ঋণখেলাপিদের বিশেষ সুবিধার আবেদনের সময় বাড়ল
ঋণখেলাপিদের নিয়মিত হওয়ার সুযোগ দিতে নতুন করে আবেদনের সময় বাড়িয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। মাত্র ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট দিয়েই ঋণ পুনঃতফসিল করতে পারবেন খেলাপিরা। এতে সুদহার হবে সর্বোচ্চ ৯ শতাংশ। এক বছরের ঋণ পরিশোধে বিরতিসহ ১০ বছরের মধ্যে বাকি টাকা শোধ করতে পারবেন। আবার ব্যাংক থেকে নতুন করে ঋণও নিতে পারবেন।
বর্ধিত সময় অনুযায়ী, আগামী ২০ অক্টোবর পর্যন্ত ঋণ পুনঃতফসিলের জন্য আবেদন করতে পারবে খেলাপিরা। এর আগে আবেদনের শেষ সময় নির্ধারণ ছিল ৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত।
গত ২৯ আগস্ট সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট ডিভিশ সময়সীমা বাড়ানোর আদেশ দেন। ওই আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে মঙ্গলবার ঋণ পুনঃতফিসল ও এককালীন এক্সিট সংক্রান্ত বিশেষ নীতিমালায় ঋণগ্রহীতার আবেদনের সময় বাড়িয়ে সার্কুলার জারি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংকের ‘ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ’।
বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের কাছে পাঠানো সার্কুলারে বলা হয়, ‘পুনঃতফসিলের সুবিধা নিতে বিআরপিডি সার্কুলার নং- ০৫/২০১৯ এর আওতায় ঋণগ্রহীতাদের আবেদনের সময়সীমা ৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু মহামান্য সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট ডিভিশনের ২৯ আগস্টের আদেশের আলাকে আবেদনের এ সীমা চলতি বছরের ২০ অক্টোবর পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। তবে, প্রদত্ত আদেশ অনুযায়ী উক্ত সময়ে বিআরপিডি সার্কুলার নং- ০৫/২০১৯ এর আওতায় পুনঃতফসিল/এককালীন এক্সিট সুবিধাপ্রাপ্ত ঋণগ্রহীতাদের অনুকূলে কোনো নতুন ঋণ সুবিধা প্রদান করা যাবে না’ বলে সার্কুলারে উল্লেখ করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
এর আগে, ১৬ মে বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ থেকে ঋণ পুনঃতফসিল ও এককালীন এক্সিট সংক্রান্ত বিশেষ নীতিমালা জারি করা হয়। এতে মাত্র ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্টে ৯ শতাংশ সরল সুদে এক বছরের গ্রেস পিরিয়ডসহ টানা ১০ বছরে ঋণ পরিশোধের সুযোগ দেয়া হয়। যা নিয়ে বিভিন্ন মহলের নিন্দা ও তীব্র প্রতিক্রিয়া দেয়।
ওই সার্কুলারের স্থগিতাদেশ চেয়ে মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের পক্ষ থেকে আদালতে একটি রিট দায়ের করা হয়।
বিশেষ এ সুবিধায় ঋণখেলাপিরা ব্যাংক থেকে আবারও নতুন করে ঋণ নিতে পারবেন। প্রচলিত নিয়ম মেনে সতর্কতার সঙ্গে ঋণ দিতে বলা হয়েছে সার্কুলারে। নতুন ঋণের কিস্তি পরিশোধ না করলে পুনঃতফসিল সুবিধা বাতিল হবে।
সুবিধাগ্রহণের পর নিয়মিত অর্থ পরিশোধ না করলেও তাদের খেলাপি করা যাবে না। এখানে ছাড় দেয়া হয়েছে। ৯টি মাসিক কিস্তির ৩টি এবং ত্রৈমাসিক ৩ কিস্তির ১টি পরিশোধ না করলেও নিয়মিত থাকা যাবে। তবে মাসিক কিস্তির মধ্যে ৬টি ও ত্রৈমাসিক কিস্তির ২টি পরিশোধ না করলে পুনঃতফসিল সুবিধা বাতিল করা হবে।
স্বাধীনতার পর থেকে যারা ঋণখেলাপি তাদের এককালীন এক্সিট সুবিধা দেয়া হবে। এক্ষেত্রে তাদের খেলাপি ঋণের হিসাব হবে ২০১৮ সালের ৩১ ডিসেম্বরের এককালীন হিসাবায়ন ভিত্তিতে।
অর্থাৎ ১৯৭১ সালের পর থেকে ২০১৮ সালের ৩১ ডিমেম্বর পর্যন্ত যত খেলাপি ঋণ আছে তার হিসাব করা হবে। কোনো ঋণখেলাপি যদি মনে করেন এককালীন ঋণ পরিশোধ করে খেলাপির তালিকা থেকে বেরিয়ে যাবেন, তাহলে সে ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে সার্কুলারে।
এতে আরও বলা হয়েছে, ২ শতাংশ ডাউনপেমেন্টে ঋণখেলাপিরা ঋণ পরিশোধের জন্য এক বছর পর্যন্ত সময় পাবেন। আগের সব সুদবাবদ পাওনা মওকুফ করা হবে। এককালীন পরিশোধের জন্য সুদহার আরও কম- ব্যাংকের কস্ট অব ফান্ডের সমান। তবে এক বছরের মধ্যে টাকা পরিশোধ না করলে সুবিধা বাতিল হবে।
এককালীন এ এক্সিট সুবিধা ও পুনঃতফসিল সুবিধা কার্যকরের ৯০ দিনের মধ্যে ব্যাংক ও গ্রাহকের মামলা স্থগিত করতে হবে। পরবর্তীতে গ্রাহক কোনো শর্ত ভঙ্গ করলে সুবিধা বাতিল করে মামলা পুনরায় চালু হবে।
এসআই/এমএআর/এমএস