সাধারণ বীমা : ১৫ শতাংশ কমিশনে একমত সবাই
সাধারণ বীমা কোম্পানির প্রিমিয়াম সংগ্রহের ক্ষেত্রে এজেন্টকে সর্বোচ্চ ১৫ শতাংশ কমিশন দেয়ার বিষয়ে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ), বাংলাদেশ ব্যাংক, অর্থ মন্ত্রণালয় এবং সকল বীমা কোম্পানির চেয়ারম্যান ও মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তারা একমত হয়েছেন বলে জানিয়েছে বীমা মালিকদের সমিতি বাংলাদেশের ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশন (বিআইএ)।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর ঢাকা ক্লাবে বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশন আয়োজিত বিশেষ সংবাদ সম্মেলনে এসব বলেন সংগঠনটির প্রেসিডেন্ট শেখ কবির হোসেন।
সম্প্রতি সাধারণ বীমা কোম্পানির এজেন্টদের প্রিমিয়াম সংগ্রহের বিপরীতে সর্বোচ্চ ১৫ শতাংশ কমিশন বেঁধে দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে বীমা খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইডিআরএ।
অবশ্য ২০১১ সালে বীমা খাতের নতুন নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে আইডিআরএ গঠিত হওয়ার পর ২০১২ সালেই প্রজ্ঞাপন জারি করে কমিশনের এই হার বেঁধে দেয়া হয়েছিল। তবে নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও বীমা মালিকদের মধ্যে দেখা দেয়া বিরোধের কারণে তা মুখ থুবড়ে পড়ে।
এ বিষয়ে সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে শেখ কবির হোসেনকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, আমরা অতীতে ফিরে তাকাতে চায় না। সবকিছু বুঝে শুনেই আমরা এখন এটা (১৫ শতাংশ কমিশন) করছি। সর্বোচ্চ ১৫ শতাংশ কমিশনের বিষয়ে সমস্ত কোম্পানির চেয়ারম্যান ও মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা, বাংলাদেশ ব্যাংক, অর্থ মন্ত্রণালয় সবাই একমত হয়েছে।
তিনি বলেন, বীমা আইন ২০১০ অনুযায়ী প্রিমিয়াম সংগ্রহের জন্য বীমা এজেন্টকে ১৫ শতাংশের বেশি কমিশন দেয়ার সুযোগ নেই। কোনো সাধারণ বীমা কোম্পানি চলতি বছরের ১ আগস্ট থেকে ১৫ শতাংশের বেশি এজেন্ট কমিশন দিলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। অতিরিক্ত কমিশন দেয়া নেয়া দুইটাই অন্যায়।
সর্বোচ্চ ১৫ শতাংশ কমিশনের বিষয়ে ২০১২ সালে শেফাক আহমেদ আইডিআরএ’র চেয়ারম্যান থাকা অবস্থায় নির্দেশনা জারি করা হয়। তাহলে ১৫ শতাংশ কমিশন বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে এতদিন সময় লাগার কারণ কি? এমন প্রশ্ন করা হলে শেখ কবির বলেন, ১৫ শতাংশ কমিশনের বিষয়ে আমরা বিরোধিতা করিনি। আমরা ১৫ শতাংশ কমিশনের বিষয়ে সমর্থন করেছিলাম। কিন্তু শেফাক আহমেদই আমাদের সমর্থন নেননি।
আপনারা ১ আগস্ট থেকে ১৫ শতাংশ কমিশন দিতে একমত হয়েছেন। তাহলে যারা এতদিন ১৫ শতাংশের বেশি কমিশন দিয়েছে তারা কি মাফ পেয়ে যাবেন? আরেক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, অতীতের বিষয়ে আইডিআরএ’র বিশেষ নিরীক্ষার সুযোগ আছে। বিশেষ নিরীক্ষায় অতিরিক্ত কমিশন দেয়ার চিত্র ওঠে আসলে আইন অনুযায়ী কোম্পানির লাইসেন্স বাতিল হওয়ার নিয়মও আছে। জারিমানা তো হবেই।
দেশ নানা খাতে এগিয়ে গেলেও বীমা খাতের উন্নয়ন না হওয়ার বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে প্রায় একযুগ ধরে বিআইএ’র প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করা শেখ কবির হোসেন বলেন, আগে বাজেটে বীমা খাত নিয়ে কিছু থাকতো না। এবারের বাজেটে শস্য বীমাসহ বিভিন্ন বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়ার কথা বলা হয়েছে। সবকিছু বীমার আওতায় আনার জন্য সরকারের যেমন ভূমিকা রয়েছে, তেমনি আপনাদেরও (সাংবাদিক) দায়িত্ব আছে। গাড়ির জন্য থার্ড পার্টি বীমা হয়, এটা কোনো বীমা না। এটা বন্ধের জন্য আপনাদের জোরালো ভূমিকা রাখতে হবে।
এর আগে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য তুলে ধরেন বিআইএ’র কার্যনির্বাহী সদস্য নাসির উদ্দিন পাভেল। তিনি বলেন, বেআইনিভাবে এজেন্টকে ১৫ শতাংশের বেশি কমিশন দেয়ার কারণে বীমা কোম্পানিগুলো আর্থিকভাবে সংকটের সম্মুখীন। তাই আইডিআরএ এবং বিআইএ’র যৌথ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১ আগস্ট থেকে আইন কঠোরভাবে প্রতিপালনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। যদি কোনো বীমা কোম্পানি, ব্যাংক এবং বীমা গ্রহীতা এই ধরনের বেআইনি লেনদেনের সঙ্গে জড়িত থাকে তাহলে তার বিরুদ্ধে আইনগত শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
তিনি বলেন, গত ১৮ জুলাই আইডিআরএ, বিআইএ এবং সকল সাধারণ বীমা কোম্পানির চেয়ারম্যান ও মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তাদের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ওই বৈঠকে আইডিআরএ’র চেয়ারম্যন সাধারণ বীমা খাতের উন্নয়নের জন্য ১৫ শতাংশের বেশি এজেন্ট কমিশন দেয়াকে এক নম্বর সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করেন।
এরপর গত ২৫ জুলাই বাংলাদেশ ব্যাংকের সভাকক্ষে গভর্নরের সভাপতিত্বেব অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ, আইডিআরএ এবং বিআইএ’র প্রতিনিধিদের সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ১৫ শতাংশের অধিক কমিশন বন্ধ এবং আইডিআরএ সার্কুলার অনুযায়ী ব্যাংক হিসাব সংক্রান্ত সকল বিষয়ে সহযোগিতার প্রদানে সম্মত হন।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ইস্টল্যান্ড ইন্স্যুরেন্সের চেয়ারম্যান মাহবুবুর রহমান, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য ও ইউনিয়ন ইন্স্যুরেন্সের চেয়ারম্যান মোজাফফর হোসেন পল্টু, এশিয়া প্যাসিফিক ইন্স্যুরেন্সের চেয়ারম্যন আফতাবুল ইসলাম, গ্রিন ডেল্টা ইন্স্যুরেন্সের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা ফারজানা চৌধুরী প্রমুখ।
এমএএস/এমআরএম/জেআইএম