এলডিসি উত্তরণের পর আসবে ৩ চ্যালেঞ্জ

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৮:২২ পিএম, ০৫ মার্চ ২০২০

স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা (এলডিসি) থেকে উত্তরণের পর বাংলাদেশের সামনে তিনটি চ্যালেঞ্জ অপেক্ষা করছে। প্রথমত বাণিজ্যিক চাপ সৃষ্টি, দ্বিতীয়ত নীতিমালা তৈরিতে সুযোগ সংকোচন এবং তৃতীয়ত উন্নয়ন সাহায্য কমে আসতে পারে।

এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আগে থেকেই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের পরামর্শ দিয়েছেন বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) গবেষণা পরিচালক ড. এম এ রাজ্জাক।

বৃহস্পতিবার (৫ মার্চ) রাজধানীর পল্টনে ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) মিলনায়তনে সামষ্টিক অর্থনীতি ও এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন বিষয়ক কর্মশালায় তিনি এসব কথা বলেন। ইআরএফ ও পিআরআই যৌথভাবে কর্মশালার আয়োজন করে।

অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন পিআরআই চেয়ারম্যান ড. জায়েদি সাত্তার, নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর ও ইআরএফ সাধারণ সম্পাদক এস এম রাশিদুল ইসলাম।

ড. রাজ্জাক বলেন, স্বল্পোন্নত আয়ের দেশ হওয়ার কারণে পণ্য রফতানিতে জিরো ডিউটি বা শূন্য শুল্ক সুবিধা পাচ্ছে বাংলাদেশ। কিন্তু ২০২৪ সালের পর ন্যূনতম ২.৫ থেকে ২০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক গুনতে হবে। বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে বড় রফতনি বাজার ইউরোপীয় ইউনিয়ন। সম্প্রতি ব্রেক্সিটের ফলে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হবে বাংলাদেশ। কারণ এর আগে বাংলাদেশের একটি পণ্য ইউরোপীয় ইউনিয়নের একটি দেশ থেকে অন্য দেশে রফতানির জন্য পৌঁছানো সম্ভব ছিল। কিন্তু ব্রেক্সিটের ফলে এখন এই প্রক্রিয়া ব্যাহত হবে।

তিনি আরও জানান, তখন চাইলেই আমদানি-রফতানি নীতিমালা পরিবর্তন করতে পারবে না বাংলাদেশ। দেশের জন্য ক্ষতিকারক হলেও ওয়ার্ল্ড ট্রেড অর্গানাইজেশনের (ডব্লিউটিও) নীতিমালা অনুসরণ করতে হবে। এছাড়া বিভিন্ন দাতা সংস্থার কাছ থেকে উন্নয়ন সহযোগিতার পরিমাণ কমে আসতে পারে বলে মনে করেন তিনি।

ড. মনসুর বলেন, এখনও কোনো রাজস্ব অফিসে ট্যাক্স জমা দিতে গেলে ঘুষ না দিয়ে কাজ হয় না। অফিসাররা আগ্রহী নন। কিন্তু প্রতিবছরই ট্যাক্স কালেকশনের লক্ষ্যমাত্রা বৃদ্ধি করা হচ্ছে। কিন্তু আদায়ের চিত্র পুরোপুরি উল্টো। প্রতিটি জেলায় ডিজিটাল মেশিন স্থাপনের সর্বশেষ উদ্যোগও ব্যর্থ হয়েছে। কোনো নিয়মনীতি এখানে কাজ করছে না। এসব সমস্যা থেকে উত্তরণ ঘটাতে না পারলে স্বপ্নপূরণ সম্ভব নয় বলে তিনি মন্তব্য করেন।

তিনি আরও বলেন, গত কয়েক বছরে সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন ভাতা পেনশন এবং ভর্তুকিসহ যে পরিমাণ সরকারি ব্যয় বেড়েছে, সে অনুযায়ী রাজস্ব আদায় করতে পারছে না সরকার। এভাবে চলতে থাকলে আর্থিক খাত নিয়ে ভাববার বিষয়ে বলে মনে করেন ড. মনসুর।

প্রশ্নোত্তর পর্বে পিআরআই নির্বাহী পরিচালক বলেন, সম্প্রতি ব্যাংক ঋণের সুদহার কমানোর যে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে, তা মোটেও যৌক্তিক নয়। এটি বাস্তবায়নের কিছুদিনের মধ্যেই অর্থনীতিতে ভয়াবহ চিত্র দেখা যাবে। ক্ষুদ্র শিল্প খাত পরিত্যক্ত হয়ে পড়বে। কারণ এই ঋণের পরিচালন ব্যয় বেশি। তখন ইচ্ছা করেই ব্যাংকগুলো এসএমই খাতে ঋণ বিতরণ করবে না। একদিকে খেলাপি, মূল্যস্ফীতি অন্যদিকে আমদানি-রফতানির অবনমন অর্থনীতিকে হুমকির দিকে ঠেলে দিচ্ছে।

তিনি আরও জানান, এই বছরে ব্যাংক খাত থেকে সরকার যে ঋণ নেবে তার পরিমাণ গত ৪৮ বছরের সমান। এর বিপরীতে ব্যাংকগুলোকে সরকার পরিশোধ করবে ৯ দশমিক ৫ শতাংশ। কিন্তু ১ এপ্রিল থেকে ব্যাংকগুলোকে ৯ শতাংশে ঋণ বিতরণের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। সুতরাং ব্যাংকগুলো সুযোগ পেলেই সরকারকে ঋণ দেবে, বেসরকারি খাতে নয়। অর্থনীতিতে চাঙ্গা করতে যে সমস্ত নীতিমালা নেয়া হচ্ছে, তার সবগুলোই ভারসাম্যহীন বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

এমইউএইচ/এমএসএইচ/এমকেএইচ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।