জটিল পরিস্থিতিতে শেয়ারবাজারের লেনদেন
জটিল পরিস্থিতিতে পড়েছে শেয়ারবাজারের লেনদেন। ফলে দফায় দফায় পেছানো হচ্ছে লেনদেনের সময় সূচক। শেয়ারের দাম কমার বিষয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড কমিশনের (বিএসইসি) দেয়া এক মৌখিক নির্দেশের ফলে এ পরিস্থিরি সৃষ্টি হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বিএসইসি থেকে শেয়ার দাম কমার ক্ষেত্রে সার্কিট ব্রেকার হিসেবে একটি মৌখিক নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এতে গত পাঁচ কার্যদিবসের শেয়ারের ক্লোজিং প্রাইজের গড় দামের ওপর সার্কিট ব্রেকার সীমা নির্ধারণে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এর ফলে শেয়ার দাম এক শতাংশেরও কম কমতে পারবে।
এই নির্দেশনা কার্যকর করার জন্য ডিএসই গত পাঁচ কার্যদিবসের শেয়ারের ক্লোজিং প্রাইজের গড় নির্ধারণে কাজ করছে। বিষয়টি খুবই জটিল বলে ডিএসইর দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন।
এ কারণে আজ বৃহস্পতিবার প্রথমে লেনদেন শুরুর সময় এক ঘণ্টা পিছিয়ে সাড়ে ১১টা করা হয়। পরবর্তীতে তা পিছিয়ে দুপুর ১টা করা হয়েছে। তবে এ সময়েও লেনদেন শুরু হতে কি না তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে ডিএসইর চেয়ারম্যান ইউনুসুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, টেকনিক্যাল কারণে আজ শেয়ারবাজারের লেনদেন শুরুর সময় পেছানো হয়েছে। আমরা আশাকরি দুপুর ১টা থেকে শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরু হবে।
লেনদন কতক্ষণ চলবে এমন প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, এটা এখনো নির্ধারণ করা হয়নি। এর সঙ্গে পরিচালনা পর্ষদের কোন সম্পর্ক নেই। ডিএসইর ম্যানেজমেন্ট এ নিয়ে কাজ করছে।
ডিএসইর পরিচালক মিনহাজ মান্নান ইমন জগো নিউজকে বলেন, আমরা প্রথমে শুনেছিলাম সাড়ে ১১টা থেকে লেনদন শুরু হবে। এখন শুনছি ১টা থেকে লেনদেন হবে। আমরা ১টা পর্যন্ত অপেক্ষায় আছি।
এর আগে গতকাল বুধবার ডিএসই জরুরি সভা করে লেনদেনের সময় একঘণ্টা কমানোর সিদ্ধান্ত নেয়। নতুন সময় অনুযায়ী দুপুর আড়াইটার পরিবর্তে দুপুর দেড়টায় লেনদেন শেষ হবে।
এদিকে দফায় দফায় লেনদেন শুরু সময় পেছানো হলেও ডিএসই থেকে বিনিয়োগকারীদের উদ্দেশ্যে কোন আনুষ্ঠানিক বিজ্ঞপ্তি দেয়া হচ্ছে না। এতে গুঞ্জন শুরু হয়েছে শেয়ারবাজারে আর লেনদেন হবে না। তবে ডিএসইর দায়িত্বশীল একাধিক ব্যক্তি জাগো নিউজকে জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবারের লেনদন বাতিল হলেও সামগ্রীকভাবে শেয়ারবাজারের লেনদেন বন্ধ হবে না। শেয়ারবাজারে লেনদেন চলমান থাকবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সাইফুর রহমান বলেন, নতুন সার্কিট ব্রেকার নির্ধারণে কাজ চলছে। এক্ষেত্রে গত ৫ দিনের শেয়ারের ক্লোজিং প্রাইসের গড়ের নিচে শেয়ার দাম নামতে পারবে না। এমন একটি সার্কিট ব্রেকার নির্ধারণের চেষ্টা চলছে। তবে এখনও বিষয়টি চূড়ান্ত হয়নি। চূড়ান্ত হলে আপনাদের জানানো হবে।
বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া করোনা ভাইরাসের প্রকোপে বেশকিছুদিন ধরেই বিশ্ব শেয়ারবাজারে ধস চলছে। যার নেতিবাচক প্রভাব দেখা যায় বাংলাদেশের শেয়ারবাজারেও। তবে ৮ মার্চ বাংলাদেশে প্রথম তিনজন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার তথ্য প্রকাশ পেলে আতঙ্ক বেড়ে যায়।
এর প্রভাবে ৯ মার্চ শেয়ারবাজারে ভয়াবহ ধস নামে। ডিএসইর প্রধান মূল্য সূচক ডিএসইএক্স একদিনে রেকর্ড ২৭৯ পয়েন্ট পড়ে যায়। এরপর একে একে ৮ দিন চলে গেলেও বড় ধসের কবল থেকে বের হতে পারেনি শেয়ারবাজার।
এর মধ্যে চলতি সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস রোববার লেনদেনের শুরুতে শেয়ারবাজারে বড় ধস নামলে দুপুরে বিনিয়োগকারীদের সাত সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল নিকুঞ্জে অবস্থিত ডিএসইর কার্যালয়ে ছুটে যান।
বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাকের নেতৃত্বে যাওয়া ওই প্রতিনিধি দল ডিএসইর ব্যবস্থাপনা পরিচালকের (এমডি) কাছে শেয়ারবাজারে লেনদেন বন্ধ রাখার জন্য আনুষ্ঠানিক দাবি জানান।
তবে ডিএসইর এমডি তাদের সে দাবি মেনে না নিয়ে বলেন, আগামীকাল থেকে শেয়ারবাজার ঘুরে দাঁড়াবে। অর্থমন্ত্রী, বাংলাদেশ ব্যাংকসহ সবাই শেয়ারবাজার ভালো করতে চেষ্টা করছে।
তবে সোমবার আবার শেয়ারবাজারে ধস নামে। এরপর বিকেলে ব্যাংক মালিক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন অর্থমন্ত্রী। বৈঠক শেষে ব্যাংকের পক্ষ থেকে জানানো হয় বুধবার থেকে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ বাড়োনো হবে। এমন আশ্বাসের পরও বুধবার শেয়ারবাজারে ধস নামে।
এর প্রেক্ষিতে বিকেলে জরুরি বৈঠকে বসে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের পরিচালনা পর্ষদ। বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেয়া হয় শেয়ারবাজারে লেনদেন চলমান থাকবে। তবে লেনদেন সময় এক ঘণ্টা কমিয়ে সকাল সাড়ে ১০টা থেকে দুপুর দেড়টা পর্যন্ত করা হবে। আজ বৃহস্পতিবার থেকে এ সিদ্ধান্ত কার্যকর হওয়ার কথা।
এমএএস/এনএফ/এমকেএইচ