ঈদের পর কমল মসলার দাম
চাহিদা কমায় জিরা, এলাচ, দারুচিনি, লবঙ্গ, তেজপাতা, আদা, রসুন, পেঁয়াজসহ প্রায় সব ধরনের মসলার দাম ঈদের পরে কমেছে। ঈদের পর এর সবকটির দামই ১০ শতাংশের ওপরে কমেছে।
করোনাভাইরাসের কারণে নানা সমস্যা দেখিয়ে এপ্রিল মাস থেকে দফায় দফায় বিভিন্ন মসলার দাম বাড়াতে থাকেন ব্যবসায়ীরা। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে ১৩ মে গরম মসলার পাইকারি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক করেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি।
ওই বৈঠকে বাংলাদেশ পাইকারি গরম মসলা ব্যবসায়ী সমিতি গরম মসলার দাম ১০ থেকে ২৫ ভাগ কমানোর কথা দেন। তবে ঈদের আগে ব্যবসায়ীদের দেয়া কথার বাস্তবায়ন দেখা যায়নি। উল্টো কিছু মসলার দাম আরও বাড়ে।
অবশ্য ঈদের পর চাহিদা কমায় এখন সব ধরনের মসলার দাম কমতে শুরু করেছে। খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, ঈদের আগে সব ধরনের মসলার চাহিদা বাড়ে। এ কারণে দামও বেড়ে যায়। তবে সব থেকে বেশি বাড়ে আদা, জিরা ও এলাচের দাম। ঈদের পর এর সবকটির দামই ১০ শতাংশের ওপরে কমেছে।
বৃহস্পতিবার (৪ জুন) রাজধানীর বিভিন্ন খুচরা বাজারে নিয়ে দেখা গেছে, জিরার কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪০০ থকে ৪৫০ টাকা, যা ঈদের আগে ৪৫০ থেকে ৫৫০ টাকা হয়েছিল। অর করোনাভাইরাসের প্রকোপ শুরু হওয়ার আগে ছিল ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকার মধ্যে। এ হিসেবে ঈদের পর জিরার দাম কমলেও করোনার আগের তুলনায় এখনও জিরা বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে।
ঈদের আগে ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া দারুচিনির দাম কমে এখন ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে। করোনার আগে দারুচিনির কেজি ছিল ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকার মধ্যে।
ঈদের আগে দাম বেড়ে ১২০০ থেকে ১৩০০ টাকা কেজি স্পর্শ করা লবঙ্গের দাম কমে ১০০০ থেকে ১১০০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। আর ৪০০০ থেকে ৪২০০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া এলাচের দাম কমে ৩০০০ থেকে ৩৬০০ টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে।
ঈদের পর দাম কমার এ তালিকায় রয়েছে-পেঁয়াজ, আদা, রসুন, আদা, দেশি হলুদ, তেজপাতাও। ঈদের আগে ১২০ থেকে ১৩০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া দেশি রসুনের দাম কমে ৯০ থেকে ১১০ টাকা হয়েছে। আর আমদানি করা রসুনের কেজি বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ১৪০ টাকা, যা ঈদের আগে ছিল ১৫০ থেকে ১৭০ টাকা।
দেশি হলুদের দাম কমে ১৩০ থেকে ১৫০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে, যা ঈদের আগে ছিল ১৫০ থেকে ১৮০ টাকা। তবে আমদানি করা হলুদের কেজি আগের মতোই ২০০ থেকে ২২০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। ঈদের আগে দেড়শ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া তেজপাতার কেজি ১২০ টাকায় নেমেছে।
ঈদের আগে অস্বাভাবিক দাম বাড়া দেশি ও আমদানি করা উভয় ধরনের আদার দাম কমে প্রায় অর্ধেকে নেমেছে। ঈদের আগে ২০০ থেকে ২২০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া দেশি আদার দাম কমে ১০০ থেকে ১২০ টাকা হয়েছে। আর আমদানি করা আদার কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৪০ থেকে ১৬০ টাকা, যা ঈদের আগে ছিল ১৮০ থেকে ২০০ টাকা।
ঈদের আগে ৫০ থেকে ৫৫ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া দেশি পেঁয়াজের দাম কমে হয়েছে ৪০ থেকে ৪৫ টাকা। দেশি পেঁয়াজের সঙ্গে কমেছে আমদানি করা পেঁয়াজের দামও। বিভিন্ন বাজারে আমদানি করা পেঁয়াজের কেজি ৩০ থেকে ৪০ টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে, যা ঈদের আগে ছিল ৪০ থেকে ৫০ টাকা।
মসলার দাম কমার তথ্য উঠে এসেছে সরকারি প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) প্রতিবেদনেও। টিসিবির তথ্য অনুযায়ী, এক মাসের ব্যবধানে জিরার দাম কমেছে ৯ দশমিক ৫২ শতাংশ। আর এলাচের ১৫ দশমিক ৩৮ শতাংশ, তেজপাতা ৭ দশমিক ৪১ শতাংশ, দেশি হলুদ ১৫ দশমিক ১৫ শতাংশ, দেশি রসুন ৮ দশমিক ৭০ শতাংশ, আমদানি করা রসুন ১৩ দশমিক ৩৩ শতাংশ, দেশি পেঁয়াজ ১০ দশমিক ৫৩ শতাংশ, আমদানি করা পেঁয়াজ ২২ দশমিক ২২ শতাংশ, দেশি আদা ২৪ দশমিক ২৪ শতাংশ, আমদানি করা আদা ৮ দশমিক ৩৩ শতাংশ দাম কমেছে।
খিলগাঁওয়ের ব্যবসায়ী আলামিন বলেন, ‘ঈদের সময় স্বাভাবিকভাবেই মসলার চাহিদা বেড়ে যায়। এবারের ঈদের আগেও মসলার চাহিদা বেড়েছিল। তবে অন্যবারের তুলনায় এবার চাহিদা ছিল কিছুটা কম। এরপরও স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় চাহিদা বেশি থাকায় দাম কিছুটা বেড়েছিল। এখন মসলা খুব একটা বিক্রিই হচ্ছে না। ফলে দামও কমছে। তবে কোরবানির ঈদের আগে আবার মসলার দাম বেড়ে যেতে পারে।’
রামপুরার ব্যবসায়ী মো. শামছু বলেন, ‘এখন মসলার দাম কম হলেও কিছুদিন পরেই ঠিকই বেড়ে যাবে। কারণ এখন মসলার চাহিদা তেমন নেই। ঈদের আগেই অনেকে বাড়তি মসলা কিনে রেখেছেন। তবে কোরবানির ঈদের আগে আবার মসলার চাহিদা বেড়ে যাবে। আর কোরবানির ঈদের মাত্র দুই মাসের মতো আছে। সুতরাং মসলার দাম আবার কমার সম্ভাবনা কম।’
এমএএস/এসআর/এমএস