গ্রামে খেতে পচছে সবজি, ঢাকায় বিক্রি হচ্ছে ১০ গুণ দামে
ঢাকা ও গ্রামের বাজারের মধ্যে সবজির দামে আকাশ-পাতাল ফারাক। কিছু কিছু সবজির দাম গ্রামের চেয়ে ঢাকায় ৮-১০ গুণ বেশি।
জানা গেছে, সবজি বাজারে এনে বিক্রি করতে না পেরে অনেকে সবজি ফেলে দিয়ে বাড়ি চলে গেছেন। আবার ক্রেতা না থাকার কারণে অনেক কৃষক খেত থেকে সবজি তুলছেন না। সবজির দাম না থাকায় অনেক কৃষক পরিবার অর্ধাহারে-অনাহারে দিন কাটছে। এছাড়া গাড়ি ভাড়া বেশি ও নানা জায়গায় হয়রানির কারণে ব্যাপারিরা কাঁচামালের ব্যবসা সাময়িক সময়ের জন্য স্থগিত রেখেছেন বলেও জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
বগুড়ার ধুনট উপজেলার ভবনগাথী গ্রামের তরকারি ব্যবসায়ী বুলবুল গিয়েছিলেন গোবিন্দগঞ্জ ফাশিতলা হাটে। সেখান থেকে বেগুন পাইকারি দরে প্রতিকেজি বেগুন আড়াই টাকা, করলা ৮ টাকা, শসা ৩ টাকা, খিরা ২ টাকা, মুলা দেড় টাকা, বরবটি ৮ টাকা, টমেটো ৫ টাকা, কচুর লতি ১০ টাকা, কচুর মুখী ১২ টাকা, গাজর ৪ টাকা, ফুলকপি ৬ টাকা পিস, কাঁচামরিচ ৫ টাকা ও পটল ২০ টাকা দরে ক্রয় করে এনেছেন। সেখানে লাউ ১০-১৫ টাকা পিস, মাঝারি আকারের মিষ্টি কুমড়া বিক্রি হচ্ছে ১৫ টাকা। সজিনা বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৫০ টাকা।
এই সবজিই ধুনট বাজারে প্রতিকেজি ১৫ থেকে ২০ টাকায় বিক্রি করছেন বুলবুল। এছাড়া বগুড়া শহরেও ২৫ থেকে ৩০ টাকা কেজি দরে সবজি বিক্রি হচ্ছে। আর ঢাকায় সজিনার ডাটা বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকা কেজি।
বৃহস্পতিবার (৯ এপ্রিল) ঢাকার বাজারে বরবটি প্রতি কেজি ৬০, পটল ৬০, টমেটো ৩০, করলা ৪০, বেগুন ৬০, শিম ৪০, পেঁপে ৩০, কচুরলতি ৬০, কচুর মুখী ৫০, আলু ২৫, গাজর ৩০, মিষ্টি কুমড়া (প্রতি পিস) ৪০, লাউ ৫০ (প্রতি পিস), ডিম প্রতি পিস ১০, ফুলকপি ৫০ ও কাঁচামরিচ প্রতি কেজি ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া গরুর মাংস ৫৫০ থেকে ৬০০ ও ব্রয়লার মুরগি ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
দেশের জেলা পর্যায়ের বিভিন্ন পাইকারি বাজার এবং ঢাকা ও দেশের বড় বড় শহরের বাজারগুলোর মধ্যে তুলনা করলে সবজির দামের ব্যাপক ফারাক। এ বিষয়ে গোবিন্দগঞ্জের কৃষক ময়েজ উদ্দিন শেখ বলেন, ‘আমরা কষ্ট করে সবজি চাষ করি কিন্ত দাম পাই না। তাছাড়া এখন অনেকে সবজি বাজারে এনে বিক্রি করতে না পেরে ফেলে দিয়ে যাচ্ছে। আবার শুনি যে, ঢাকায় বেগুন ৬০ টাকা কেজি।’ তিনি বলেন, পুলিশ বাধা না দিলে পাইকার আসবে তখন আমরা সবজির ভালো দাম পাব।
গাইবান্ধা জেলার ফুলছড়ি উপজেলার পুরাতন ফুলছড়ির হাটে চরে আবাদ করা পর্যাপ্ত সবজি আনে কৃষকরা। এখানেও সবজির দাম খুব কম। এখানে কাঁচামরিচ ২০০ টাকা, বেগুন ১০০ টাকা, টমেটো ২০০ টাকা, মুলা ৮০ টাকা, করলা ৪০০ টাকা, পেপে ৩০০ টাকা মণ বিক্রি হচ্ছে।
জালাল নামে একজন বিক্রেতা জানান, পুলিশের কারণে মূল বাজার থেকে দূরে বসতে হচ্ছে বিক্রেতাদের। পুলিশ থেকে থেকে ধাওয়া করে। তারপরও খেত থেকে সবজি তুলে বাজারে আনি। খরচের টাকা উঠবে না জানি তারপরেও জমিতে রাখলে তো পচে যাবে। এ কারণে কষ্ট করে হলেও হাটে সবজি নিয়ে আসি।
দেশের অন্যতম বৃহৎ সবজির বাজার যশোরের সাতমাইল হাট। জেলার বিভিন্ন এলাকার চাষিরা তাদের উৎপাদিত সবজি নিয়ে প্রতি রবি ও বৃহস্পতিবার এ হাটে আসেন। ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানের পাইকারি ব্যবসায়ীরা এখান থেকে সবজি কিনে ট্রাকযোগে নিয়ে যান। কিন্তু নভেল করোনাভাইরাসের প্রভাব পড়েছে এখানেও। করোনাভাইরাস আতঙ্কে পাইকাররা হাটে আসছেন না। হাটে পাইকার না থাকায় এখানেও সবজির দাম খুব কম।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এ বাজারে বাঁধাকপি ৬ টাকা পিস, লাউ ১০-১২ টাকা পিস, বেগুন ৮ টাকা কেজি, ঢেঁড়স ১০ টাকা ও শিম ১০ টাকা, শসা ৭ টাকা, খিরা ৫ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। বিক্রেতারা বলছেন, এতে আমাদের পুঁজি বাঁচবে না। কিন্তু কী করব, সবজি না বিক্রি করলে তো নষ্ট হয়ে যাবে। বাধ্য হয়েই কম দামে বিক্রি করছি।
এ বিষয়ে যশোর আঞ্চলিক কৃষি অফিসের উপ-পরিচালক ড. আক্তারুজ্জামান বলেন, ‘দেশে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পর বন্ধ রয়েছে গণপরিবহন চলাচল। করোনাভাইরাস আতঙ্কে হাটবাজারেও মানুষ কম যাচ্ছে। এজন্য দেশে গড় সবজির চাহিদা কমে গেছে। এজন্য পাইকাররা বাজার থেকে সবজি কিনতে চাচ্ছেন না।
তিনি বলেন, অধিকাংশ সবজিই পচনশীল। তাই চাইলেও সংরক্ষণ করে রাখা সম্ভব হবে না। এজন্য লোকসান দিয়েই বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন চাষিরা।
এফএইচএস/এসআর/জেআইএম