বড় ঘাটতির বাজেটে ব্যাংকই ভরসা
আসন্ন (২০২০-২১) অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ঘাটতি ধরা হচ্ছে এক লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা।
বাজেটের আয়-ব্যয়ের বিশাল ঘাটতি পূরণে প্রধান ভরসা ব্যাংক খাত থেকে ঋণ। এ কারণে আসন্ন বাজেট অর্থায়নের ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে প্রায় ৮৫ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেয়ার পরিকল্পনা করেছে সরকার। চলতি বাজেটে যা ছিল ৪৭ হাজার ৩৬৪ কোটি টাকা।
বৃহস্পতিবার (১১ জুন) জাতীয় সংসদে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে এই বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন করবেন অর্থমন্ত্রী। তার আগে মন্ত্রিসভার অনুমোদন হবে এবং পরে ওই প্রস্তাবে সই করবেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। পরে ১ জুলাই থেকে নতুন অর্থবছর শুরু হবে।
বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) দুর্যোগের মধ্যেই অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের প্রত্যাশা সামনে রেখে 'অর্থনৈতিক উত্তরণ ও ভবিষ্যৎ পথপরিক্রমা' শিরোনামে ২০২০-২১ অর্থবছরের ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা করতে যাচ্ছেন অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামাল। এটি চলতি অর্থবছরের বাজেটের চেয়ে ৪৪ হাজার ৮১০ কোটি টাকা বেশি। শতাংশ হিসাবে ৮ দশমিক ৫৬ শতাংশ বেশি। চলতি অর্থবছরের বাজেটের আকার ছিল পাঁচ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকা। প্রতিবার বাজেটে ঘাটতি সাধারণত ৫ শতাংশের মধ্যে রাখা হয়। তবে এবার করোনার প্রভাবে প্রথমবারের মতো তা ৬ শতাংশ স্পর্শ করছে।
আসছে বাজেটে মোট রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩ লাখ ৮২ হাজার ১৬ কোটি টাকা, যা হবে মোট বাজেটের প্রায় ৫৮ শতাংশ।এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে তিন লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। এছাড়া করবহির্ভূত ও অন্যান্য আয়ের লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে ৪৮ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে করবহির্ভূত রাজস্ব আহরণের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হচ্ছে ১৫ হাজার কোটি টাকা এবং কর ব্যতীত প্রাপ্তির পরিমাণ ধরা হচ্ছে ৩৩ হাজার ৩ কোটি টাকা।
আয় ও ব্যয়ের এ বিশাল ফারাকের বাজেটে অনুদান ব্যতীত মোট ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়াচ্ছে ১ লাখ ৮৯ হাজার ৯৯৭ কোটি টাকা। তবে অনুদানসহ ঘাটতি দাঁড়াচ্ছে ১ লাখ ৮৫ হাজার ৯৮৪ কোটি টাকা। যা মোট জিডিপির ৫ দশমিক ৮ শতাংশ।
এ বিশাল ঘাটতি পূরণে সরকার কোন খাত থেকে কত টাকা ঋণ নেবে তারও একটি ছক তৈরি করেছে। ছক অনুযায়ী, আগামী অর্থবছরের ঘাটতি পূরণে সরকার বৈদেশিক ঋণের ওপর নির্ভর করবে, অংকে যা ৭৬ হাজার ৪ কোটি টাকা। চলতি বাজেটে (সংশোধিত) যা আছে ৫২ হাজার ৭০৯ কোটি টাকা। এছাড়া বৈদেশিক অনুদান পাওয়ার লক্ষ্য ধরা হচ্ছে ৪ হাজার ১৩ কোটি টাকা। চলতি বাজেটে যা রয়েছে তিন হাজার ৪৫৪ কোটি টাকা।
এছাড়া অভ্যন্তরীণ উৎস অর্থাৎ ব্যাংক খাত থেকে ঋণ নিয়ে ঘাটতির বড় একটি অংশ পূরণ করতে চায় সরকার। ব্যাংক খাত থেকে ঋণ নেয়ার পরিকল্পনা করা হচ্ছে ৮৪ হাজার ৯৮০ কোটি টাকা।
চলতি অর্থবছরে ব্যাংকিং খাত থেকে ঋণ নেওয়ার লক্ষ্য ছিল ৪৭ হাজার ৩৬৪ কোটি টাকা। চলতি সংশোধিত বাজেটে ৭২ হাজার ৯৭৬ কোটি টাকা করা হয়। পরে চাহিদা বাড়লে এটি বাড়িয়ে ৮২ হাজার ৪২১ কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু করোনাভাইরাস সঙ্কটের মধ্যে এই বিশাল লক্ষ্য অতিক্রম করে প্রায় লাখ কোটি টাকায় গিয়ে পৌছেঁছে সরকারের ব্যাংক ঋণ।
এছাড়া অভ্যন্তরীণ উৎসের মধ্যে সঞ্চয়পত্র বিক্রি করে সরকার ২০ হাজার কোটি টাকা ও অন্যান্য খাত থেকে ৫ হাজার টাকাসহ মোট ২৫ হাজার কোটি টাকা নিতে চায়। চলতি বাজেটে (সংশোধিত) যা ছিল ১৪ হাজার ৯২৪ কোটি টাকা।
সরকারের ব্যাংকঋণনির্ভরতা প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, বর্তমানে ব্যাংকগুলোর অবস্থা খুব ভালো না। আমানতের অবস্থা খারাপ, পরিচালনাগত ত্রুটি আছে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তদারকি ঘাটতি বিদ্যমান। পুরো ব্যাংক খাত সমস্যায় আছে। এমন অবস্থায় বাজেটে ব্যাংকঋণনির্ভর হলে এ খাত আরো চাবে পড়বে। এতে করে বেসরকারি খাত বঞ্চিত হবে।
তাই সরকারের বাজেট ঘাটতি মেটাতে ব্যাংক ব্যাংকঋণনির্ভরতা কমিয়ে বিদেশি উৎস থেকে কম সুদে ঋণ আনার পরামর্শ দেন সাবেক এ গভর্নর।
এদিকে অতিমাত্রায় সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ নিরুৎসাহিত করতে সুদহার না কমিয়ে চলতি অর্থ বছরে নানা শর্ত জুড়ে দিয়েছে সরকার। যার কারণে সঞ্চয়পত্রের বিক্রি কমছে।
সবশেষ তথ্য অনুযায়ী, চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে (জুলাই-জানুয়ারি) নিট সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে ৭ হাজার ৬৭৩ কোটি ৩৬ লাখ টাকা। আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৭৫ শতাংশ কম। আগের ২০১৮-১৯ অর্থবছরের সময়ে নিট বিক্রির ছিল ৩০ হাজার ৯৯৫ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে সঞ্চয়পত্রে জানুয়ারি পর্যন্ত সরকারের ঋণ স্থিতি দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৯৩ হাজার ৩৩৩ কোটি টাকা। বিপুল অঙ্কের এই ঋণের বিপরীতে সরকারকে ১১ শতাংশের বেশি সুদ গুনতে হচ্ছে সরকারকে।
এসআই/এনএফ/পিআর