খুদে শিক্ষার্থীদের সঞ্চয় দেড় হাজার কোটি টাকা
বেড়েই চলছে খুদে শিক্ষার্থীদের সঞ্চয়ের পরিমাণ। স্কুল ব্যাংকিংয়ের আওতায় শিক্ষার্থীদের হিসাব ছাড়িয়েছে ১৯ লাখ ৯৬ হাজার। এসব হিসাবে সঞ্চয় দাঁড়িয়েছে প্রায় এক হাজার ৫০০ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের (জুন-১৯) হালনাগাদ প্রতিবেদনে এসব ওঠে এসেছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শিক্ষার্থীদের সঞ্চয়ের অভ্যাসে উৎসাহিত করতে বাংলাদেশ ব্যাংকের উদ্যোগে চালু হয় স্কুল ব্যাংকিং কার্যক্রম। এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা যেমন উপকৃত হচ্ছে, তেমনি বাণিজ্যিক ব্যাংকেরও আমানতের পাল্লা ভারী হচ্ছে। এছাড়া ব্যাংকের মাধ্যমে তাদের সঞ্চিত টাকা বিনিয়োগ হয়ে জাতীয় অর্থনীতিতে অবদান রাখছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৯ সালের জুন শেষে দেশের ৫৬টি বাণিজ্যিক ব্যাংকে স্কুল ব্যাংকিংয়ের আওতায় ১৯ লাখ ৯৬ হাজার ৩০টি হিসাব খুলেছে ক্ষুদে শিক্ষার্থীরা। এসব হিসাবের বিপরীতে স্কুলের শিক্ষার্থীদের সঞ্চয়ের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৪৯৪ কোটি ৪০ লাখ টাকা।
এ মধ্যে শহরের স্কুলের শিক্ষার্থীদের খোলা হিসাবের সংখ্যা ১২ লাখ ২৫ হাজার ৪টি। আর গ্রামের শিক্ষার্থীদের রয়েছে ৭ লাখ ৭১ হাজার ২৬টি হিসাব।
স্কুল ব্যাংকিংয়ে হিসাব খোলার ক্ষেত্রে এগিয়ে আছে ছাত্ররা। মোট হিসাবের মধ্যে ১১ লাখ ৩৮ হাজার ৮০ বা ৫৭ শতাংশ ছাত্র ও ৮ লাখ ৫৭ হাজার ৯৫০টি বা ৪৩ শতাংশ হিসাব ছাত্রীদের।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, স্কুল ব্যাংকিংয়ে হিসাব খোলার ক্ষেত্রে এগিয়ে আছে বেসরকারি ব্যাংকগুলো। জুন শেষে বেসরকারি খাতের ব্যাংকগুলোর হিসাব সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৩ লাখ ৮৭ হাজার ৭২৫টি। আর এসব হিসাবে মোট সঞ্চয় এক হাজার ২৩৭ কোটি ৭৫ লাখ টাকা।
এছাড়া রাষ্ট্রীয় মালিকানার বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে ৪ লাখ ৭৪ হাজার ৯৮টি হিসাব খোলা হয়েছে। এসব হিসাবের বিপরীতে সঞ্চয় দাঁড়িয়েছে ১৯৮ কোটি ৪৭ লাখ টাকা।
আলোচিত সময়ে সবচেয়ে বেশি হিসাব খোলা হয়েছে ইসলামী ব্যাংকে ৩ লাখ ৬৯ হাজার ৬২৩টি। যা মোট হিসাবের ১৮ দশমিক ৫২ শতাংশ। এরপরে রয়েছে ডাচ-বাংলা ৩ লাখ ৬৮ হাজার ৪৩৫টি, অগ্রণী ব্যাংকের ২ লাখ ২০ হাজার ৪৯টি হিসাব। এছাড়া রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকে ১ লাখ ৭ হাজার ১০২টি এবং উত্তরা ব্যাংকে ৮৯ হাজার ৩৬১টি হিসাব রয়েছে।
অন্যদিকে টাকা জমার দিক থেকে শীর্ষে রয়েছে ডাচ-বাংলা ব্যাংক, ৪৬৫ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। যা মোট স্থিতির ৩১ দশমিক ১৭ শতাংশ। এরপরে রয়েছে ইস্টার্ন ব্যাংক, ১২৭ কোটি ৮২ লাখ টাকা; ঢাকা ব্যাংকে ৮৬ কোটি ৭৪ লাখ, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের ৮৪ কোটি ৬৮ লাখ এবং ইসলামী ব্যাংকে ৭৩ কোটি ৪৮ লাখ টাকার স্থিতি রয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ‘ফাইন্যান্সিয়াল ইনক্লুশন ডিপার্টমেন্ট’-এর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেন, শিক্ষার্থীদের ব্যাংকমুখী করে সঞ্চয়ের অভ্যাস গড়ে তোলার ক্ষেত্রে স্কুল ব্যাংকিং কার্যক্রম ব্যাপক ভূমিকা রাখছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে স্কুল ব্যাংকিং কার্যক্রম ছড়িয়ে দিতে বিভিন্ন সময় প্রচারণামূলক কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এর মাধ্যমে ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে সঞ্চয়ের মনোভাব বৃদ্ধি পাচ্ছে।
২০১০ সালে সঞ্চয়ে উদ্বুদ্ধ করতে ‘স্কুল ব্যাংকিং’ কার্যক্রম শুরু হলেও শিক্ষার্থীরা টাকা জমা রাখার সুযোগ পায় ২০১১ সালে। স্কুল ব্যাংকিং কার্যক্রমের মাধ্যমে শিশু-কিশোরদের মধ্যে আর্থিক সেবা পৌঁছে দেয়ার স্বীকৃতি হিসেবে ২০১৫ সালে ‘চাইল্ড অ্যান্ড ইউথ ফাইন্যান্স ইন্টারন্যাশনাল’র (সিওয়াইএফআই) ‘কান্ট্রি অ্যাওয়ার্ড’ পুরস্কারে ভূষিত হয় বাংলাদেশ।
এসআই/আরএস/এমএস