টিসিবির তৎপরতায়ও কমছে না পেঁয়াজের ঝাঁজ
দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে খোলাবাজারে পেঁয়াজ বিক্রি করছে সরকারি প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)। এরপরও পেঁয়াজের দামে লাগাম টানা যাচ্ছে না। সপ্তাহের ব্যবধানে নিত্যপ্রয়োজনীয় এ খাদ্য পণ্যটির দাম ২০ থেকে ৩০ টাকা বেড়ে ৮০ টাকায় দাঁড়িয়েছে।
সরকারের পক্ষ থেকে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পেঁয়াজের দাম কমে যাবে বলে গত মঙ্গলবার (১৭ সেপ্টেম্বর) আশার বাণী শুনিয়েছিলেন বাণিজ্য সচিব। তবে পাঁচদিন পেরিয়ে গেলেও বাজারে দাম কমার কোনো প্রভাব পড়েনি। উল্টো প্রতিদিন হু হু করে বাড়ছে পেঁয়াজের দাম।
রোববার (২২ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর মতিঝিল, মুগদা, খিলগাঁও, মালিবাগসহ বিভিন্ন কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা যায়, গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিপ্রতি ২০ থেকে ৩০ টাকা বেড়ে ৭০ থেকে ৮৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে পেঁয়াজ। প্রতিবেশী দেশ ভারতে পেঁয়াজের রফতানিমূল্য তিনগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। মূলত এর প্রভাবেই দেশের বাজারে গত ২০ দিনে ৮০ টাকায় উঠেছে পেঁয়াজের ঝাঁজ।
রাজধানীর কারওয়ানবাজারে পাইকারি পেঁয়াজ ব্যবসায়ী মনির হোসেন জাগো নিউজকে জানান, প্রতিদিন পেঁয়াজের দাম বাড়ছে। বন্দরে কেনার দাম বেশি পড়ছে। তাই বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। আজকে (রোববার) আমদানি করা পেঁয়াজ পাইকারি বিক্রি করছি ৬২ থেকে ৬৫ টাকায়, আর দেশি পেঁয়াজ বিক্রি করছি ৭০ থেকে ৭৫ টাকায়। গত এক সপ্তাহে কেজিতে ১০ থেকে ১৫ টাকা বেড়েছে।
ট্যারিফ কমিশনের হিসাবে দেশে পেঁয়াজের বার্ষিক চাহিদা ২৪ লাখ টন। চাহিদার বিপরীতে দেশের উৎপাদন হয় ১২ থেকে ১৩ লাখ টন পেঁয়াজ। বাকি ১০ থেকে ১১ লাখ টন পেঁয়াজ আমদানি করতে হয়, যার বেশিরভাগই আসে ভারত থেকে।
এদিকে বাজারে পেঁয়াজের মূল্য অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাওয়ায় বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশির নির্দেশে ন্যায্যমূল্যে ট্রাকে মঙ্গলবার (১৭ সেপ্টেম্বর) থেকে ৪৫ টাকা দরে আমদানি পেঁয়াজ বিক্রি করছে টিসিবি।
এ বিষয়ে রোববার টিসিবির মুখপাত্র মো. হুমায়ুন কবির জাগো নিউজকে বলেন, পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে রাজধানীর বিভিন্ন স্পটে পেঁয়াজ বিক্রি করা হচ্ছে। প্রথমে পাঁচটি স্পটে এ কার্যক্রম শুরু হয়। পর্যায়ক্রমে তা বাড়িয়ে আজ (রোববার, ২২ সেপ্টেম্বর) থেকে ১০টি ট্রাক ২০টি স্পটে ন্যায্যমূল্যে পেঁয়াজ বিক্রি করা হচ্ছে। একজন ডিলার ৪৫ টাকা কেজি দরে প্রতিদিন এক হাজার কেজি পেঁয়াজ বিক্রি করছে।
রোববার রাজধানীর যেসব স্থানে টিসিবি পেঁয়াজ বিক্রি করছে সেগুলো হলো- জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে, সৈনিক ক্লাব, জুরাইন পোস্তগোলা, মিরপুর ৬০ ফিট, আনসার ক্যাম্প, মোহাম্মদপুর, বশিলা, নিউ মার্কেট, ছাবড়া মসজিদ, আজমপুর, উত্তরা, রামপুরা, বনশ্রী, মতিঝিল বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনে, দিলকুশা বক চত্বর, কামরাঙ্গীরচর, রায়েরবাজার বধ্যভূমি, মিরপুর ১০ ও কচুক্ষেত এলাকা।
মতিঝিল বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনে পেঁয়াজ বিক্রি করছে টিসিবির ডিলার নবী মিয়া। জাগো নিউজকে তিনি জানান, সকাল ১০টা থেকে পেঁয়াজ বিক্রি করছি, ভালোই বিক্রি হচ্ছে। এক টন পেঁয়াজের মধ্যে আর দুই বস্তা আছে, আধা ঘণ্টার মধ্যে বিক্রি হয়ে যাবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনে থেকে ন্যায্যমূল্যে পেঁয়াজ কিনতে লাইনে দাঁড়িয়েছেন বেসরকারি চাকরিজীবী আব্দুল রশিদ। তিনি বলেন, গত দুই সপ্তাহে ৪০ টাকার পেঁয়াজ ৮০ টাকা হয়ে গেছে। পেঁয়াজ প্রতিদিনই প্রয়োজন। তাই দাম বাড়লেও কিনতে হয়। মতিঝিলে এসেছি, কম দামে পেলাম তাই কিনে নিলাম। তবে এটি সব জায়গায় পাওয়া গেলে ভালো হত। কারণ, এখানে কয়জন কিনবে? এলাকায় বিক্রি করলে বাজারের এর প্রভাব পড়ত।
এসআই/আরএস/এমএস