‘অস্বাভাবিক’ ব্যাংক হিসাব, উচ্চ ঝুঁকিতে প্রগ্রেসিভ লাইফ

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৪:৩৩ পিএম, ০২ সেপ্টেম্বর ২০১৯

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত প্রগ্রেসিভ লাইফ ইন্স্যুরেন্সের অ্যাকাউন্টস ও ডকুমেন্টস রক্ষণাবেক্ষণের ক্ষেত্রে ব্যাংক হিসাবের অস্বাভাবিক তথ্য পেয়েছে নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান। একইসঙ্গে কোম্পানিটির অভ্যন্তরীণ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা ও কমপ্লায়েন্স পরিপালন নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে নিরীক্ষক।

জীবন বীমা কোম্পানিটির সার্বিক চিত্র পর্যালোচনা করে নিরীক্ষক অভিমত দিয়েছে কোম্পানিটির ব্যবসা পরিচালনায় উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে। প্রগ্রেসিভ লাইফের ২০১৩, ২০১৪ ও ২০১৫ সালের আর্থিক হিসাব নিরীক্ষায় এমন অভিতম দিয়েছে নিরীক্ষক। সোমবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) থেকে এ তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে।

নিরীক্ষকের দেয়া আপত্তির তথ্য তুলে ধরে ডিএসই জানিয়েছে, কোম্পানির রিপোর্টস অ্যাকাউন্টস ও ডকুমেন্টস রক্ষণাবেক্ষণের ক্ষেত্রে ব্যাংক হিসাবে পার্থক্য দেখা দিয়েছে। ২০১২ সালের নিরীক্ষত আর্থিক হিসাব অনুযায়ি, ব্যাংক হিসাবের সংখ্যা ছিল ১১০৬টি। কিন্তু ডকুমেন্টস রক্ষণাবেক্ষণের জন্য নথিভুক্ত ব্যাংক হিসাব নাম্বার ছিল ১০২৩টি।

কোম্পানির ২০১২ সালের আর্থিক বিবরণীতে ১১০৬টি ব্যাংক হিসাব দেখানো হলেও তার তালিকা নিরীক্ষককে দেয়া হয়নি। এছাড়া অতিরিক্ত ব্যাংক হিসাবের বিষয়ে কোম্পানি কর্তৃপক্ষ নিরীক্ষককে সন্তোষজনক ব্যাখ্যা দিতে পারেনি। ফলে ওই অতিরিক্ত ৮৩ ব্যাংক হিসাবে থাকা অর্থের সত্যতা যাছাই করা সম্ভব হয়নি- বলে অভিমত দিয়েছে নিরীক্ষক।

নিরীক্ষক জানিয়েছেন, প্রগ্রেসিভ লাইফের আর্থিক হিসাবে চট্টগ্রামে ৩ কোটি ৪৭ লাখ টাকার একটি ফ্ল্যাট দেখানো হয়েছে। যার মালিকানা নিয়ে বিতর্ক ও আইনি প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। এছাড়া কোম্পানি ওই ফ্ল্যাট দখলেও নিতে পারেনি। তারপরেও আর্থিক বিবরণীতে সম্পদ হিসাবে দেখিয়েছে। এতে বিএএস-১ এর ৬ ধারার মূলধন নীতিমালার বিচ্যুতি হয়েছে।

নিরীক্ষক আরও অভিমত দিয়েছে, প্রগ্রেসিভ লাইফ ৫১ শতাংশ মালিকানা ধারন করছে গ্যালাক্সি লিমিটেডের। এই ৫১ শতাংশ শেয়ারে বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল ৩ কোটি ৯ লাখ টাকা। তবে এই বিনিয়োগের জন্য ইন্স্যুরেন্স আইন অনুযায়ি নিয়ন্ত্রক সংস্থার অনুমোদন নিতে হলেও, সেই অনুমোদনের কোনো প্রমাণাদি দেখাতে পারেনি কোম্পানি কর্তৃপক্ষ।

এছাড়া গ্যালাক্সি ক্যাপিটাল সাবসিডিয়ারি কোম্পানি হওয়ার পরও প্রগ্রেসিভ লাইফ কর্তৃপক্ষ সমন্বিত আর্থিক হিসাব তৈরি করেনি। এর ফলে বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং স্ট্যান্ডার্ড ১০ লঙ্ঘন হয়েছে।

প্রগ্রেসিভ লাইফ থেকে গ্যালাক্সি ক্যাপিটালের অপারেশনাল কাজ করার জন্য বিভিন্ন সময় ঋণ দেয়া হয়েছে জানিয়ে নিরীক্ষকের অভিমতে বলা হয়েছে, কোম্পানি কর্তৃপক্ষ ঋণ প্রদানের জন্য নিরীক্ষককে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমোদন দেখাতে পারেনি। এতে ইন্স্যুরেন্স আইন ২০১০ এর ধারা ৪৪ (৩) লঙ্ঘন হয়েছে।

এছাড়া প্রদত্ত ঋণের বিপরীতে ২০১৩, ২০১৪ ও ২০১৫ সালে অর্জিত সুদকে বিবেচনায় নেয়া হয়নি। আর ২০১২ সাল পর্যন্ত সময়ের অর্জিত সুদ এখনো আদায় করা সম্ভব হয়নি বলেও জানিয়েছে নিরীক্ষক।

প্রগ্রেসিভ লাইফ অতিরঞ্জিত মুনাফা দেখায় বলেও অভিমত দিয়েছে নিরীক্ষক। এ বিষয়ে বলা হয়েছে, আর্থিক হিসাবের নোট ৯.০১ অনুযায়ি, প্রগ্রেসিভ লাইফ ট্যাক্সের জন্য সঠিক সঞ্চিতি গঠন করে না। তারা লাম-সাম ভিত্তিতে ট্যাক্স সঞ্চিতি গঠন করে। যা প্রয়োজনের তুলনায় কম হওয়ায় অতিরঞ্জিত মুনাফা দেখানো হয়।

কোম্পানিটির শাখা অফিসের নগদ অর্থের বিষয়েও আপত্তি জানিয়েছে নিরীক্ষক। এ বিষয়ে নিরীক্ষকের অভিমতে বলা হয়েছে, নিরীক্ষককে শাখা অফিসের নগদ অর্থের কোনো সনদ দেয়নি কোম্পানি কর্তৃপক্ষ। ফলে নিরীক্ষক শাখা অফিসগুলোর নগদ অর্থের সত্যতা যাছাই করতে পারেনি।

এমএএস/জেএইচ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।