‘গ্রাহকের টাকা না দেয়ায় এজেন্ট পাচ্ছে না বীমা কোম্পানি’
সঠিকভাবে গ্রাহকদের বীমা দাবির টাকা পরিশোধ না করায় দেশে ব্যবসা করা বীমা কোম্পানিগুলো প্রয়োজনীয় এজেন্ট পাচ্ছেন না। ফলে বাড়ছে না বীমা খাতের আওতা। একই সঙ্গে দিন দিন অর্থনীতিতে কমে যাচ্ছে বীমার অবদান।
‘জীবন বীমা খাতের সম্ভাবনা’ নিয়ে আয়োজিত এক সেমিনারে ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্সের পক্ষ থেকে এসব কথা বলা হয়। রাজধানীর গুলশানে অবস্থিত ডেল্টা লাইফ টাওয়ারে মঙ্গলবার (৬ আগস্ট) এ সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়।
সেমিনারে জীবন বীমা খাতের সম্ভাবনা ও বিভিন্ন সমস্যা তুলে ধরেন ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্সের চিফ মার্কেটিং অফিসার (সিএমও) বিনীত আগরওয়াল। এছাড়া কোম্পানিটির উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) ও কোম্পানি সচিব উত্তম কুমার সাধু, নির্বাহী পরিচালক আশরাফ উদ্দিন এবং জয়েন্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট এ কে এম সামিনুল ইসলাম সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে বিনীত আগরওয়াল বলেন, জীবন বীমার গ্রাহকরা সঠিকভাবে দাবির টাকা না পাওয়ায় একধরনের ইমেজ সঙ্কট সৃষ্টি হয়েছে। এ কারণে প্রয়োজনীয় এজেন্ট পাওয়া যাচ্ছে না। নতুন এজেন্ট না আসায় নতুন ব্যবসাও আসছে না। ইমেজ সঙ্কট কাটানো গেলে অবশ্যই বীমা খাতের আওতা বাড়বে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে বীমা কোম্পানিগুলো বছরে যে প্রিমিয়াম সংগ্রহ করে তার ৭৩ দশমিক ৫ শতাংশই জীবন বীমা কোম্পানির। বাকি ২৬ দশমিক ৫ শতাংশ সাধারণ বীমা কোম্পানির। সুতরাং বীমা ব্যবসার সিংহভাগই জীবন বীমা কোম্পানির দখলে। বর্তমানে জীবন বীমা খাতে ১ কোটি ৭ লাখের মতো পলিসি সচল আছে। তবে এ সংখ্যক মানুষ বীমার আওতায় নেই। কারণ একই ব্যক্তির একাধিক বীমা করা আছে। বীমার আওতায় থাকা মানুষের সংখ্যা আনুমানিক ৮০ থেকে ৮৫ লাখের মতো হবে।
ভারত থেকে আসা আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতাসম্পন্ন এ বীমাকর্মী বলেন, পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর মধ্যে জিডিপিতে বীমা খাতের অবদান সব থেকে কম বাংলাদেশে। অথচ বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি সব থেকে বেশি বেড়েছে। ২০০৯ সালে দেশের জিডিপিতে বীমা খাতের অবদান ছিল ১ শতাংশের বেশি। বর্তমানে তা কমে দশমিক ৫৫ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।
বীমা অর্থনৈতিক উন্নয়নের বড় হাতিয়ার উল্লেখ করে তিনি বলেন, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হলে বীমার আওতা বাড়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়। দেশে বীমার আওতা ১ শতাংশ বাড়লে অনিশ্চিত লোকসান ১৩ শতাংশ কমানো সম্ভাব। বীমা শুধু বীমা নয়, এটি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির অন্যতম হাতিয়ার।
দ্রুত ব্যাংক ইন্স্যুরেন্স চালু করার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, মানুষের কাছে যেতে হলে ব্যাংক সহজ উপায়। ফিলিপাইনে বীমা কোম্পানিগুলো যে ব্যবসা করে তার ৭৪ শতাংশই আসে ব্যাংকের মাধ্যমে। আমরা ব্যাংক ইন্স্যুরেন্স চালু করতে পারলে বীমার প্রসার ঘটবে।
ডেল্টা লাইফ প্রথম প্রজন্মের এবং দেশি বীমা কোম্পানিগুলোর মধ্যে সব থেকে বড় প্রতিষ্ঠান হওয়ার পরও বছরে প্রথমবর্ষ প্রিমিয়াম আয় করছে দেড়শ কোটি টাকার মতো। অথচ ডেল্টা লাইফের পরে এসেও কিছু কোম্পানি ৪০০ কোটি টাকার ওপরে প্রথমবর্ষ প্রিমিয়াম আয় করছে। ডেল্টা লাইফের এ পিছিয়ে পড়ার কারণ কি?
সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের উত্তরে বিনীত আগরওয়াল বলেন, যে কোম্পানিটি ৪০০ কোটি টাকার ওপর প্রথমবর্ষ প্রিমিয়াম আয় করছে তার লাইফ ফান্ড সাড়ে ৩০০ কোটি টাকা কমে গেছে। তাহলে কোম্পানিটি কী ব্যবসা করছে? আমরা প্রতি বছর ৫০০ কোটি টাকার ওপরে দাবি পরিশোধের পরও নিয়মিত আমাদের লাইফ ফান্ড বাড়ছে। কারণ, ডেল্টা লাইফ বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) সব নিয়মনীতি মেনে ব্যবসা করে।
এমএএস/আরএস/এমকেএইচ