ভাড়া মওকুফ করায় বন্দরে জট কমবে
চট্টগ্রাম বন্দর থেকে কন্টেইনার খালাসের ক্ষেত্রে বন্দরের ভাড়া মওকুফ করায় জট কমবে বলে আশা করছেন ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ড্রাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম।
মোবাইল ফোনে জাগো নিউজকে এই আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি। সেইসঙ্গে চট্টগ্রাম বন্দরে জট বাঁধার কারণ এবং জট নিরসনে এফবিসিসিআইয়ের ভূমিকার কথাও তিনি জানিয়েছেন।
করোনাভাইরাস সংক্রমণ বাড়তে থাকায় গত ২৬ মার্চ থেকে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে সরকার। চার দফা বাড়িয়ে এই ছুটি ৫ মে পর্যন্ত করা হয়েছে। এ পরিস্থিতির কারণে চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরে নজিরবিহীন কন্টেইনার জট দেখা দিয়েছে।
ছুটির কারণে আমদানিকারকরা পণ্য ডেলিভারি গ্রহণ না করায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর ও দেশের অন্যান্য বন্দরে (বিমান ও নৌ) কন্টেইনার জট প্রতিনিয়ত বাড়ছে। ফলে বন্দরগুলোর নতুন কন্টেইনার নামানো বন্ধ হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
এ কারণে গত ১৭ এপ্রিল বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে এক নির্দেশনায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরসহ দেশের বিভিন্ন বন্দরে বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ সদস্যদের থাকা পণ্যের কন্টেইনার খালাস করে তাদের বন্ডেড ওয়্যারহাউজে রাখার নির্দেশ দেয় হয়।
ফাইল ছবি
অপরদিকে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রফতানিকারক সমিতি ( বিজিএমইএ), বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিকেএমইএ), বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনসহ (বিটিএমএ) সব আমাদনিকারককে তাদের আমাদানি করা কন্টেইনার খালাস করার অনুরোধ জানায় ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই।
তবে এখনও কন্টেইনার জট রয়েছে চট্টগ্রাম বন্দরে। মঙ্গলবার (২৮ এপ্রিল) পর্যন্ত বন্দর চত্বরে জমে থাকা আমদানি পণ্যভর্তি কন্টেইনারের সংখ্যা ছিল ৪৩ হাজার ৭৩৪ একক (টিইইউস), যা মোট ধারণক্ষমতার চাইতে ছয় হাজার এককেরও বেশি।
বন্দেরে এই জট বাধার কারণ হিসেবে এফবিসিসিআই সভাপতি জাগো নিউজকে বলেন, সাধারণ ছুটির কারণে গাড়ি ও লেবার পাওয়া যায়নি অথবা অফিস বন্ধ থাকায় ফ্যাক্টরিতে পণ্য নামানোর লোক ছিল না। পোর্টে পণ্য লোড করার লোক নেই। এ ধরনের বিভিন্ন সমস্যার কারণে জটটা বেড়েছে। তাছাড়া কিছু পণ্য খালাসের অর্ডার ছিল, কমার্শিয়াল পণ্য মানা ছিল। এগুলো ধাপে ধাপে খোলা হয়েছে। আশা করি, আস্তে আস্তে ক্লিয়ার হয়ে যাবে।
এদিকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও এফবিসিসিআইয়ের তাগিদা দেয়ার পর বন্দরের পণ্যভর্তি কন্টেইনার জট কমাতে ২৭ মার্চ থেকে ৪ মে পর্যন্ত স্টোররেন্ট (বন্দরের ভাড়া) শতভাগ মওকুফ করেছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ।
এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম
এ বিষয়ে শেখ ফজলে ফাহিম বলেন, বন্দর থেকে এখন স্টোররেন্ট ফি মওকুফ করা হয়েছে। এটা প্রথমে ২০ এপ্রিল পর্যন্ত ছিল। এখন তা ৪ মে পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। অর্থাৎ আরও ১৫ দিন বড়ানো হয়েছে। আমরা আশা করি, এটা (জট) ক্লিয়ার হয়ে যাবে। শেষ ৪-৫ দিন ধরে প্রতিদিন ১,৫০০’র মতো কন্টেইনার মুভ (সরিয়ে নেয়া) করছে।
আমদানিকারকদের উদ্দেশ্যে এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, যেহেতু ফি মওকুফ করা হয়েছে, সুতরাং আমদানিকারকরা এই সুবিধা নেবেন। সুবিধা পাওয়ায় আমদানিকারকদের তাদের আমদানি পণ্য খালাস করা উচিত।
বন্দরের জট কমাতে এফবিসিসিআই কী ধরনের পদক্ষেপ নিচ্ছে? এ প্রশ্নে ফাহিম বলেন, আমরা শিপিং মিনিস্ট্রি (নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়) ও সিএন্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে সমন্বয়ের চেষ্টা করছি। প্রথম যখন ছুটি হয়, তখন অপেক্ষা করেছিলাম। পরবর্তীতে দেখা গেছে, বিভিন্ন কারণে জট জমে যায়।
বন্দরে জট বাঁধার জন্য আন্তর্জাতিক ডকুমেন্টও একটি কারণ হিসেবে উল্লেখ করেন এফবিসিসিআই সভাপতি। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক ডকুমেন্টগুলো ঠিকমতো আসছে না। এ কারণেও পণ্য খালাসে সমস্যা হচ্ছে। আন্তর্জাতিক ডকুমেন্টের যে সমস্যা তা বাংলাদেশের হাতে নেই। যেখান থেকে পণ্য আনা হয়, সেখান থেকে দেয়া হয়। হার্ডকপি আসে, এই হার্ডকপি আসতে অনেক সময় লাগছে।
এমএএস/জেডএ/জেআইএম