কপারটেকের জয়, ডিএসইর নতি স্বীকার
আইনগত সুযোগ না থাকলেও চাপের মুখে নতি স্বীকার করে কপারটেক ইন্ডাস্ট্রিজকে তালিকাভুক্ত করেছে দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)। বহুল আলোচিত ও বিতর্কিত এই কোম্পানিটির শেয়ার আগামী ৫ আগস্ট থেকে লেনদেন হবে।
মঙ্গলবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ থেকে এ তথ্য জানানো হয়েছে। ‘এন’ ক্যাটাগরির আওতায় কোম্পানিটির ট্রেডিং কোর্ড নির্ধারণ করা হয়েছে ‘সিওপিপিইআরটিইসিএইচ’। আর কোম্পানি কোর্ড নির্ধারণ করা হয়েছে ১৩২৪৭।
পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসির) অনুমোদন নিয়ে কপারটেক ইন্ডাস্ট্রিজ প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে শেয়ারবাজার থেকে ২০ কোটি টাকা উত্তোলন করেছে।
আইপিওতে শেয়ার ছাড়ার পর কোম্পানিটি নিয়ে বিতর্কের শুরু হয়। কপারটেক ইন্স্যুতে যা ঘটেছে দেশের শেয়ারবাজারের ইতিহাসে এর আগে কোনো কোম্পানির তালিকাভুক্ত নিয়ে এতো বিতর্ক বা ঘটনা ঘটেনি।
আরও পড়ুন>> কপারটেক নিয়ে অস্বস্তিতে বিএসইসি
আর্থিক প্রতিবেদনে অনিয়মের অভিযোগে ডিএসই থেকে কোম্পানিটির তালিকাভুক্তি আটকে দেয়া হয়। অনিয়মের দায়ে লাইসেন্স হারায় কপারটেক ইন্ডাস্ট্রিজের নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান আহমেদ অ্যান্ড আক্তার।
মূলত ডিএসইর পরিচালনা পর্ষদ থেকে কোম্পানিটির তালিকাভুক্ত আটকে দেয়ার কারণেই ঘটে একের পর এক ঘটনা। অথচ সেই ডিএসইর পর্ষদ হঠাৎ করেই চলতি মাসে ইউটার্ন নেয়। আইন লঙ্ঘন করে গত ২২ জুলাই কপারটেক ইন্ডাস্ট্রিজকে তালিকাভুক্তির অনুমোদন দেয় ডিএসইর পর্ষদ। পর্ষদে সিদ্ধান্ত নেয়ার পরের দিন ২৩ জুলাই বিএসইসিকে চিঠি দেয় ডিএসই। চিঠিতে কপারটেক ইন্ডাস্ট্রিজকে তালিকাভুক্ত করার জন্য ডিএসই লিস্টিং রুলস, ৫ এর ৩ ধারা থেকে অব্যাহতি (ওয়েভার) চাওয়া হয়।
ডিএসই লিস্টিং রুলস, ৫ এর ৩ ধারা অনুযায়ী, কোনো কোম্পানি প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে টাকা উত্তোলন করলে ওই কোম্পানির আইপিও সাবস্ক্রিপশন (আইপিও আবেদন গ্রহণ) শেষ হওয়ার ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে তালিকাভুক্ত হতে হবে।
ডিএসই থেকে চিঠি পাঠানোর মাত্র একদিনের মধ্যেই সাড়া দেয় বিএসইসি। ২৪ জুলাই বিএসইসি থেকে চিঠি দিয়ে লিস্টিং রুলস, ৫ এর ৩ ধারা থেকে অব্যাহতি না দিয়ে, ৫ এর ৪ ধারা অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ডিএসইকে নির্দেশ দেয়া হয়। এই ধারায় বলা হয়েছে, স্টক এক্সচেঞ্জ তালিকাভুক্তি নিয়ে যেকোনো রিক্যায়ারমেন্ট বা প্রভিশনিং শিথিল করতে পারবে।
এই নির্দেশ দেয়ার পাশাপাশি ১০ কার্যদিবসের মধ্যে কপারটেক ইন্ডাস্ট্রিজকে তালিকাভুক্ত করার বিষয়ে গৃহীত পদক্ষেপ সম্পর্কে জানানোর জন্য ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেয় বিএসইসি। বিএসইসির বেঁধে দেয়ার ১০ কার্যদিবস পার হওয়ার আগেই কপারটেক ইন্ডাস্ট্রিজ লেনদেনের সময় জানিয়ে দিল ডিএসই।
অথচ আর্থিক প্রতিবেদনে অনিয়মের কারণে ডিএসই থেকেই কোম্পানিটির তালিকাভুক্তি আটকে দিয়ে ফিন্যান্সিয়াল রিপোটিং কাউন্সিলের (এফআরসি) কাছে অভিযোগ করা হয়। অভিযোগ পেয়ে তা তদন্তের জন্য এফআরসি থেকে দ্য ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্টস অব বাংলাদেশকে (আইসিএবি) দায়িত্ব দেয়া হয়। আইসিএবির তদন্তে অসহযোগিতা করায় কপারটেক ইন্ডাস্ট্রিজের নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান আহমেদ অ্যান্ড আক্তারকে লাইসেন্স হারাতে হয়েছে।
আইন লঙ্ঘন করে কপারটেক ইন্ডাস্ট্রিজকে তালিকাভুক্তির অনুমোদন দেয়ার বিষয়ে ডিএসইর পর্ষদের এক সদস্য বলেন, কপারটেক ইন্ডাস্ট্রিজের তালিকাভুক্তির জন্য নির্দিষ্ট সময়সীমা পার হয়ে গেছে। এমতাবস্থায় কোম্পানিটিকে তালিকাভুক্ত করার আইনগত কোনো সুযোগ নেই, এটা ঠিক। কিন্তু ‘বিশেষ ব্যবস্থায়’ তালিকাভুক্তির সুযোগ আছে। সেই বিশেষ ব্যবস্থায় তালিকাভুক্ত করা হয়েছে।
ডিএসইর তালিকাভুক্তির নীতিমালা অনুযায়ী, কোনো কোম্পানি প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে টাকা উত্তোলন করলে ওই কোম্পানির আইপিও সাবস্ক্রিপশন (আইপিও আবেদন গ্রহণ) শেষ হওয়ার ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে তালিকাভুক্ত হতে হবে। তবে কপারটেক ইন্ডাস্ট্রিজের ক্ষেত্রে সেই সময় অনেক আগেই পার হয়ে গেছে।
কপারটেক ইন্ডাস্ট্রিজ আইপিওতে ২ কোটি শেয়ার ছেড়ে শেয়ারবাজার থেকে ২০ কোটি টাকা উত্তোলনের অনুমোদন পায়। এ টাকা উত্তোলনে ৩১ মার্চ থেকে ৯ এপ্রিল পর্যন্ত কোম্পানিটির আইপিওতে আবেদন গ্রহণ করা হয়। ফলে চলতি বছরের ২৬ মের মধ্যে কোম্পানিটি ডিএসইতে তালিকাভুক্তির বাধ্যবাধকতা ছিল। কিন্তু ডিএসই পর্ষদ অনুমোদন না দেয়ায়, এতদিন কোম্পানিটির তালিকাভুক্তি আটকে থাকে।
এমএএস/এমএসএইচ/পিআর