বাণিজ্য মেলায় বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট
ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায় গেলেই দেখা যাবে বাংলাদেশের গর্বের অর্জন বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট। এবারের মেলার ভিআইপি গেটের নকশা করা হয়েছে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ এর আদলে। বরাবরের মতো বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) যৌথভাবে এ মেলার আয়োজন করে।
২৫তম ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায় গর্বের অর্জন বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের পাশাপাশি স্বপ্নের পদ্মা সেতুও দেখতে পাবেন দর্শনার্থীরা। সেই সঙ্গে দেখা যাবে অহংকারের জাতীয় স্মৃতিসৌধ।
মেলার ভিআইপি গেট যেমন বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের আদলে করা হয়েছে তেমনি মূল গেট করা হয়েছে বাংলাদেশের অভ্যুদয় ও সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের প্রতীক সামনে রেখে। দুই পাশে দুটি জাতীয় স্মৃতিসৌধের প্রতীক তৈরি করে, সেই প্রতীকী স্মৃতিসৌধ দুটির ওপর পদ্মা সেতুর প্রতীকী স্প্যান বসিয়ে করা হয়েছে প্রধান গেট।
ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার ভিআইপি গেট বরাবরই সাদামাঠা করা হলেও এবারই প্রথম পরিবর্তন এনে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের প্রতীক রাখা হয়েছে। আগে কয়েক বছর ধরেই বাণিজ্য মেলার মূল গেট সাজানো হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হলের আদলে। ২০১৮ সালে প্রথম মেলার মূল গেট পদ্মা সেতুর আদলে তৈরি করা হয়। এবারও মূল গেট পদ্মা সেতুর আদলে করা হলেও ২০১৮ সালের তুলনায় বেশ পার্থক্য রয়েছে।
বাংলাদেশের প্রথম স্যাটেলাইট ‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১’ এর সফল উৎক্ষেপণ করা হয় ২০১৮ সালের ১২ মে। যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার কেপ ক্যানাভেরাল থেকে স্যাটেলাইটটি সফল উৎক্ষেপণ করা হয়। প্রথম স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের পর দেশব্যাপী ই-এডুকেশন, ই-লার্নিং, টেলি-মেডিসিনসহ আরও নানা সেবা দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছিল।
উৎক্ষেপণের এক বছর চার মাস পর গত ১ অক্টোবর থেকে আয়ের খাতায় নাম লেখায় গর্বের বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১। দেশি টেলিভিশন চ্যানেলগুলো কম খরচে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের মাধ্যমে সম্প্রচার করছে।
অপরদিকে বিশ্বব্যাংক সহায়তার হাত ফিরিয়ে নিলেও নিজস্ব অর্থায়নে ২০১৪ সালে শুরু হয় স্বপ্নের পদ্মা সেতুর কাজ। বেশ জোর কদমেই চলছে সেতু নির্মাণকাজ। ইতোমধ্যে তিন কিলোমিটার দৃশ্যমান হয়েছে। এর মাধ্যমে মূল সেতুর ৮৫ দশমিক ৫০ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়।
উন্নয়ন ও গর্বের অর্জনকে বাণিজ্য মেলায় দেখতে পেয়ে বেশ খুশি দর্শনার্থীরা। ফার্মগেট থেকে মেলায় ঘুরতে আসা মো. মিলন বলেন, ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা দেশের জন্য অনেক বড় একটি বিষয়। এ ধরনের আয়োজনে দেশের গর্ব করার মতো বিষয়গুলো তুলে ধরা খুবই ভালো উদ্যোগ। মেলার এক গেটে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট। অন্য গেটে পদ্মা সেতু ও জাতীয় স্মৃতিসৌধ দেখতে খুবই ভালো লাগছে। এমন পরিকল্পনার জন্য আয়োজকরা ধন্যবাদ পাওয়ার যোগ্য।
ধানমন্ডি থেকে আসা রিপা বলেন, ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা এমন একটি মেলা যেখানে বাংলাদেশিদের পাশাপাশি বিদেশিরাও আসেন। এমন আয়োজনে একসঙ্গে স্মৃতিসৌধ, পদ্মা সেতু এবং বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট রাখায় মেলার সৌন্দর্য আমার কাছে বেড়ে গেছে।
তিনি বলেন, স্মৃতিসৌধ আমাদের অহংকারের প্রতীক। পদ্মা সেতু এবং বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট আমাদের গর্ব করার মতো অর্জন। নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু করে আমরা বিশ্বকে জানিয়ে দিয়েছি ইচ্ছা থাকলে অন্যের সাহায্য ছাড়াই দেশের উন্নয়ন করা যায়। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের মাধ্যমে মহাকাশেও আমরা আমাদের জানান দিয়েছি।
মেলার আয়োজক কমিটির সদস্য সচিব আব্দুর রউফ জাগো নিউজকে বলেন, মেলায় একেক বছর একেক ডিজাইন হয়। এবার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বাধীনতা সংগ্রাম আর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অর্থনৈতিক মুক্তির সংগ্রামকে স্মৃতিসৌধের মাধ্যমে প্রতীকীভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। দুই স্মৃতিসৌধকে যুক্ত করেছে পদ্মা সেতু। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটও আমাদের অনেক বড় অর্জন।
মাসব্যাপী এ বাণিজ্য মেলা গত ১ জানুয়ারি উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বাংলাদেশের পাশাপাশি থাইল্যান্ড, ইরান, তুরস্ক, নেপাল, চীন, মালয়েশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ভারত, পাকিস্তান, হংকং, দক্ষিণ কোরিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, জার্মানি, অস্ট্রেলিয়া, ভুটান, ব্রুনাই, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ইতালি ও তাইওয়ানের প্রতিষ্ঠান এ অংশ নিচ্ছে।
এসব প্রতিষ্ঠান যেসব পণ্য নিয়ে এসেছে তার মধ্যে অন্যতম দেশীয় বস্ত্র, মেশিনারিজ, কার্পেট, কসমেটিক্স অ্যান্ড বিউটি এইডস, ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্সস, পাট ও পাটজাত পণ্যসামগ্রী, চামড়া/আর্টিফিসিয়াল চামড়া ও জুতাসহ চামড়াজাত পণ্য, স্পোর্টস গুডস, স্যানিটারিওয়্যার, খেলনা, স্টেশনারি, ক্রোকারিজ, প্লাস্টিক সামগ্রী, মেলামাইন সামগ্রী, হারবাল ও টয়লেট্রিজ, ঘড়ি, হোম অ্যাপ্লায়েন্স, ইমিটেশন জুয়েলারি, সিরামিকস, টেবলওয়্যার, ক্যাবল, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, ফাস্টফুড, আসবাবপত্র ও হস্তশিল্পজাত পণ্য, উপহার সামগ্রী, কনস্ট্রাকশন সামগ্রী, হোম ডেকর, বেকারিপণ্য, বিদেশি বস্ত্র ইত্যাদি।
এমএএস/বিএ/জেআইএম