রিজেন্টের আইপিওর বিরুদ্ধে পাহাড়সম অভিযোগ


প্রকাশিত: ০২:৪৫ পিএম, ১৩ অক্টোবর ২০১৫

অতিরিক্ত প্রিমিয়াম,আর্থিক প্রতিবেদনে গড়মিল তথ্যসহ নানা অভিযোগ নিয়ে পুঁজিবাজার থেকে প্রাথমিক গণ প্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে অর্থ উত্তোলন করতে যাচ্ছে বস্ত্রখাতের কোম্পানি রিজেন্ট টেক্সটাইলস মিলস লিমিটেড।

বুধবার থেকে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ করবে কোম্পানিটি। অথচ ইতোমধ্যে রিজেন্ট টেক্সটাইলস মিলস লিমিটেডের প্রাথমিক গণ প্রস্তাবের (আইপিও) প্রক্রিয়া বন্ধ করতে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) এর নিকট উকিল নোটিশ পাঠিয়েছে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। কিন্তু এখনো নিয়ন্ত্রণ সংস্থা বিএসইসি কোম্পানির আইপিও বিষয়টি নিয়ে কোনো বক্তব্য দেয়নি। ফলে এ কোম্পানির আইপিও নিয়ে সংশয়ে রয়েছে বিনিয়োগকারীসহ সংশ্লিষ্টরা।

বিনিয়োগকারীদের পাঠানো উকিল নোটিশে বলা হয়েছে, বর্তমান বাজার পরিস্থিতিতে অতিরিক্ত প্রিমিয়াম দিয়ে আইপিওর অনুমোদন দেয়া বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ পরিপন্থি। একই সাথে প্রায় দেড়গুণ প্রিমিয়াম নিয়ে কোম্পানি দায় মেটাবে। যা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন অ্যাক্ট,১৯৯৩ এর ৮ (১) ধারার লঙ্ঘন।

ফলে এ কোম্পানির আইপিওতে বিনিয়োগকারীদের বিপুল পরিমাণ আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে। এর আগেও অতিরিক্ত প্রিমিয়ামের কারণে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশন (বিএসসি), দ্যা পেনিনসুলা চিটাগাং, প্যারামাউন্ট টেক্সটাইল লিমিটেড এবং তসরিফা ইন্ডাস্ট্রিজের শেয়ারে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছিল। এসব প্রতিক্রিয়া বিবেচনায় কোম্পানির প্রিমিয়াম বাতিলের দাবি করেছেন বিনিয়োগকারীরা।

এ সম্পর্কে অর্থনীতিবিদ আবু আহমেদ বলেন, বর্তমানে বস্ত্রখাতের অবস্থা খুব বেশি সুবিধাজনক নয়। যেসব কোম্পানি অতীতে প্রিমিয়ামসহ বাজারে এসেছে তার বেশির ভাগই শেয়ার দর বর্তমানে নির্ধারিত প্রাইজের নিচে অবস্থান করছে। তাই নিয়ন্ত্রণ সংস্থা বিএসইসির উচিত বাজার পরিস্থিতি বিবেচনা করে আ্ইপিও অনুমোদন দেয়া।
 
এদিকে, কোম্পানির প্রসপেক্টাস পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, কোম্পানিটির ঋণের বোঝায় জর্জরিত। কোম্পানির স্বল্প মেয়াদী ঋণের পরিমাণ ৪৭ কোটি ৫৮ লাখ ৫১ হাজার ৭৪৪ টাকা, দীর্ঘ মেয়াদী ঋণের পরিমাণ ৬ কোটি ২৮ লাখ ৪২ হাজার ৪৭৯ টাকা এবং চলতি ঋণের পরিমাণ ৮ কোটি ৮২ লাখ ৬১ হাজার ৬৬৮ টাকা। সব মিলিয়ে কোম্পানিটির ঋণের পরিমাণ দাঁড়িযেছে  ৬২ কোটি ৬৯ লাখ ৫৫ হাজার ৮৯১ টাকা। যেখানে কোম্পানির পরিশোধিত মূলধন ৬০ কোটি টাকা। অর্থাৎ পরিশোধিত মূলধনের চেয়ে ঋণের পরিমাণই বেশি।

এছাড়া কোম্পানিটির আর্থিক প্রতিবেদনে দুই অডিট ফার্ম ভিন্ন ভিন্ন তথ্য উপস্থাপন করেছে। যার মধ্যে কোম্পানির মুনাফা ও শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস) নিয়ে অনেক গড়মিল পাওয়া গেছে।

কোম্পানির অডিট ফার্ম এস এফ আহমেদ এর হিসাব মতে ২০১১ সালে কোম্পানির মুনাফার পরিমাণ ছিল ১২ কোটি ১৮ লাখ ২৭ হাজার ৮১৬ টাকা।

অন্যদিকে হুদা ভাসি অ্যান্ড কোং এর  হিসাব মতে, ওই সময় কোম্পানির মুনাফার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৮ কোটি ৯৯ লাখ ৮০ হাজার ৩২৮ টাকা। সেই হিসেবে কোম্পানিটির মুনাফায় প্রায় ৩ কোটি টাকার উপরে গড়মিল রয়েছে। এ বিষয়ে প্রসপেক্টাসে কোনো ধরনের ব্যাখ্যা দেয়া হয়নি।

এ সম্পর্কে জানতে চাইলে রিজেন্ট টেক্সটাইল কোম্পানির সচিব রিয়াজুল হক শিকদার বলেন,আমি এই কোম্পানিতে নতুন জয়েন্ট করেছি। এ বিষয়ে আমি তেমন কিছু জানি না। এসব বিষয়ে জানতে আমাদের কোম্পানির চিফ ফাইন্যান্স অফিসার ( সিএফও) অঞ্জন কুমার ভট্টাচার্যের সঙ্গে কথা বলেন।

পরবর্তীতে অঞ্জন কুমারের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, আমাদের কোম্পানি সম্পর্কে জেনে শুনেই বিএসইসি আইপিও অনুমোদন দিয়েছে।

কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস) পর্যালোচনা করে দেখা গেছে,  ২০০৯ সালে কোম্পানির বেসিক ইপিএস ছিল ১ টাকা ২০ পয়সা। তা ২০১০ সালে হয়েছে ১ টাকা ৪২ পয়সা। ২০১১ সালে হয়েছে ২ টাকা ৯ পয়সা, ২০১২ সালে তা ২ টাকা ৩২ পয়সা এবং ২০১৩ সালে ২ টাকা ৪৮ পয়সা।

অপরদিকে, অডিটরের সার্টিফিকেট অনুযায়ী,কোম্পানির বেসিক ইপিএস ২০১০ সালে ছিল ২ টাকা ৪ পয়সা, ২০১১ সালে ৩ টাকা ৩৪ পয়সা, ২০১২ সালে ২ টাকা ২২ পয়সা,২০১৩ সালে ২ টাকা ৯২ পয়সা এবং ২০১৪ সালে ২ টাকা ৪৮ পয়সা। ইপিএস এ এমন পরিবর্তনের বিষয়েও কোনো ধরনের ব্যাখ্যা দেয়নি কোম্পানিটি।

জানা গেছে, বস্ত্রখাতের রিজেন্ট টেক্সটাইল লিমিটেড আইপিওর মাধ্যমে পুঁজিবাজারে ৫ কোটি শেয়ার ছেড়ে ১২৫ কোটি টাকা উত্তোলন করবে। কোম্পানির ১০ টাকা ফেসভ্যালুর সঙ্গে ১৫ টাকা প্রিমিয়ামসহ প্রতিটি শেয়ারের নির্দেশক মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ২৫ টাকা।
 
বস্ত্রখাতের সংশ্লিষ্টরা বলেন, কিছুদিন আগে রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে পড়েছিল পোশাক খাত। তখনও এ শিল্প চরম সঙ্কটের মুখোমুখি হয়েছিল। এরপর রানা প্লাজা ধ্বসের পর বিদেশে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হয়েছে। একপর্যায়ে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি পণ্যের অবাধ প্রবেশাধিকার- জিএসপি সুবিধা বাতিল হয়ে যায়। এতে আরও বড় ধরনের সঙ্কটে পড়ে পোশাক শিল্প। সেই রেশ না কাটতেই আবার বিদেশি নাগরিক হত্যাকাণ্ডের পর অনেক ক্রেতা নির্ধারিত সফরের সূচি বাতিল করেছেন। এতে অনিশ্চয়তা মুখে পড়েছে ক্রয়াদেশ।

আর এই পরিস্থিতিতে রিজেন্ট টেক্সটাইল প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের মাধ্যমে পুজিবাজার থেকে ১২৫ কোটি টাকা সংগ্রহ করে কতটুকু লাভবান হবে তা্ নিয়েই প্রশ্ন উঠেছে। একই সঙ্গে বিনিয়োগকারীদের নিকট থেকে নেয়া অর্থের যথাযথ ব্যবহার হবে কি-না তা নিয়েও রয়েছে সংশয়।

পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক বলেন, আমরা সব সময়ই প্রিমিয়ামসহ আইপিও অনুমোদন না দেয়ার অনুরোধ করেছি। তবে যদি কোনো কোম্পানিকে প্রিমিয়ামসহ আইপিও অনুমোদন দিতে হয় তাহলে বিএসইসির উচিত সরেজমিনে কোম্পানির সব কিছু অডিট করা।

এসআই/এসকেডি/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।