অর্থপাচার রোধে তদারকি বাড়ানোর পরামর্শ
অর্থপাচার রোধে তদরকি আরও বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছে আন্তর্জাতিক সংস্থা এশিয়া-প্যাসিফিক গ্রুপ অন মানি লন্ডারিং (এপিজি)। রোববার (৭ জুলাই) অর্থ বিভাগের সম্মেলন কক্ষে মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধে দিকনির্দেশনা এবং নীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের লক্ষ্যে গঠিত জাতীয় সমন্বয় কমিটির সঙ্গে এপিজির পরিচালক ডেভিট শ্যানন ও মোস্তফা আকবরের বৈঠকে এ পরামর্শ দেওয়া হয়।
বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। এছাড়া দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সিনিয়র সচিব আসাদুল ইসলাম, বাংলাদেশ ব্যাংকের ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) প্রধান আবু হেনা মোহাম্মদ রাজি হাসান প্রমুখ বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
সূত্র জানায়, বৈঠকে আইনমন্ত্রী মানিলন্ডারিংয়ের বিষয়ে বাংলাদেশ কর্তৃক গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপের ওপর একটি প্রেজেন্টেশন উপস্থাপন করেন। এ সময় তিনি বলেন, আমাদের সরাসরি তেমন কোনো মানিল্ডারিং হয় না। তবে আমদানি ও রফাতনিতে ওভার এবং আন্ডার ইনভয়েসিংয়ের মাধ্যমে টাকা চলে যাওয়ার ক্ষেত্রে কিছু কিছু জায়গায় ঘাটতি রয়েছে। এ জায়গাগুলো রিকভারি করার চেষ্টা করছি। এরই অংশ হিসেবে আমরা আমদানি ও রফাতনির ক্ষেত্রে শতভাগ পণ্য স্ক্যানিংয়ের উদ্যোগ গ্রহণ করেছি।
উপস্থাপনা আরও বলা হয়, সন্ত্রাস এবং জঙ্গিবাদে অর্থায়ন আমাদের টোটালি নেই। এপিজিও এটিতে একমত প্রকাশ করেছে। কারণ, তাদের কাছেও বাংলাদেশে সন্ত্রাসে অর্থায়নের কোনো প্রমাণ নেই। তারপরও এ জায়গায় বাংলাদেশ নিজে থেকেই প্রতিটি ঘরে ঘরে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সচেতনা বৃদ্ধির কাজ করছে। পরিবার, স্কুল-কলেজ ও কর্মক্ষেত্রে এ বিষয়ে সচেতনাতা বাড়ানোর উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।
সূত্র আরও জানায়, বাংলাদেশ অর্থপাচার ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন বৈশ্বিক সূচকে ২০১৬ সালেও যে অবস্থানে ছিল এখনো সে অবস্থানেই রয়েছে। কখনো এ ক্ষেত্রে খারাপ অবস্থানে ছিল না বাংলাদেশ। এ ক্ষেত্রে আগের তুলনায় বাংলাদেশের অবস্থা এখন ভালো না হলেও খারাপ হয়নি বলে উল্লেখ করেন আইনমন্ত্রী।
এপিজির পূর্ব পর্যবেক্ষণে বাংলাদেশে মানি লন্ডারিংয়ের ক্ষেত্রে আইন ও অবকাঠামোগত কিছু সমস্যা ছিল। সেগুলো উত্তরণের জন্য মালি লন্ডারিং আইন সংশোধন ও বিমানবন্দরের অবকাঠামো সংস্কার করা হয়েছে।
আইনমন্ত্রীর উপস্থাপনের পর ডেভিট শ্যানন মানি লন্ডারিং রোধে বাংলাদেশের কার্যক্রমের প্রসংশা করেন। পাশাপাশি যেসব জায়গায় দুর্বলতা রয়েছে সেগুলো কাটিয়ে ওঠার তাগিদ দেন। বিশেষ করে মনিটরিং ব্যবস্থাকে আরও জোরদার করার পরামর্শ দেন তিনি।
এক বছরে সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের অর্থ ১ হাজার ২শ’ কোটি টাকা বেড়েছে বলে গত সপ্তাহে তথ্য প্রকাশ হয়েছে। আর জানুয়ারিতে প্রকাশ পায় দেশ থেকে সর্বশেষ ৫০ হাজার কোটি টাকা পাচার হয়েছে। এসব বিষয়েও বৈঠকে আলোচনা হয়েছে।
জানতে চাইলে বিএফআইইউ প্রধান আবু হেনা মোহাম্মদ রাজি হাসান বলেন, ‘এপিজিসহ আন্তর্জাতিক এ ধরনের সংগঠনগুলোর চাপেই সুইস ব্যাংক তথ্য দিচ্ছে। তাদের উপরও চাপ রয়েছে। তাদের অনেক আইনে দুর্বলতা রয়েছে সেগুলোও তারা অ্যামেনমেন্ট করবে।
সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের গচ্ছিত অর্থ ফেরত আনতে সুইজারল্যান্ডের সঙ্গে আমরা এমওইউ করতে পারব কি না -জানতে চাইলে তিনি বলেন, তাদের আইনে অনেক দুর্বলতা রয়েছে। সুতরাং এমওইউ করলেও আইন সংশোধন না করে তারা টাকা দিতে পারে না। এসব এপিজি দেখবে তাদের আইনগুলো আন্তর্জাতিক মানে কি না।
এপিজির কো-চেয়ার হচ্ছে বাংলাদেশ। এবার এপিজির বার্ষিক সভা হবে অস্ট্রিয়াতে। আর আগামী বছর তথা ২০২০ সালেও অক্টোবারে বার্ষিক সভা বাংলাদেশে হওয়ার কথা রয়েছে। বার্ষিক সভার প্রস্তুতি সংক্রান্ত প্রেজেন্টেশনও বৈঠকে উপস্থাপন করেন আইনমন্ত্রী।
এমইউএইচ/আরএস/পিআর