ভারতের সঙ্গে সমন্বিত অংশীদারি চুক্তিতে সমীক্ষা

মেসবাহুল হক
মেসবাহুল হক মেসবাহুল হক , নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১০:০৬ এএম, ২৪ জুন ২০১৯

অনেক আগেই বাংলাদেশ ও ভারত সমন্বিত অর্থনৈতিক অংশীদারি চুক্তি স্বাক্ষরে একমত হয়। বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সুবিধা-সংক্রান্ত এ চুক্তি হলে উভয় দেশ অর্থনৈতিক-পর্যায়ে লাভবান হতে পারবে। চুক্তির আওতায় ভারতীয় বিনিয়োগ এ দেশে আনা এবং পণ্য রফতানি বাড়িয়ে বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে আনা সম্ভব বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন সংশ্লিষ্টরা। এজন্য ফিজিবিলিটি স্ট্যাডি বা সম্ভাব্যতা সমীক্ষা চালাচ্ছে সরকার।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। ট্যারিফ কমিশনের নিকট লেখা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব মো. সেলিম হোসেন স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়, ২০১৮ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর ঢাকায় অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ ও ভারতে বাণিজ্যমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে সমন্বিত অর্থনৈতিক অংশীদারি চুক্তি (সিইপিএ) করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এজন্য সিইপিএ-এর আওতায় সমন্বিত পণ্য, সেবা ও বিনিয়োগের সম্ভাবনা সম্পর্কে একটি যৌথ গবেষণা পরিচালনার জন্য দুই দেশের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নির্দেশনা প্রদান করা হয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সমন্বিত অর্থনৈতিক অংশীদারি চুক্তির সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের লক্ষ্যে ফিজিবিলিটি স্ট্যাডি দ্রুত শেষ করার জন্য ২০১৮ সালের ১৩ নভেম্বর ট্যারিফ কমিশনকে দায়িত্ব দেয়া হয়। কিন্তু আজ পর্যন্ত এর কোনো অগ্রগতির বিষয়ে ট্যারিফ কমিশন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে জানায়নি। এ কারণে গত ৮ মে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় আবারও ট্যারিফ কমিশনে চিঠি দিয়ে এ বিষয়ে ফিজিবিলিটি স্ট্যাডি দ্রুত সম্পন্নের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

port-02

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাণিজ্য সচিব মো. মফিজুল ইসলাম বলেন, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সুবিধা-সংক্রান্ত এ চুক্তি হলে উভয় দেশ অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হবে। চুক্তির আওতায় ভারতীয় বিনিয়োগ এ দেশে আনা এবং পণ্য রফতানি বাড়িয়ে বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে আনা সম্ভব হবে। তবে এ চুক্তিতে কোনো ধরনের ঝুঁকি রয়েছে কি না, সেজন্য ফিজিবিলিটি স্ট্যাডি করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। আমরা দ্রুত ফিজিবিলিটি স্ট্যাডি শেষ করতে চাই।

সূত্র জানায়, ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য চুক্তি আছে এবং দুটি দেশই দক্ষিণ এশীয় মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির (সাফটা) সদস্য, যার অধীনে স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে ভারতের বাজারে বাংলাদেশি পণ্য শুল্কমুক্ত সুবিধা পাচ্ছে। তবে সিইপিএ চুক্তির প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বলছে, আগামী ২০২৪ সালে স্বল্পোন্নত দেশের কাতার থেকে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ ঘটবে। তখন দুই দেশের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য বাড়াতে নতুন দ্বিপক্ষীয় চুক্তির প্রয়োজন হবে। সব ধরনের বাণিজ্য বাধা দূর করতে হবে। বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন পণ্য রফতানির ক্ষেত্রে বিদ্যমান বাধাসমূহ দূর করতে হবে।

পাটজাত পণ্য, খাদ্যপণ্য, ভোজ্যতেলসহ বাংলাদেশের বেশকিছু পণ্য ভারতে রফতানির ক্ষেত্রে জটিলতা রয়েছে। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সমস্যাগুলো সমাধানের বিষয়ে উভয় দেশ একমত হয়েছে। বর্ডার হাটের বিষয়ে উভয় দেশের মানুষের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহ রয়েছে। সিইপিএ চুক্তি হলে এসব বিষয়ে দ্রুত সমাধান পাওয়া যাবে।

জানা গেছে, ভারত ইতোমধ্যে দক্ষিণ কোরিয়া ও সিঙ্গাপুরের সঙ্গে এমন চুক্তি করেছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বিশ্বের অনেক দেশের সঙ্গেও তাদের এ ধরনের চুক্তি রয়েছে।

port

উল্লেখ্য, বাংলাদেশ এলডিসি হিসেবে এবং সাফটার অধীনে ভারতের বাজারে শুল্ক ও কোটামুক্তসহ বেশকিছু সুবিধা পায়। ২০২৭ সালের পর এ সুবিধা আর থাকছে না। ওই সময়ের পর ভারতে এমন সুবিধা পেতে সমন্বিত অর্থনৈতিক অংশীদারি চুক্তিই বাংলাদেশের ভরসা হবে বলে মনে করা হচ্ছে।

বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক এখন অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে সর্বোচ্চ উচ্চতায় রয়েছে। বন্ধুত্বপূর্ণ ওই সম্পর্কের মধ্যে ছয় দশকের পুরনো ছিটমহল সমস্যার সমাধান হয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে ৮০০ কোটি ডলারের বেশি বাণিজ্য হচ্ছে। যদিও বাণিজ্যে ভারতের পাল্লা ভারী।

বাংলাদেশ ভারত থেকে তুলা, সুতা, মেশিনারিজ, চাল আমদানি করে। আর ভারত বাংলাদেশ থেকে পাট আমদানি করে। তবে ভারতে পাট রফতানিতে বাংলাদেশকে এন্টি-ডাম্পিং শুল্ক দিতে হয়। যদিও ওই শুল্ক তুলে নিতে ঢাকার তরফ থেকে অনেকদিন ধরে দেন-দরবার করা হচ্ছে। ভারতের বাণিজ্যমন্ত্রী অবশ্য পাটের ওপর শুল্ক তুলে নেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন বলে জানানো হয়েছে।

এমইউএইচ/এমএআর/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।