বিক্রির চাপে কমল সূচক-লেনদেন
টানা তিন দিন বড় উত্থানের পর মঙ্গলবার (২১ জানুয়ারি) ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) এবং চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) মূল্য সূচকের পতন হয়েছে। সেই সঙ্গে কমেছে লেনদেনের পরিমাণ। বিনিয়োগকারীদের বিক্রির চাপে এই দরপতন হয়েছে বলে মনে করছেন শেয়ারবাজার সংশ্লিষ্টরা।
তারা বলছেন, টানা দরপতনের পর ১৬-২০ জানুয়ারি তিন কার্যদিবস শেয়ারবাজারে বড় উত্থান হয়েছে। এতে বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বেড়েছে। দাম বাড়ার ফলে বিনিয়োগকারীদের একটি অংশ তাদের হাতে থাকা শেয়ার বিক্রি করে দিয়েছেন। এতে বাজারে কিছুটা বিক্রির চাপ বাড়ে। যার ফলে বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমে সূচকের পতন হয়েছে।
বাজার সংশ্লিষ্টদের মতে, শেয়ারবাজার ভালো করতে সরকার খুব আন্তরিক এতে কোনো সন্দেহ নেই। এরপরও বাজারের ওপর বিনিয়োগকারীদের আস্থা পুরোপুরি ফেরেনি। যে কারণে শেয়ারের অল্প দাম বাড়তেই তারা বিক্রির প্রবণতা দেখাচ্ছেন। বিনিয়োগকারীদের এ আচরণ ঠিক নয়। বিনিয়োগকারীদের উচিত ভালো শেয়ারে বিনিয়োগ ধরে রাখা।
তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, মঙ্গলবার লেনদেন শুরুতেই সূচকের বড় পতন হয়। মাত্র ১০ মিনিটের লেনদেনে ডিএসইর প্রধান মূল্য সূচক ৫০ পয়েন্ট পড়ে যায়। সেই সঙ্গে দরপতন হয় প্রায় সবকটি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের। তবে এক পর্যায়ে বেশকিছু ভালো প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম বাড়ে। এতে বড় পতনের হাত থেকে রক্ষা পায় সূচক।
দিনভর ডিএসইতে লেনদেনে অংশ নেয়া মাত্র ৭৯টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বেড়েছে। বিপরীতে কমেছে ২৩৭টির। আর অপরিবর্তিত রয়েছে ৪০টির দাম।
বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের এই দরপতনের ফলে ডিএসইর প্রধান মূল্য সূচক ২৬ পয়েন্ট কমে চার হাজার ৪০৮ পয়েন্টে নেমে গেছে। অপর দুই সূচকের মধ্যে ডিএসই-৩০ সূচক ৭ পয়েন্ট কমে এক হাজার ৫০৭ পয়েন্টে অবস্থান করছে। আর ডিএসই শরিয়াহ্ সূচক ৭ পয়েন্ট কমে এক হাজার সাত পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।
এ বিষয়ে ডিএসইর এক সদস্য বলেন, আজ লেনদেনের শুরুতে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে শেয়ার বিক্রির প্রবণতা দেখা যায়। যে কারণে শুরুতেই সূচকের বড় পতন হয়। তবে মাঝে কিছু বিনিয়োগকারী ক্রয়ে মনোযোগী হন। এরপরও বিক্রি চাপ অব্যাহত থাকে। ফলে বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম কমে গেছে।
তিনি আরও বলেন, টানা উত্থানের পর বিনিয়োগকারীদের মধ্যে প্রফিট টেকিং (মুনাফা তুলে নেয়া) প্রবণতা থাকবে এটা স্বাভাবিক। তবে গত তিন দিনের টানা উত্থানের আগে বাজার যেভাবে পড়েছে, তাতে এখই বিক্রির চাপ বাড়া স্বাভাবিক নয়। বিনিয়োগকারীদের উচিত শেয়ার ধরে রাখার দিকে মনোযোগ দেয়। বাজারে প্যানিক সেল (আতঙ্কে বিক্রি) না হলে আশাকরা যায় বাজার ভালো হবে।
এদিকে সূচকের সঙ্গে বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের দরপতনের পাশাপাশি ডিএসইতে কমেছে লেনদেনের পরিমাণ। দিনভর ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ৪০৬ কোটি ৮০ লাখ টাকা। আগের দিন লেনদেন হয় ৪৯৪ কোটি ৭৯ লাখ। সে হিসেবে লেনদেন কমেছে ৮৭ কোটি ৯৯ লাখ টাকা।
টাকার অঙ্কে ডিএসইতে সব থেকে বেশি লেনদেন হয়েছে লাফার্জহোলসিমের শেয়ার। কোম্পানিটির ২৭ কোটি ৬৩ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালের শেয়ার লেনদেন হয়েছে ২৭ কোটি ৩৪ লাখ টাকার। ১৬ কোটি ছয় লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে গ্রামীণফোন।
এছাড়া লেনদেনের শীর্ষ ১০ কোম্পানির মধ্যে রয়েছে- খুলনা পাওয়ার, এসএস স্টিল, এডিএন টেলিকম, বিকন ফার্মাসিউটিক্যালস, প্যারামাউন্ট টেক্সটাইল, এসকে ট্রিমস এবং সিঙ্গার বাংলাদেশ।
অপরদিকে, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ৫৫ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ১৩ হাজার ৪২৪ পয়েন্টে। বাজারে লেনদেন হয়েছে ১৩ কোটি ৪০ লাখ টাকা। লেনদেন অংশ নেয়া ২৩৮ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে দাম বেড়েছে ৫৬টির, কমেছে ১৬৪টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ১৮টির দাম।
এমএএস/এএইচ/এমএস