অস্থির পুঁজিবাজারে অসহায় বিনিয়োগকারীরা
শেয়ারবাজারের অস্থিরতা যেন কাটছেই না। টানা দরপতনে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। গত সপ্তাহের দরপতন ধারা চলতি সপ্তাহেও অব্যাহত রয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস রোববার দেশের উভয় শেয়ারবাজারে সব ধরণের সূচকের বড় পতন হয়েছে। পাশাপাশি কমেছে টাকার অংকে লেনদেনের পরিমাণও। একই সঙ্গে হ্রাস পেয়েছে লেনদেন হওয়া অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের ইউনিট।
এদিকে বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, তালিকাভুক্ত ব্যাংকগুলো তৃতীয় প্রান্তিকের প্রকাশিত আর্থিক প্রতিবেদনে মুনাফা অনেকটা কমতে দেখা গেছে। এছাড়াও ব্যাংকের এক্সপ্রোজাল লিমিট বিষয়ে চলতি মাসের শেষে শেয়ারবাজার সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বৈঠকে বসছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক । ওই বৈঠকের সিদ্ধান্তের দিকেও তাকিয়ে আছে বিনিয়োগকারীরা। এছাড়াও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিযোগকারীরা বাজারে অনেকটা নিষ্ক্রিয় রয়েছে। ফলে লেনদেনও ঘাটতি দেখা দিয়েছে ।
বাজারের এ পরিস্থিতি সম্পর্কে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সাবেক পরিচালক খুজিস্তা নূর-ই-নাহরিন জাগো নিউজকে বলেন, শেয়ার বাজার একটা স্পর্শকাতর বাজার। দেশের যেকোনো ঘটনা ঘটলে তা পুঁজিবাজারের ওপর প্রভাব পড়ে। সম্প্রতি বিদেশি হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ধোয়াশা কাটেনি।
এ পরিস্থিতিতে দেশি বিদেশি বিনিয়োগীরা আস্থাহীনতায় ভুগছে। বিগত দিনে রাজনৈতিক অস্থিরতায় বিনিয়োগকারীরা অনেকটা ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। সেই অভিজ্ঞতা থেকে বিনিযোগকারীরা বর্তমান বা নতুন বিনিয়োগ করছে না। যারা বাজারে বিনিয়োগে রয়েছে তারাও তাদের হাতে থাকা শেয়ার বিক্রি করে বেরিয়ে যেতে চাচ্ছে।
মামুন নামের এক বিনিয়োগকারী জাগো নিউজকে বলেন, বাজার ভালো হবে বলে অনেক দিন অপেক্ষা করেছি। কিন্তু ভালো কোনো লক্ষণ দেখছি না। আজ একদিনে আমার ১০ লাখ টাকার শেয়ারের মধ্যে ২ লাখ টাকা নেই। বেশ কিছুদিন ধরে বাজার অস্বাভাবিক ভাবে পতন হচ্ছে কিন্তু নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে কোনো রকম তৎপর দেখছি না। আমরা অসহায়। আমাদের দেখার কেউ নেই।
বাজার পর্যালোচনায় দেখা গেছে, রোববার দিন শেষে দেশের প্রধান বাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের চেয়ে ৬৮ পয়েন্ট কমে ৪ হাজার ৬০৮ পয়েন্টে অবস্থান করছে এবং শরীয়াহ সূচক ডিএসইএস ২০ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ৯৪ পয়েন্টে এবং ডিএস ৩০ সূচক ২৩ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ৭৪৩ পয়েন্টে অবস্থান করছে।
দিনশেষে ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ৩১০ কোটি ৮৯ লাখ টাকার শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের ইউনিট। যা আগের দিনের চেয়ে ৯৬ কোটি টাকা কম। বৃহস্পতিবার লেনদেন হয়েছিল ৪০৪ কোটি টাকা।
রোববার ডিএসইতে ৩১৭টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের ইউনিট লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে দর বেড়েছে ৪৪টির, কমেছে ২৫০টির আর অপরিবর্তিত রয়েছে ২৩টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দর।
অপরদিকে, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএসইএক্স ১৪৩ পয়েন্ট কমে ৮ হাজার ৫৬৮ পয়েন্টে অবস্থান করছে। সিএসই৫০ সূচক ১৭ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ২৮ পয়েন্টে, সিএসই ৩০ সূচক ১৯৫ পয়েন্ট কমে ১২ হাজার ৫১৮ পয়েন্টে, সিএএসপিআই সূচক ২৩৫ পয়েন্ট কমে ১৪ হাজার ৮৩ পয়েন্টে এবং সিএসআই শরীয়াহ সূচক ২১ পয়েন্ট কমে ৯৫৬ পয়েন্টে অবস্থান করছে।
এদিন সিএসইতে মোট ২৪৩টি কোম্পানির শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের ইউনিট লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে বেড়েছে ৩২টির, কমেছে ১৯৩ টির আর অপরিবর্তিত রয়েছে ১৮টি কোম্পানির শেয়ার দর। লেনদেন হয়েছে ২৯ কোটি ৯৩ লাখ টাকার শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের ইউনিট।
এসআই/এসকেডি/পিআর