি ধরে বাজেট প্রণয়ন করা হত।
এ বিশাল ঘাটতি পূরণে সরকার কোন খাত থেকে কত টাকা ঋণ নেবে তারও একটি ছক তৈরি করেছে। ছক অনুযায়ী, আগামী অর্থবছরের ঘাটতি পূরণে সরকার বৈদেশিক ঋণের ওপর নির্ভর করবে, টাকার অংকে যা ৮৮ হাজার ৮২৪ কোটি টাকা। তবে আগামী অর্থবছরে ১২ হাজার ৮২৮ কোটি টাকা বৈদেশি ঋণ পরিশোধ করতে চায় সরকার। তাই এক্ষেত্রে আগামী বাজেটে নীট বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ দাঁড়াবে ৭৬ হাজার ৪ কোটি টাকা। চলতি বাজেটে (সংশোধিত) যা আছে ৫২ হাজার ৭০৯ কোটি টাকা।
এছাড়া অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ১ লাখ ৯ হাজার ৯৮০ কোটি টাকা ঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে সরকার। এর মধ্যে ব্যাংক খাত থেকে ঋণ নিয়ে ঘাটতির বড় একটি অংশ পূরণ করতে চায় সরকার। ব্যাংক খাত থেকে ঋণের পরিমাণ দাঁড়াবে ৮৪ হাজার ৯৮০ কোটি টাকা। চলতি বাজেটে যা ছিল ৪৭ হাজার ৩৬৪ কোটি টাকা।
২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটের জন্য সরকার সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ নিতে চায় ২০ হাজার কোটি টাকা। এছাড়া অন্যান্য খাত থেকে ঋণ নিতে চায় ৫ হাজার কোটি টাকা।
জিডিপির আকার ৩১৭১৮০০ কোটি টাকা
আগামী অর্থবছরের জন্য মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) আকার নির্ধারণ করা হয়েছে ৩১ লাখ ৭১ হাজার ৮০০ কোটি টাকার। প্রবৃদ্ধির হার ধরা হয়েছে ৮ দশমিক ২ শতাংশ। তবে টাকার অংকে সংশোধিত জিডিপির তুলনায় নতুন জিডিপি ৩ লাখ ৬৬ হাজার ১০০ কোটি টাকা বেশি। চলতি বাজেটে (সংশোধিত) জিডিপির আকার নির্ধারণ করা হয়েছে ২৮ লাখ ৫ হাজার ৭০০ কোটি টাকা।
সার্বিক বাজেট বিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, রাজস্ব আহরণের গতি প্রকৃতি অর্থবছরের শুরু থেকেই ভালো ছিল না। করোনা আসার পর তা বেশি খারাপ হয়েছে। এ ছাড়া প্রতি বছর কোনো ধরনের সংস্কার ছাড়াই এনবিআরের জন্য বড় লক্ষ্যমাত্রা ধরা হচ্ছে। এক লাফে অর্থাৎ এক বছরে ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশের বেশি লক্ষ্যমাত্রা ধরা বাস্তবসম্মত নয়।
তিনি আরও বলেন, জিডিপির যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে বর্তমান প্রেক্ষাপটে এটা অর্জন সম্ভব নয়। এসব লক্ষ্যমাত্রা কাগজেই সীমাবদ্ধ থাকবে।
এদিকে অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, আগামী বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা খাতের বরাদ্দ ও উপকারভোগীর সংখ্যা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। নতুন বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ বাড়ছে এক হাজার ৬৩৩ কোটি টাকা। চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরে এ খাতে সরকারের বরাদ্দ ছিল ৭৪ হাজার ৩৬৭ কোটি টাকা।
এটি মোট বাজেটের ১৪ দশমিক ২১ শতাংশ এবং মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ২ দশমিক ৫৮ শতাংশ। আগামী অর্থবছর এ খাতে বরাদ্দ বাড়িয়ে করা হচ্ছে ৭৬ হাজার কোটি টাকা। করোনার কারণে আগামী বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় আর্থিক সুবিধাভোগীর সংখ্যা প্রায় ১৬ লাখ বাড়িয়ে ৯৭ লাখে উন্নীত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
বিনিয়োগ বাড়ানো ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির উদ্যোগ রয়েছে বাজেটে। গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে কৃষি খাতকে। ফলে আগামীতে কৃষি খাতে ভর্তুকির পরিমাণ বাড়বে সাড়ে ৯ হাজার কোটি টাকা। আর অন্যান্য খাতে ভর্তুকি মিলে ভর্তুকির পরিমাণ দাঁড়াবে প্রায় ৫৫ হাজার কোটি টাকা।
নতুন অর্থবছরের এডিপিতে সর্বাধিক গুরুত্ব পাওয়া ১০টি খাত হচ্ছে: ১. পরিবহন; ২. অবকাঠামো, পানি ও গণপূর্ত; ৩. বিদ্যুৎ; ৪. শিক্ষা ও ধর্ম; ৫. বিজ্ঞান, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি; ৬. পল্লী উন্নয়ন ও পল্লী প্রতিষ্ঠান; ৭. স্বাস্থ্য, পুষ্টি, জনসংখ্যা ও পরিবার কল্যাণ; ৮, কৃষি; ৯. পানিসম্পদ ও ১০. জনপ্রশাসন। এই ১০ খাতে বরাদ্দ মোট এডিপির ৯৩ দশমিক ১৯ শতাংশ।
এমইউএইচ/এনএফ/পিআর