‘যোগ্য’ এমডির সন্ধানে ৬ জনকে ডেকেছে ডিএসই

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৯:১৫ পিএম, ০৬ জানুয়ারি ২০২০

দুই দফা ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) নিয়োগে ব্যর্থ হয়ে এবার ‘যোগ্য’ এমডির সন্ধানে ৬ জনকে সাক্ষাৎকার দেয়ার জন্য ডেকেছে দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) কর্তৃপক্ষ। মঙ্গলবার এ সাক্ষাৎকার অনুষ্ঠিত হবে বলে ডিএসইর সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

এদিকে এবার এমডি নিয়োগ দিতে ব্যর্থ হলে ডিএসইতে প্রশাসক (অ্যাডমিনিস্ট্রেটর) বসানোর মতো কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে পারে পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। দীর্ঘদিন ধরে ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদ খালি থাকায় এমন সিদ্ধান্ত নেয়ার চিন্তা করছে পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা।

সূত্রটি জানিয়েছে, প্রায় ৬ মাস ধরে ডিএসইর ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদ খালি রয়েছে। এই শূন্যস্থান পূরণে ডিএসই কর্তৃপক্ষ দুই দফায় বিজ্ঞপ্তি দিয়েও কাউকে নিয়োগ দিতে না পারায় গত ১০ ডিসেম্বর তৃতীয় দফায় আবারও বিজ্ঞপ্তি দেয়। এ বিজ্ঞপ্তিতে আগ্রহীদের ২৪ ডিসেম্বরের মধ্যে জীবনবৃত্তান্তসহ আবেদন করতে বলা হয়।

ডিএসইর এই বিজ্ঞপ্তিতে সাড়ে দিয়ে বেশ কয়েকজন এমডি পদের জন্য আবেদন করেন। এদের মধ্যে স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক, ব্যাংকার, হিসাববিদ এবং কর পরামর্শক রয়েছেন। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপককে বাদ দিয়ে ডিএসইর কর্তৃপক্ষ ব্যাংকার, হিসাববিদ এবং কর পরামর্শক এমন ৬ জনকে সাক্ষাৎকারের জন্য ডেকেছেন। তবে এদের মধ্যে একজন ব্যাংকার দেশের বাইরে থাকায় তিনি সাক্ষাৎকারে আসবেন না।

ডিএসইর সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ইনভেস্টমেন্ট কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) সাবেক এক এমডি, যমুনা ব্যাংকের সাবেক এক এমডি, ন্যাশনাল ব্যাংকের সাবেক এক এমডি, জনতা ব্যাংকের এক নিরীক্ষা পরামর্শক, আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংকের একজন ডিএমডি এবং একজন কর পরামর্শককে সাক্ষাৎকারের জন্য ডাকা হয়েছে। তবে আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংকের ডিএমডি দেশের বাইরে রয়েছেন।

সূত্রটি জানায়, ব্যবস্থাপনা থেকে মালিকানা পৃথকীকরণে ডিমিউচ্যুয়ালাইজেশন স্কিমের পর ডিএসইর দ্বিতীয় ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে ২০১৬ সালের ২৯ জুন নিয়োগ পান সাবেক ব্যাংকার কে এ এম মাজেদুর রহমান। যার মেয়াদ শেষ হয়েছে গত ১১ জুলাই। তারপর থেকেই পদটি খালি।

ডিএসইতে এমডি পদে যোগ দেয়ার পর বিদেশ ভ্রমণ, কর্মকর্তাদের পদোন্নতিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে নানা বিতর্কের জন্ম দেন মাজেদুর রহমান। এরপরও ডিএসইর পর্ষদ থেকে মাজেদুর রহমানকে এমডি পদে পুনরাই নিয়োগ চেয়ে বিএসইসিতে আবেদন করা হয়। তবে নিয়ন্ত্রক সংস্থা ডিএসইর ওই প্রস্তাব বাতিল করে দেয়। এর প্রেক্ষিতেই নতুন এমডি খোঁজা শুরু করে ডিএসই।

এ লক্ষ্যে গত ৭ আগস্ট বিজ্ঞপ্তি দেয় ডিএসই কর্তৃপক্ষ। এতে আগ্রহী প্রার্থীদের ১ সেপ্টেম্বরের মধ্যে আবেদন করতে বলা হয়েছিল। যেখানে ১৬ জন আবেদন করেন। তবে ওই ১৬ জনের মধ্যে কাউকেই যোগ্য মনে করেনি ডিএসইর পর্ষদ এবং নমিনেশন অ্যান্ড রিমিউনারেশন কমিটি (এনআরসি)।

এরপর গত ৫ সেপ্টেম্বর দ্বিতীয় দফায় এমডির খোজেঁ বিজ্ঞপ্তি দেয় ডিএসই। এক্ষেত্রে আবেদন করেছিল ৩ জন। অর্থাৎ দুই দফায় ১৯ জন ডিএসইর এমডি পদে নিয়োগের জন্য আবেদন করেছিল।

দুই দফায় আবেদনকারীদের মধ্য থেকে গত ২ অক্টোবর সাতজন প্রার্থীকে সাক্ষাৎকারের জন্য ডাকা হয়। পরবর্তীতে সাতজনের মধ্যে তিনজনকে নিয়ে শর্ট লিস্ট করা হয়। যাদের গত ৬ অক্টোবর ডিএসইর পর্ষদ ডাকে। তবে ওই তিনজনের মধ্যেও কাউকে চূড়ান্ত নিয়োগের জন্য যোগ্য মনে করেনি পর্ষদ।

এ কারণে ৬ অক্টোবর অনুষ্ঠিত ডিএসইর পর্ষদ সভায় যোগ্য এমডির খোঁজে আবারও বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। ওই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গত ১০ ডিসেম্বর বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়।

আগের ধারাবাহিকতায় তৃতীয় দফার বিজ্ঞপ্তিতেও এমডি পদে আবেদনের জন্য যোগ্যতা হিসেবে বিজনেস, ইকোনোমিকস, স্ট্যাটিসটিকস, ম্যাথমেটিকস অথবা আইনে ব্যাচেলর ডিগ্রিসহ কমপক্ষে ১০ বছরের অভিজ্ঞতা চাওয়া হয়। আর প্রফেশনাল ডিগ্রি সিএফএ, সিএ, সিএমএ, সিএস, সিপিএ ইত্যাদির ক্ষেত্রেও ১০ বছরের অভিজ্ঞতা চাওয়া হয়। তবে ক্যাপিটাল মার্কেটের ওপরে আন্তর্জাতিক দক্ষতা সম্পন্ন প্রার্থীর ক্ষেত্রে অন্যান্য শর্ত শিথিল করা হয়।

এদিকে দফায় দফায় বিজ্ঞপ্তি দিয়েও এমডি নিয়োগ দিতে না পারার বিষয়টি ভালোভাবে নিচ্ছে না নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি। ডিএসইর মতো প্রতিষ্ঠান এমডি ছাড়া চলায় দেশের শেয়ারবাজারের সুনাম নষ্ট হচ্ছে বলে মনে করছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা। এ কারণে এবার এমডি পাওয়া না গেলে, কমিশন শেয়ারবাজারের স্বার্থে নিজেই প্রশাসক বসাতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

ডিএসইর এমডির বিষয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থা যখন এমন কঠিন সিদ্ধান্ত নেয়ার কথা ভাবছে, সেই সময় সাক্ষাৎকারের জন্য যাদের ডাকা হয়েছে তাদের মধ্যে একজনের বিরুদ্ধে ঋণ জালিয়াতির অভিযোগ রয়েছে। এ ঋণ জালিয়াতির জন্য দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তাকে তলব করেন। অথচ ওই ব্যক্তিকেই ডিএসইর একটি পক্ষ এমডি করতে জোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছে।

ডিএসইর একাধিক কর্মকর্তা অভিযোগ করে বলেন, ডিএসইর শেয়ারহোল্ডার পরিচালকরা এমন ব্যক্তিকে এমডি করতে চাচ্ছেন যাকে দিয়ে নিজেদের স্বার্থ হাসিল হবে। এ কারণে নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপককে বাদ দিয়ে নিজেদের পছন্দের ব্যক্তিদের সাক্ষাৎকারে ডেকেছে সংশ্লিষ্টরা। এ কারণে অনিয়মের অভিযোগ থাকা ব্যক্তিও সাক্ষাৎকার দেয়ার জন্য ডাক পেয়েছেন।

তারা অভিযোগ করে বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দু’জন অধ্যাপক ডিএসইর শীর্ষ পদের দায়িত্ব পালন করেছেন। তাদের আমলে ডিএসই সবদিক থেকেই ভালো করে। কিন্তু ২০১৬ সালে একজন ব্যাংকার এমডি হওয়ার পর নানা বিতর্কের জন্ম দেন। পদোন্নতিসহ নানা ক্ষেত্রে অনিয়মের কারণে ডিএসইর কর্মকর্তাদের মধ্যে ক্ষোভেরও সৃষ্টি হয়।

এ বিষয়ে ডিএসইর এমডি নিয়োগ সংক্রান্ত কমিটি ‘নমিনেশন অ্যান্ড রিমিউনারেশন কমিটি’তে থাকা শেয়ারহোল্ডার পরিচালক রকিবুর রহমানের সঙ্গে মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তার কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

এমএএস/জেএইচ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।