অস্থির পেঁয়াজের বাজার : ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বসছে মন্ত্রণালয়

মেসবাহুল হক
মেসবাহুল হক মেসবাহুল হক , নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৭:১৮ পিএম, ১০ জুলাই ২০১৯

হঠাৎ দ্বিগুণ দামে বিক্রি হচ্ছে পেঁয়াজ। রাজধানীর খুচরা বাজারে কয়েক দিনের ব্যবধানে ২৫ টাকার ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকায়। ৩০ টাকার দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৫০-৫৫ টাকায়। পেঁয়াজ বাজারের এ অস্থিরতা নিয়ন্ত্রণে আগামী সপ্তাহে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠকে বসছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

পেঁয়াজের দাম বাড়ার চিত্র সরকারি সংস্থা ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) দৈনিক বাজার মূল্য তালিকায়ও দেখা গেছে। তালিকা অনুযায়ী এক সপ্তাহ আগে যেখানে দেশি পেঁয়াজের দাম ছিল ২৫-৩০ টাকা, বুধবার (১০ জুলাই) সেটা বিক্রি হয়েছে ৪৫-৫০ টাকায়। আমদানি করা পেঁয়াজের দাম এক সপ্তাহ আগে ছিল ২৮-৩৫ টাকা। বুধবার তা বিক্রি হয়েছে ৪০-৪৫ টাকায়।

ক্রেতাদের অভিযোগ, কোরবানির ঈদ সামনে রেখে কারসাজি করে পেঁয়াজের দাম বাড়ানো হচ্ছে। তবে পেঁয়াজ ব্যবসায়ী ও আমদানিকারকরা বলছেন, পেঁয়াজ রফতানিতে ভারত প্রণোদনা তুলে নিয়েছে। অতিরিক্ত গরম ও বৃষ্টিতে পেঁয়াজ নষ্ট হওয়ায় প্রভাব পড়ছে দামে।

হঠাৎ করে পেঁয়াজের বাজার অস্থিতিশীলতার বিষয়ে বাণিজ্য সচিব মো. মফিজুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, যে কোনো মূল্যে পেঁয়াজের বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করা হবে। পেঁয়াজের সরবরাহ বাড়াতে আমদানির পরিমাণ বাড়ানো হবে। এজন্য এক সপ্তাহের মধ্যেই পেঁয়াজ আমদানিকারক, আড়তদার ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক করা হবে।

তিনি বলেন, মূলত ভারত থেকেই পেঁয়াজ আমদানি করা হয়। ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে অন্য দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি করা যায় কিনা সেটাও ভেবে দেখা হবে।

তিনি আরও বলেন, অফ সিজনে যে কোনো পণ্যের দাম একটু বাড়ে। তবে চেষ্টা করবো কোরবানির ঈদে পেঁয়াজের বাজার যেন নিয়ন্ত্রণে থাকে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, দেশে বছরে ২৪ লাখ টন পেঁয়াজের চাহিদা রয়েছে। কোরবানির ঈদে বাড়তি প্রায় দুই লাখ টনের চাহিদা তৈরি হয়। মোট চাহিদার প্রায় ১৭ লাখ টন দেশে উৎপাদিত হয়। বাকি সাত লাখ টন ভারত থেকে আমদানি করা হয়।

এনবিআরের তথ্য মতে, চলতি অর্থবছরের এপ্রিল পর্যন্ত প্রায় ৯ লাখ টন পেঁয়াজ আমদানি করা হয়েছে। সে হিসাবে পেঁয়াজ ঘাটতি হওয়ার কথা নয়।

কিন্তু পেঁয়াজের চাহিদা এবং সরবরাহ স্বাভাবিক থাকলেও একশ্রেণির ব্যবসায়ীর অনৈতিক তৎপরতায় অস্বাভাবিকভাবে বাড়ছে পেঁয়াজের দাম। ফলে সাধারণ ক্রেতাদের অসহনীয় দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে। মূলত বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে এ খাতের গুটিকয়েক সিন্ডিকেট। অতিরিক্ত গরম ও বৃষ্টিতে পেঁয়াজ নষ্ট হওয়ার উছিলায় পেঁয়াজের দাম বাড়াচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। তাই ক্রেতাদের বাড়তি টাকা গুণতে হচ্ছে।

জানা গেছে, ব্যবসায়ীরা মূলত ভারত থেকেই পেঁয়াজ আমদানি করেন। এ ছাড়া মিসর, চীনসহ কয়েকটি দেশ থেকেও খুব কম পরিমাণে পেঁয়াজ আমদনি হয়। তবে আমদানিতে সময় বেশি লাগায় ব্যবসায়ীরা মিসর থেকে পেঁয়াজ আমদানি করতে আগ্রহ দেখান না।

পেঁয়াজের দাম বাড়ার বিষয়ে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, কৃষকের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিতের পাশাপাশি সারা বছর পেঁয়াজের দাম নাগালের মধ্যে রাখতে সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে। কয়েক দিনের ব্যবধানে কেজিতে ২০-২৫ টাকা বেড়ে যাওয়া অযৌক্তিক। ভোক্তার স্বার্থে বাজার মনিটরিং জোরদার করতে হবে।

পেঁয়াজের দাম স্থিতিশীল রাখতে করণীয় বিষয়ে বিশ্বব্যাংকের পরামর্শ

বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদন বলছে, পেঁয়াজের কার্যকর বা সঠিক মূল্য স্থিরে নতুন ব্যবসায়ীদের অবাধ প্রবেশে সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে। প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশ তৈরিতে আরও ভালো অবকাঠামোগত সুবিধা ও লাইসেন্স দেয়ার মাধ্যমে এটা করা যেতে পারে। কার্যকর নজরদারি এবং নিম্ন মূল্যের নিলাম, গোপন আঁতাত ও দাম বাড়ানোর জন্য কৃত্রিম ঘাটতি তৈরির মতো অন্যায় কাজ ও বাজার মধ্যস্থতাকারীদের বহু ভূমিকা পালন করা থেকে বিরত রাখতে নিয়ন্ত্রক ব্যবস্থা জোরদারে পদক্ষেপ নিতে হবে।

বাজার বিশ্বাসযোগ্যতার জন্য লাইসেন্স বাতিল, জরিমানা আরোপ ও ব্যবসায়ীদের আচরণের প্রতি তীক্ষ্ণ নজরদারি রাখা যেতে পারে। স্বাধীন বা উদার পরিবেশ সৃষ্টিতে আমদানি উৎস বহুমুখী করা উচিত, যাতে আরও বেশি ব্যবসায়ী পেঁয়াজ আমদানির ব্যবসায় করতে পারেন।

এমইউএইচ/এএইচ/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।