শ্রমিক ছাঁটাই বন্ধে কারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদফতরের চিঠি

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৮:০১ এএম, ০৫ এপ্রিল ২০২০

করোনাভাইরাসের কারণে সাধারণ ছুটিকালীন পোশাক কারখানার শ্রমিকদের যেন ছাঁটাই না করা, সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের অনুরোধ জানিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট কয়েকটি মন্ত্রণালয় ও ব্যবসায়ী সংগঠনের কাছে চিঠি দিয়েছে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অধীন কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদফতর (ডিআইএফই)। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

চিঠিতে বলা হয়, করোনাভাইরাসের কারণে গত মাসে বাংলাদেশে রফতানিমুখী তৈরি পোশাক শিল্প কারখানাসহ প্রায় ১৬ হাজার ৮০০ কারখানা বন্ধ রয়েছে। এতে কর্মহীন হয়ে পড়েছেন ৩২ লাখ শ্রমিক। এই বিপুল সংখ্যক শ্রমিককে লে অফ করে অর্থাৎ তাদের মূল বেতনের অর্ধেক পরিশোধ করে, তাদেরকে ছাঁটাই করে দেয়া হবে জানতে পেরেছে ডিআইএফই।

এ অবস্থায় যেসব কারখানা মালিক শ্রমিকদের ছাঁটাই করছেন বা ছাঁটাইয়ের পরিকল্পনা করছেন, সেটা বন্ধ করার অনুরোধ জানিয়ে বাণিজ্যমন্ত্রণালয়, শিল্প মন্ত্রণালয়, বস্ত্র ও পাঠ মন্ত্রণালয়, শিল্প পুলিশ, বিভাগীয় কর কমিশন, জেলা প্রশাসক ও ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই বরাবর একটি স্মারক চিঠি দিয়েছে সরকারের সংস্থাটি।

চিঠিতে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান অধিদফতরের মহাপরিদর্শক শিবনাথ রায় বলেন, ‘বিশ্ব্যাপী নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমনের প্রভাবে ইতোমধ্যে বাংলাদেশেও শ্রমিকের জীবনমানের নিরাপত্তাসহ শিল্প কলকারখানার সামগ্রিক কর্মকাণ্ডে ব্যাপক প্রভাব পড়েছে।

এ বিরূপ প্রভাব থেকে উত্তরণের লক্ষ্যে সরকারঘোষিত কোভিড-১৯ মোকাবিলায় গত ২৬ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত সাধারণ ছুটি ঘোষণা এবং পরবর্তীতে তা আগামী ৯ এপ্রিল পর্যন্ত বাড়ানো হয়। অনেক কলকারখানায় পর্যাপ্ত অর্ডার না থাকায় বা ক্রয় আদেশ স্থগিত হওয়ায় বা শিপমেন্ট বাতিল হওয়ায় বেশিরভাগ তৈরি পোশাক শিল্প কলকারখানা ৪ এপ্রিল পর্যন্ত বাংলাদেশ শ্রম আইন-২০০৬ (সংশোধিত ২০১৮) এর ধারা ১২ ও ১৬ মোতাবেক বন্ধ ঘোষণা করে।

চিঠিতে আরও বলা হয়, কলকারখানাসমূহে স্বাস্থ্য নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনায় এনে গত ১৯ থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত মোট ১ হাজার ৯০৪টি বন্ধ রফতানিমুখী তৈরি পোশাক শিল্প কারখানায় ২১ লাখ ৩৮ হাজার ৭৭৮ জন শ্রমিক এবং তৈরি পোশাক শিল্প কলকারখানা ব্যতীত ১৪ হাজার ৮৬৪টি বন্ধ অন্যান্য শিল্প কলকারখানায় ১০ লাখ ৬৯ হাজার ৮৫৩ জন শ্রমিকসহ সর্বমোট ৩২ লাখ ৮ হাজার ৬৩১ জন শ্রমিক কর্মহীন রয়েছেন।

৩২ লাখ ৮ হাজার ৬৩১ জন শ্রমিক কি চাকরি হরিয়েছেন-এ বিষয়ে জানতে চাইলে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান অধিদফতরের যুগ্ম মহাপরিদর্শক মো. শামসুল আলম খান জাগো নিউজকে বলেন, ‘এরা চাকরি হারায়নি। তবে করোনার কারণে কারখানাগুলো বন্ধ রয়েছে। তাই শ্রমিকরা কর্মহীন অবস্থায় রয়েছে। এটা উল্লেখ করা হয়েছে।’

মহাপরিদর্শক শিবনাথ রায় চিঠিতে বলেন, ‘উপমহাপরিদর্শক, কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদফতর ঢাকা ও গাজীপুরের মাধ্যমে জানতে পারে যে, আগামী ৯ এপ্রিল পর্যন্ত সরকার সাধারণ ছুটি বর্ধিত করলেও অধিকাংশ কলকারখানা পূর্বঘোষিত ৪ এপ্রিলের পরে আর ছুটি বর্ধিত করেনি। এ অবস্থায় ৫ এপ্রিল থেকে চালু করার কথা এরুপ কিছু কলকারখানা বা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের মালিকপক্ষ শ্রমিক ছাঁটাই করবেন বলে জানা গেছে। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষিত ৩১ দফা নির্দেশনার মধ্যে ২৯ দফায় বলা হয়েছে ‘শিল্প মালিকগণ শ্রমিকদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে নিজেদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করে উৎপাদন অব্যাহত রাখবেন।’

চিঠিতে আরও বলা হয়, পবিত্র রমজান মাস এবং ঈদুল ফিতর আসন্ন। এ অবস্থায় শ্রমিক ছাঁটাই করা হলে একদিকে যেমন তাদের জন্য জীবনধারণ করা দুঃসাধ্য হয়ে পড়বে, তেমনি অন্যদিকে স্বাভাবিক শ্রম পরিস্থিতি অস্বাভাবিক হয়ে পড়বে যা পরবর্তীতে সামাল দেয়া কঠিন হয়ে যেতে পারে। ইতোমধ্যে এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের লক্ষ্যে শ্রমিক কর্মচারীদের বেতন-ভাতা পরিশোধের জন্য প্রধানমন্ত্রী পাঁচ হাজার কোটি টাকার আর্থিক প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন।

সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় শিল্প কলকারখানার মালিক কর্তৃক শ্রমিক ছাঁটাই বন্ধ করার প্রয়োজনীয় নির্দেশনা ও যথোপযুক্ত কার্যক্রম গ্রহণের জন্য অনুরোধ জানিয়েছে ডিআইএফই।

এমইউএইচ/এসআর/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।