অর্থমন্ত্রী বসলেন, উঠল শেয়ারবাজার
পুঁজিবাজারের উন্নয়নের লক্ষ্যে অংশীজনদের সাথে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সভার সুফল দেখা মিলেছে দেশের শেয়ারবাজারে। অর্থমন্ত্রীর সভার খবর প্রকাশ হওয়ার পর রোববারই সূচকের ঊর্ধ্বমুখিতার দেখা মিলে। সোমবার (১৬ সেপ্টেম্বর) অর্থমন্ত্রী অংশীজনদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় বসার পর বড় ধরনের উত্থানের আভাস দেয় শেয়ারবাজার। যদিও লেনদেন শেষে ছোট ধরনের উত্থান হয়েছে।
শেয়ারবাজারের চলমান মন্দা অবস্থা থেকে ফিরিয়ে আনতে বেলা ১১টায় রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে অংশীজনদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় বসেন অর্থমন্ত্রী।
সভায় বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ও ডেপুটি গভর্নর, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান, বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) চেয়ারম্যান, ফিন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং কাউন্সিলের চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের চেয়ারম্যান, ইনভেস্টমেন্ট কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) চেয়ারম্যান এবং সাধারণ বীমা কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান, সোনালী, অগ্রণী, জনতা, রূপালী ও আইসিবি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) চেয়ারম্যান ও পরিচালনা পর্ষদের সদস্যরা অংশ নেন।
সভার শুরুতে অর্থমন্ত্রী বলেন, আজ সবাইকে আশ্বস্ত করব যে, আমরা পুঁজিবাজারকে সুশাসন দেব এবং গভর্ন্যান্সে ভালো করব। যেসব ত্রুটি-বিচ্যুতি আছে, মিসম্যাচ আছে সেগুলো আমরা টেককেয়ার করব। এভাবে পুঁজিবাজার আমাদের অর্থনৈতিক এলাকায় শক্তিশালীভাবে রূপান্তরিত হবে।
তিনি বলেন, আমরা আজকে পুঁজিবাজার নিয়ে আলোচনা করব। আলোচনা করার জন্য আমাদের সব বিশেষজ্ঞ, যারা পুঁজিবাজারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট, পুঁজিবাজার নিয়ে চিন্তা করেন, তাদের আমরা আমন্ত্রণ জানিয়েছি। এ আলোচনা থেকে আমরা কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করব। পরবর্তীতে আমরা আরেকটি সভা করব, সেখানে এর অগ্রগতি নিয়ে আলোচনা করব। আমাদের মার্কেট ফান্ডামেন্টাল অনেক বেশি শক্তিশালী, পুঁজিবাজারকেও আমরা সেখানে দেখতে চাই।
অর্থমন্ত্রীর এ বক্তব্যের পর শেয়াবাজারে বড় উত্থানের আভাস দেখা দেয়। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ডিএসইর প্রধান মূল্য সূচক ডিএসইএক্স প্রায় ৩০ পয়েন্ট বেড়ে যায়। তবে লেনদেনের শেষ দিকে এসে সূচকের ঊর্ধ্বমুখী ছিল তুলনামূলক কম।
ফলে দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইর প্রধান মূল্য সূচক ডিএসইএক্স আগের কার্যদিবসের তুলনায় ১৭ পয়েন্ট বেড়ে ৪ হাজার ৯৫৯ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। বাকি দুটি সূচকের মধ্যে ডিএসই শরিয়াহ্ ১ পয়েন্ট বেড়ে ১ হাজার ১৫৫ পয়েন্টে অবস্থান করছে। আর ডিএসই-৩০ সূচক ১৬ পয়েন্ট বেড়ে ১ হাজার ৭৫৫ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।
সব সূচকের পাশাপাশি ডিএসইতে লেনদেনে অংশ নেয়া বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বেড়েছে। দিনভর বাজারটিতে অংশ নেয়া ১৬১টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বাড়ার বিপরীতে কমেছে ১৩৬টির। আর ৫৬টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।
শেয়ারবাজারের লেনদেন যখন শেষ হয় তখনও চলছিল অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে অংশীজনদের মতবিনিময় সভা। এর মধ্যে দুপুর আড়াইটার দিকে সভা থেকে বেরিয়ে আসেন এনবিআর চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, বর্তমানে দেশের পুঁজিবাজারের যে অবস্থা, এভাবে চলতে দেয়া যায় না। এটা নিশ্চয় উন্নতি করতে হবে। প্রয়োজন হলে এর চেয়ে বেশি ট্যাক্স সুবিধা দেয়া হবে।
এক প্রশ্নের জবাবে মোশাররফ হোসেন বলেন, দু-একটি বিষয়ে কথাবার্তা হয়েছিল যে, বিদেশি যেসব প্রতিষ্ঠান আছে, তারা হয়তো চলে যাবে। আমি বলেছি, কোনোভাবেই তারা চলে যাবে না। প্রয়োজনে হলে মধ্যস্থতা করে আমরা তাদেরকে রাখব।
এদিকে মূল্য সূচকের পাশাপাশি ডিএসইতে বেড়েছে লেনদেনের পরিমাণ। তবে লেনদেনের পরিমাণ তিনশ’ কোটি টাকার ঘরেই রয়েছে। দিনভর বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ৩৮৮ কোটি ৮০ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয়েছিল ৩১৭ কোটি ৮ লাখ টাকার। সে হিসাবে লেনদেন বেড়েছে ৭১ কোটি ৭২ লাখ টাকা।
বাজারটিতে টাকার পরিমাণে সব থেকে বেশি লেনদেন হয়েছে মুন্নু জুট স্টাফলার্স’র শেয়ার। কোম্পানিটির ৩৩ কোটি ৪৬ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা ন্যশনাল টিউবসের শেয়ার লেনদেন হয়েছে ২১ কোটি ১৮ লাখ টাকার। ১৩ কোটি ৪ লাখ টাকার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে স্টাইল ক্রাফট।
লেনদেনের শীর্ষ ১০ কোম্পানির মধ্যে রয়েছে- মুন্নু সিরামিক, বিকন ফার্মাসিউটিক্যাল, বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশন, জেএমআই সিরিঞ্জের, ব্রিটিশ আমেরিকান টোবাকো, লিগাসি ফুটওয়্যার এবং ভিএফএস থ্রেড ডাইং।
দেশের অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ৮৯ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৫ হাজার ৬২ পয়েন্টে। বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ৩৩ কোটি ৫২ লাখ টাকা। লেনদেন অংশ নেয়া ২৪৭টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে দাম বেড়েছে ১২৫টির, কমেছে ৮৬টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৩৬টির।
এমএএস/আরএস/জেআইএম