প্রবৃদ্ধি আড়াই শতাংশের বেশি হবে না : সিপিডি
অডিও শুনুন
মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে এ বছর মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি আড়াই শতাংশের বেশি হবে না বলে মনে করছে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)।
বিদায়ী ২০১৯-২০ অর্থবছরে বাংলাদেশের অর্থনীতির অবস্থান এবং বাজেটের চ্যালেঞ্জ নিয়ে রোববার (৭ জুন) আয়োজিত এক ভার্চুয়াল মিডিয়া ব্রিফিংয়ে এ অভিমত দেয়া হয়।
সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুনের সঞ্চালনায় এতে মূল প্রতিবেদন তুলে ধরেন প্রতিষ্ঠানটির রিসার্চ ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান।
করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে মার্চের শেষ দিক থেকে অর্থনীতি একটা ভিন্ন গতি-প্রকৃতির দিকে ঢুকে গেছে উল্লেখ করে মূল প্রতিবেদনে তৌফিকুল ইসলাম খান বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতি কেমন হতে পারে আমরা সেটা দেখার চেষ্টা করেছি। সেক্ষেত্রে আমরা কতোগুলো বিষয়কে বিবেচনায় নিয়েছি। বর্তমান যে পরিস্থিতি আছে তার কী ধরনের প্রভাব পড়েছে। আমরা দেখেছি পাঁচটি খাত সরাসরি বড় অসুবিধায় পড়েছে।
তিনি বলেন, জিডিপিতে ১৫টি খাত থাকে। নিঃসন্দেহ অনেক খাতই বড় ধরনের ক্ষতিতে পড়েছে। কিছু কিছু খাত যেমন কৃষি হয় তো ওইভাবে প্রভাবিত হয়নি। কৃষির উৎপাদন মোটামুটি ভালো হয়েছে।
ম্যানুফ্যাকচারিং ও কন্সট্রাকশন খাত প্রত্যক্ষভাবে বড় সমস্যায় পড়েছে এবং হোটেল-রেস্টুরেন্ট ও পরিবহন দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় জিডিপিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সার্বিক বিষয় বিবেচনায় নিয়ে আমরা যদি ধরে নিই অর্থবছরের বাকি যে সময় আছে তাতে ভালো প্রবৃদ্ধি হবে তারপরও প্রবৃদ্ধি ২ দশমিক ৫ শতাংশের বেশি হতে পারবে না। অর্থাৎ সবচেয়ে ভালো সিনারিও যদি আমরা এই বছরের জন্য চিন্তা করি তাহলে আমাদের ধারণা এ বছরের প্রবৃদ্ধি ২ দশমিক ৫ শতাংশের বেশি হবে না।
তৌফিকুল ইসলাম খান আরও বলেন, আমরা যদি ২ দশমিক ৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে পারি, তাহলে তা যথেষ্ট খারাপ না। বিশ্বের অনেক দেশ এই সময়ে নেতিবাচক প্রবৃদ্ধিতে চলে গছে। আমাদের পাশের দেশ ভারতেও এই ধরনের আশঙ্কা করা হয়েছে।
জিডিপির প্রবৃদ্ধি নিয়ে দুশ্চিন্তা না করার আহ্বান জানিয়ে সিপিডির এই গবেষক বলেন, সাধারণত আমাদের নীতি, পরিবেশ পরিস্থিতি যদি বিবেচনা করি দেখি, আমাদের জিডিপির প্রবৃদ্ধিকে বেগবান করার জন্য বড় গুরুত্ব থাকে। এটাই প্রধান বলে অনেক সময় অনেক নীতি-নির্ধারকরা বলেন। কিন্তু বর্তমান সময় অত্যন্ত ভিন্ন ধরনের সময়। এই সময়ে আমরা প্রবৃদ্ধির ওপর বিশেষ জোর না দিয়ে, বরং আমাদের মানুষের জীবন বাঁচানো সবচেয়ে বশি প্রাধিকার দিতে হবে। প্রবৃদ্ধি অবশ্যই এবারের জন্য সবচেয়ে বড় নিয়ামক হতে পারে না।
এ বিষয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে সিপিডির অনারারি ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আমাদের নীতি-নির্ধারকদের অনেকে বলছেন- আমরা এ বছরের জন্য প্রবৃদ্ধির প্রাক্কলন ৮ শতাংশ করেছিলাম। প্রথম নয় মাস অর্থনীতি খুব ভালো চলেছে। সুতরাং আমাদের ৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হতেই পারে। তবে আমাদের হিসাবে প্রবৃদ্ধি দুই থেকে আড়াই শতাংশের বেশি হবে না।
এর ব্যাখ্যা দিয়ে এই অর্থনীতিবিদ বলেন, ধরি গত বছর আমাদের জিডিপি হয়েছিল ১০০। তাহলে চার কোয়ার্টারের প্রতি কোয়ার্টারে হয় ২৫ করে। প্রথম তিন কোয়ার্টারে হয় ৭৫। এখন প্রথম তিন কোয়ার্টারে ৮ শতাংশ করে প্রবৃদ্ধি হলে তিন কোয়ার্টার শেষে দাঁড়ায় ৮২। আপনারা জানেন শেষ কোয়ার্টারে অর্থনীতি কীভাবে চলেছে। সেখানে যদি ৮০ শতাংশও কাজ করে তাহলে ২৫ হবে ২০। তাহলে ৮২ আর ২০ মিলিয়ে হবে ১০২। সুতরাং সাধারণ হিসাবেও আমাদের অবজারভেশন মিলে। প্রথম তিন প্রান্তিকে প্রবৃদ্ধি যদি ৮ শতাংশ হারেও হয়, তাহলেও অর্থবছর শেষে এটা দুই থেকে আড়াই শতাংশের বেশি হবে না।
এমএএস/এইচএ/পিআর