খেলাপি ঋণ কমবে, আশা অর্থমন্ত্রীর
অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা ও রাজনৈতিক হস্তক্ষেপে বিতরণ হচ্ছে ব্যাংক ঋণ, যা ঠিকমতো আদায় হচ্ছে না। ফলে বিপাকে পড়ছে ব্যাংক। নানা উদ্যোগেও খেলাপি ঋণের লাগাম টানতে পারছে না কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
গত এক বছরের ব্যবধানে খেলাপি ঋণ বেড়েছে প্রায় ২২ হাজার কোটি টাকা। এ অবস্থায়ও খেলাপি ঋণ কমবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
তিনি বলেন, খেলাপি ঋণ কমাতে যেসব উদ্যোগ নিয়েছি সেগুলোর বাস্তবায়ন শুরুই করতে পারিনি। এসব উদ্যোগ বাস্তবায়ন হলে খেলাপি ঋণ কমবে, ব্যবসায়ীরাও উপকৃত হবেন।
বুধবার (২৮ আগস্ট) সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ কক্ষে সরকারি ক্রয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠক শেষে সাংবদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘আমি আপনাদের সব সময় বলি যে, আপনারা আমাদের ওপর বিশ্বাস রাখবেন। এটা এখন আমার ট্রেড মার্ক শব্দ। গত ১০ বছরে যা বলেছি এখন পর্যন্ত তার ব্যত্যয় হয়নি। আপনারা হয়তো বলতে পারেন ঋণ খেলাপি তো কমছে না। আসলে খেলাপি ঋণ কমানোর জন্য কাজ শুরুই করতে পারিনি। আমাদের যে আইডিয়া ছিল সেটা বাস্তবায়ন করতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘একদিকে আমার বিশ্বাস, অন্যদিকে ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা আর হচ্ছে আমার লেখাপড়া, এখন আপনারা ১৪ থেকে ১৬ শতাংশ ইন্টারেস্ট কাউন্ট করবেন, এটাতো কেউ দিচ্ছে না, এরা খেলাপি হচ্ছে। এভাবে খেলাপি বানিয়ে লাভ কি? পৃথিবীর কোনো দেশেই এ রকম সুদ নেই।’
‘আর একটা হলো কম্পাউন্ড ইন্টারেস্ট থেকে সিম্পল ইন্টারেস্টে আসতে হবে। এগুলো করে শুধু ব্যালেন্স শিটের সাইজটাকে ওভারস্ট্রিট করা হয় এবং আদায় না হওয়া সম্পদ বাড়ানো হয়। এটা ব্যাংক, গ্রাহক, সরকার, বাংলাদেশ ব্যাংক কারও জন্যই ভালো নয়। এগুলো সংশোধনে আমরা যা করতে আরম্ভ করেছি এটা বাস্তবায়ন হলে আপনারা দেখতে পারবেন ব্যবসায়ী, ব্যাংক, সরকার সবাই একটা উইন উইন সিচুয়েশনে আসবে। ব্যাংকগুলো লস করবে না, কাস্টমারও লস করবে না, যারা ব্যাংকে আমানত রাখবেন তারাও লস করবেন না।’
তিনি বলেন, ‘আমারা কাউকে লসের জায়গায় দেখতে চাই না। আমাদের স্বপ্ন এখন অনেক বড়। আমরা এখন দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ করে সেগুলো বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবো। এটাই আমাদের একমাত্র পরিকল্পনা।’
এদিকে খেলাপি ঋণের ওপর বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদনে দেখা গেছে, চলতি বছরের জুন শেষে ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে এক লাখ ১২ হাজার ৪২৫ কোটি টাকা। যা মোট বিতরণ করা ঋণের ১১ দশমিক ৬৯ শতাংশ। প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, চলতি বছরের এপ্রিল-জুন এ তিন মাসে নতুন করে খেলাপি ঋণ বেড়েছে প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা।
জুন শেষে অবলোপন বাদে খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে প্রায় এক লাখ ১২ হাজার ৪২৫ কোটি টাকা। আর অবলোপনসহ খেলাপি ঋণের পরিমাণ দেড় লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। আগের বছরের জুন পর্যন্ত অবলোপন বাদে খেলাপি ঋণ ছিল ৯০ হাজার ৩৭২ কোটি টাকা। এ হিসাবে গত এক বছরের ব্যবধানে খেলাপি ঋণ বেড়েছে প্রায় ২২ হাজার কোটি টাকা। আগের প্রান্তিক জানুয়ারি থেকে মার্চ এ তিন মাসে খেলাপি ঋণ বেড়েছিল প্রায় ১৭ হাজার কোটি টাকা।
এমইউএইচ/এএইচ/পিআর