পুলিশকে সহজ শর্তে ঋণ দেবে ‘কমিউনিটি ব্যাংক’

জাগো নিউজ ডেস্ক
জাগো নিউজ ডেস্ক জাগো নিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৭:২৬ পিএম, ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৯

চালু হচ্ছে বাংলাদেশ পুলিশ কল্যাণ ট্রাস্টের মালিকানাধীন ‘কমিউনিটি ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড (সিবিবিএল)’। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বুধবার (১১ সেপ্টেম্বর) সকালে ব্যাংকটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন।

ব্যাংকটি পুলিশের অর্থায়নে গঠিত। তাই সুযোগ-সুবিধা দেয়ার ক্ষেত্রে পুলিশ সদস্যদের অগ্রাধিকার দেয়া হবে। সহজ শর্তে গৃহঋণসহ অন্য ঋণ দেয়া হবে। এছাড়া বিশেষ ধরনের আমানত ও ঋণ পণ্য চালু করবে। থাকবে আকর্ষণীয় সব অফার।

মঙ্গলবার (১০ সেপ্টেম্বর) জাগো নিউজের সঙ্গে আলাপকালে এসব তথ্য জানান ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মশিউহুল হক চৌধুরী।

কমিউনিটি ব্যাংকের এমডি বলেন, ব্যাংকটির মালিকানায় রয়েছে বাংলাদেশ পুলিশ কল্যাণ ট্রাস্ট। এ ব্যাংকের যে মুনাফা হবে তার বেশিরভাগ ব্যয় করা হবে পুলিশ সদস্যদের কল্যাণে। অর্থাৎ তাদের চিকিৎসা, সন্তানদের শিক্ষাসহ বিভিন্ন খাতে।

তিনি বলেন, এখানে ব্যাংকিং সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা দেয়ার ক্ষেত্রে পুলিশ সদস্যদের অগ্রাধিকার দেয়া হবে। তাদের সহজ শর্তে গৃহঋণ দেয়া হবে। সদস্যদের সক্ষমতা অনুযায়ী ঋণ পাবেন। এছাড়া অন্য ঋণও সহজ শর্তে দেয়া হবে। পাশাপাশি পুলিশ সদস্যদের জন্য বিশেষ ধরনের আমানত ও ঋণ পণ্য চালু করা হবে। যেখানে অন্য ব্যাংকের চেয়ে তারা বেশি সুবিধা পাবেন।

এমডি মশিউহুল হক চৌধুরী বলেন, ইতিমধ্যে ব্যাংকের প্রয়োজনীয় লোকবল নিয়োগসহ টেকনিক্যাল সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছি। বুধবার সকাল ৯টায় রাজারবাগ পুলিশ লাইন্স অডিটোরিয়ামে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ব্যাংকটির উদ্বোধন করবেন। এরপর থেকেই ব্যাংকের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হবে। এছাড়া প্রধানমন্ত্রী যদি ইচ্ছা পোষণ করেন তাহলে তার হিসাব খোলার (অ্যাকাউন্ট) মাধ্যমে ব্যাংকের কার্যক্রম শুরু করা হবে বলেও জানান তিনি।

southeast

ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মশিউহুল হক চৌধুরী

নতুন এ ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, যেহেতু কমিউনিটি ব্যাংক একটি তফসিলি বাণিজ্যিক ব্যাংক। তাই এখানে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী থেকে শুরু করে শিল্পপ্রতিষ্ঠান সবাইকে আধুনিক ব্যাংকিং সেবা দেয়া হবে। এখানে পুলিশ সদস্যদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষও ব্যাংক হিসাব খুলতে পারবেন। কমিউনিটি ব্যাংক গ্রহককে সর্বাধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে সর্বোত্তম সেবা প্রদান করবে বলে জানান তিনি।

সংশ্লিষ্টরা জানান, ব্যাংকটির প্রধান কার্যালয় হবে রাজধানীর গুলশান-১ নম্বরে হাতিরঝিল সংলগ্ন পুলিশ প্লাজায়। এ ছাড়া প্রিন্সিপাল শাখাসহ মোট ছয়টি শাখা দিয়ে প্রথমে এ ব্যাংকের কার্যক্রম শুরু হবে। পর্যায়ক্রমে শাখা বাড়ানো হবে।

জানা গেছে, বিদ্যমান ব্যাংকগুলোকে পুলিশ, সাংবাদিক ও অ্যাডভোকেটদের ঋণ দেয়ার ক্ষেত্রে অলিখিত বিধিনিষেধ রয়েছে। ফলে নিচের পদের পুলিশ সদস্যরা ব্যাংক ঋণ নিতে চাইলেও পান না। তবে এখন পুলিশের ঋণের চাহিদা সহজ শর্তে পূরণ করবে কমিউনিটি ব্যাংক।

এদিকে ২০১৮ সালে রাজনৈতিক বিবেচনায় পুলিশ বাহিনীকে ‘কমিউনিটি ব্যাংক অব বাংলাদেশ’ দেয়া হয়। ওই বছর নভেম্বরে ব্যাংকটিকে তফসিলি ব্যাংক হিসেবে তালিকাভুক্ত করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ফলে সরকারি-বেসরকারি মিলে দেশে তফসিলি ব্যাংকের সংখ্যা দাঁড়ায় ৫৯টিতে।

আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকারের টানা তিন মেয়াদে ১৩টি নতুন ব্যাংক অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে দেশি ও প্রবাসী উদ্যোক্তারা ১১টি এবং বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) একটি ব্যাংক (সীমান্ত ব্যাংক) পেয়েছে। সর্বশেষ পেল পুলিশ কল্যাণ ট্রাস্টের মালিকানায় কমিউনিটি ব্যাংক বাংলাদেশ।

গত বছরের মার্চে ব্যাংকটির অনুমোদন চেয়ে পুলিশ সদর দফতরের কল্যাণ ট্রাস্ট বাংলাদেশ ব্যাংকে আবেদন করে। পরে ২৮ আগস্ট ‘কমিউনিটি ব্যাংক বাংলাদেশ’ নামে পুলিশকে ব্যাংকের অনুমোদন দিতে নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। গত ২৯ অক্টোবর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সভায় কমিউনিটি ব্যাংকের চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হয়।

bank1.jpg

এর আগে, বাংলাদেশ পুলিশ বাণিজ্যিকভাবে এ ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করতে ২০১৭ সাল থেকে কল্যাণ ট্রাস্টের মাধ্যমে মূলধনের ৪০০ কোটি টাকা সংগ্রহ শুরু করে। পুলিশ সদস্যদের কাছ থেকে গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে মূলধন সংগ্রহ শেষ হয়। গুলশানে পুলিশ প্লাজা কনকর্ডে করা হয়েছে ব্যাংকটির প্রধান কার্যালয়। মিডল্যান্ড ব্যাংকের সাবেক ডিএমডি মশিউহুল হক চৌধুরীকে ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়।

কমিউনিটি ব্যাংকের মাধ্যমে সারা দেশে পুলিশ সদস্যদের বেতন দেয়া হবে। আপাতত পুলিশ সদস্যরাই হবেন এ ব্যাংকের শেয়ার হোল্ডার। এর লভ্যাংশ যাবে পুলিশ কল্যাণ ট্রাস্টের অ্যাকাউন্টে। ট্রাস্টের মাধ্যমে ওই টাকা ব্যয় হবে পুলিশ সদস্যদের কল্যাণে। ব্যাংক লাভজনক হলে তিন বছর পর মূলধন জোগানের ওপর প্রত্যেকে নির্ধারিত হারে লভ্যাংশ পাবেন। এ ছাড়া পুলিশ সদস্যদের জমি ক্রয়, বাড়ি নির্মাণ, ব্যবসা উদ্যোগসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে স্বল্প সুদে ঋণ সুবিধা দেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।

ব্যাংকের মাধ্যমে পুলিশ কল্যাণ ট্রাস্টের আয় বাড়লে সদস্য ও তাদের পরিবারের চিকিৎসায় আর্থিক সহায়তা বর্তমানের চেয়ে বাড়ানো হবে। সদস্যরা অবসর সুবিধা, সন্তানের শিক্ষাবৃত্তি, কারিগরি শিক্ষাবৃত্তি, ডে-কেয়ার সেন্টার স্থাপনসহ বিভিন্ন সুবিধা পাবেন এ ব্যাংকের মাধ্যমে। অন্য অনেক সংস্থার মতো পুলিশের নিজস্ব ব্যাংক প্রতিষ্ঠার পর সঠিক ও স্বচ্ছ লেনদেনের কারণে জনগণের মধ্যে পুলিশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হবে বলেও মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

উল্লেখ, পুলিশ সদস্যদের জন্য একটি ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করতে ২০১৬ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে প্রস্তাবনা দেন পুলিশের তৎকালীন আইজি একেএম শহীদুল হক। প্রধানমন্ত্রী তখন বলেছিলেন, মূলধনের টাকা জোগাড় করতে পারলে সরকারের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। এরপরই ব্যাংক প্রতিষ্ঠার জন্য মূলধন সরবরাহের কাজ শুরু করে পুলিশ সদর দফতর। পুলিশ কল্যাণ ট্রাস্টের মাধ্যমে প্রায় এক লাখ ৬৬ হাজার পুলিশ সদস্যদের কাছ থেকে এ টাকা সংগ্রহ করা হয়।

এসআই/এএইচ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।