বছরজুড়ে আলসেমি শেষে এসে তড়িঘড়ি

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৮:০২ পিএম, ৩০ জুলাই ২০১৯

২০১৮-১৯ অর্থবছর শেষে বেশকিছু মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তর তাদের কাজের বিল হিসাব মহানিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ে সময় মতো জমা দিতে পারেনি। গত অর্থবছরের শেষ টাইমলাইনের (৩০ জুন) মধ্যে বেশ কয়েকটি মন্ত্রণালয়ের বিল ও চেক এন্ট্রি সমন্বিত বাজেট ও হিসাবরক্ষণ পদ্ধতিতে (আইবাস++ সফটওয়্যার) জমা হয়নি। ফলে প্রায় পাঁচ হাজার কোটি টাকারও বেশি বিল আটকা পড়েছে। এসব বিলের অর্থ চলতি (২০১৯-২০) অর্থবছর সমন্বয় করা হবে।

যেসব মন্ত্রণালয়ের বিল আটকা পড়েছে তারা এজন্য সফটওয়্যারের ধীরগতিকে দায়ী করছে। তবে অর্থ মন্ত্রণালয় বলছে, সফটওয়্যারে ধীরগতি ছিল না। বরং তড়িঘড়ি করে সবাই শেষ সময়ে বিল জমা দেয়ার জন্য এ সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। এতে একদিকে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়নের হারে প্রভাব পড়বে, অন্যদিকে বেকায়দায় পড়েছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

এ বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জাগো নিউজকে বলেন, আইবাস++ সফটওয়্যারে ধীরগতির কোনো কারণ নেই। তড়িঘড়ি করে সবাই শেষ সময়ে বিল জমা দেওয়ার চেষ্টা করার কারণেই এ সমস্যা হয়েছে।

যেসব মন্ত্রণালয়ের বিলগুলো এন্ট্রি হয়নি সেগুলোর কী হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, যে বিলগুলো আটকে আছে সেগুলো চলতি অর্থবছর সমন্বয় করা হবে। এ ছাড়া সংশোধিত বাজেট তো আছেই। এগুলো নিয়ে চিন্তার কিছু নেই। তবে আগামীতে এ সুযোগ আর থাকবে না। উন্নত দেশগুলোর মতো আমরাও ভিন্ন কিছু করার চিন্তা করছি।

সূত্র মতে, বাজেট প্রণয়ন প্রক্রিয়া সহজ করতে আইবাস++ সফটওয়্যার তৈরি করে সরকার। এ সফটওয়্যারের মাধ্যমে বাজেট ও হিসাবসংশ্লিষ্ট সব কাজ খুব সহজেই করা যায়। ২০১৬-১৭ অর্থবছর থেকে সব মন্ত্রণালয় আইবাস++ সফটওয়্যারের মাধ্যমে বাজেট প্রণয়ন করছে। হিসাবরক্ষণ মডিউলের কাজ শুরু হয়েছে তার এক অর্থবছর পর, অর্থাৎ ২০১৭-১৮ অর্থবছর থেকে।

আইবাস++ সফটওয়্যারে নিয়ম হচ্ছে— অর্থবছরের শেষ তারিখ অর্থাৎ ৩০ জুন রাত ১১টা ৫৯ মিনিট পর্যন্ত বিল এন্ট্রি দেওয়া যায়। এরপর থেকে সফটওয়্যারে নতুন অর্থবছরের হিসাব শুরু হয়ে যায়।

অর্থাৎ বিল এন্ট্রি করানোর জন্য পুরো অর্থবছর সময় পাচ্ছে মন্ত্রণালয়গুলো। তারপরও সারা বছর এন্ট্রি না করে কয়েকটি মন্ত্রণালয় শেষ সময়ে তড়িঘড়ি করে এন্ট্রি দিতে যায়। এতেই বাধে বিপত্তি। সবাই একসঙ্গে ঢুকতে গেলে সফটওয়্যারের গতি কমে যায়। শেষ সময়ে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের ৮৬টি এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ৪৬টি প্রকল্পের বিল এন্ট্রি করা হয়েছে। এসব এন্ট্রির কোনো কোনোটি করা হয়েছে ৩০ জুন রাত ১১টা ৫০, এমনকি ৫৯ মিনিটে।

এ ঘটনা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের ক্ষেত্রেও হয়েছে। এ কারণেই সদ্য শেষ হওয়া অর্থবছরে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয়সহ বেশ কয়েকটি মন্ত্রণালয়ের বিলের পাশাপাশি চেক এন্ট্রি হয়নি।

এদিকে শুধু স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ই বলছে, সফটওয়্যারের ধীরগতির কারণে তামাদিযোগ্য পাসকৃত মোট দুই হাজার ২৪৪টি বিল এন্ট্রি করা সম্ভব হয়নি। এর মধ্যে এক হাজার ৬৩টি বিলের চেক এন্ট্রি এবং এক হাজার ১৮১টি বিলের বিল ও চেক এন্ট্রি করা যায়নি। এতে যুক্ত টাকার পরিমাণ প্রায় দুই হাজার কোটি। বিষয়টি নিয়ে ১ জুলাই প্রধান হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তার কার্যালয়ে চিঠিও দিয়েছে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়।

অর্থ মন্ত্রণালয় বলছে, এ ঝামেলা, তদবির বন্ধ করতে আগামী অর্থবছর থেকে আর ৩০ জুন পর্যন্ত বিল এন্ট্রির সময় দেয়া হবে না। আগামী অর্থবছর থেকে মন্ত্রণালয়গুলো বিল এন্ট্রি করতে ১৫ জুন পর্যন্ত সময় পাবে। পাশাপাশি দেরি করে বিল এন্ট্রি দেয়া মন্ত্রণালয়গুলো যাতে তদবির না করতে পারে সে জন্যও নেয়া হচ্ছে বিশেষ পদক্ষেপ। উন্নত দেশগুলোতে যেসব মন্ত্রণালয় নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বিল এন্ট্রি দিতে ব্যর্থ হয় সেগুলোকে জরিমানা করা হয়। জরিমানা বাবদ মন্ত্রণালয়গুলোর বাজেট থেকে অর্থ কেটে রেখে দেয়া হয়। অর্থ মন্ত্রণালয় আগামীতে এ ধরনের উদ্যোগ নেয়ার পরিকল্পনা করছে।

এদিকে মন্ত্রণালয়গুলোর এ ব্যর্থতার প্রভাব পড়ছে এডিপির বাস্তবায়ন হারে। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, মন্ত্রণালয়গুলো ঠিক সময়ে কাজ করলে এডিপির বাস্তবায়নের হার আরও বাড়ত। এ ব্যর্থতার দায় কোনোভাবেই তারা এড়াতে পারে না।

এ ব্যাপারে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ড. মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, সংশোধিত এডিপির পরিমাণ এক লাখ ৬৭ হাজার কোটি টাকা। সে হিসাবে পাঁচ হাজার কোটি টাকার কারণে হয়তো এখন খুব বেশি প্রভাব পড়বে না। তবে এটি হওয়া উচিত নয়। মন্ত্রণালয়গুলোর মধ্যে সমন্বয়ের অভাব রয়েছে।

আইবাস++ এর সংক্ষিপ্ত পরিচিতি
আইবাস++ (Integrated Budget and Accounting System) হচ্ছে বাংলাদেশ সরকারের সমন্বিত বাজেট এবং হিসাবরক্ষণ ব্যবস্থা। এটি একটি ইন্টারনেটভিত্তিক সফটওয়্যার, যার মাধ্যমে সরকারের বাজেট প্রণয়ন, বরাদ্দ বিভাজন, অর্থ অবমুক্তি, বাজেট পুনঃউপযোজন, অনলাইনে বিল দাখিল এবং তার বিপরীতে চেক বা ইএফটির মাধ্যমে অর্থ প্রদান, রাজস্ব জমার হিসাবরক্ষণ, স্বয়ংক্রিয় ব্যাংক হিসাব সমন্বয়ের মতো আর্থিক কর্মকাণ্ডগুলো সম্পন্ন করা যায়।

এমইউএইচ/এনএফ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।