বড় পতনের পর ঊর্ধ্বমুখী শেয়ারবাজার
টানা দুই কার্যদিবস বড় দরপতনের পর মঙ্গলবার দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) এবং অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সবকটি মূল্যসূচক বেড়েছে। সেই সঙ্গে বেড়েছে লেনদেন হওয়া অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম।
শেয়ারবাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, রিজার্ভের ওপর ট্যাক্স আরোপের প্রস্তাবের কারণে বাজেট ঘোষণার পর বাজারে একধরনের ধোঁয়াশা সৃষ্টি হয়। যে কারণে শেয়ারবাজারে একধরনের মন্দাভাব দেখা দেয়।
তবে সোমবার (১৭ জুন) বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান ড. এম খায়রুল হোসেন এক বৈঠকে স্টেকহোল্ডারদের জানান, রিজার্ভের ওপর ট্যাক্স আরোপের যে প্রস্তাব করা হয়েছে, তার ইতিবাচক সমাধান হবে। নিয়ন্ত্রক সংস্থার প্রধানের এমন আশ্বাসে বাজারে ইতিবাচক প্রভাব পড়ছে।
বিএসইসির চেয়ারম্যান স্টেকহোল্ডারদের বলেন, রিজার্ভের ওপর ট্যাক্সের বিষয়টি প্রস্তাব করা হয়েছে। বিষয়টি এখনও চূড়ান্ত নয়। এটা পুনর্বিবেচনার সুযোগ আছে। এ নিয়ে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সঙ্গে আলোচনা করব। এছাড়া বিষয়টা সমাধানের জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) কাজ করবে। তাই বাজেটে রিজার্ভের ওপর ট্যাক্স প্রস্তাব নিয়ে বিনিয়োগকারীদের উদ্বিগ্ন হওয়ার কারণ নেই।
শেয়ারবাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নতুন অর্থবছরের বাজেটে শেয়ারবাজারের জন্য বেশকিছু প্রণোদনা দেয়া হয়েছে। কিন্তু রিজার্ভের ওপর এবং বোনাস শেয়ারের ওপর ট্যাক্স আরোপের যে প্রস্তাব কর হয়েছে, তা সঠিক হয়নি। রিজার্ভের ওপর ট্যাক্স আরোপের কারণে কোম্পানির ব্যবসায়িক কার্যক্রম সম্প্রসারণে সমস্যা হবে। আর ঢালাওভাবে বোনাস লভ্যাংশের ওপর ট্যাক্স আরোপের কারণে ভালো কোম্পানি বোনাস লভ্যাংশ দেয়ার ক্ষেত্রে নিরুৎসাহিত হবে।
২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট বলা হয়েছে, কোনো কোম্পানির কোনো আয় বছরে রিটেইনড আর্নিংস, রিজার্ভ ইত্যাদির সমষ্টি যদি পরিশোধিত মূলধনের ৫০ শতাংশের বেশি হয়, তাহলে যতটুকু বেশি হবে তার ওপর সংশ্লিষ্ট কোম্পানিকে ১৫ শতাংশ হারে কর প্রদান করতে হবে।
বাজার পর্যালোচনায় দেখা যায়, রোববার ও সোমবারের মতো মঙ্গলবারও লেনদেনের প্রথম ঘণ্টায় মূল্য সূচকে নেতিবাচক প্রবণতা দেখা দেয়। তবে শেষ তিন ঘণ্টা টানা ঊর্ধ্বমুখী থাকে বাজার। ফলে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আগের কার্যদিবসের তুলনায় ২৪ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৪০০ পয়েন্টে। অপর দুই সূচকের মধ্যে শরিয়াহ সূচক ৮ ও ডিএসই-৩০ সূচক ৫ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ১ হাজার ২৩২ ও ১ হাজার ৮৯৫ পয়েন্টে।
দিনভর বাজারটিতে ৫২৮ কোটি ৮২ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ৫৩৫ কোটি ২৭ লাখ টাকা। অর্থাৎ আগের দিনের তুলনায় লেনদেন কমেছে ৬ কোটি ৪৫ লাখ টাকা।
এদিন ডিএসইতে লেনদেন হওয়া ১৯৬টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বেড়েছে। অন্যদিকে দাম কমেছে ১০৫টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৪৮টির।
টাকার অংকে ডিএসইতে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে ইস্টার্ণ ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার। কোম্পানিটির ১৮ কোটি ৩২ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। লেনদেনে দ্বিতীয় স্থানে থাকা নূরানী ডাইংয়ের ১৪ কোটি ৪১ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে এবং ১৪ কোটি ২৮ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে উঠে এসেছে জেএমআই সিরিঞ্জ।
এছাড়া বাজারটিতে লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ ১০ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে- ড্রাগোন সোয়েটার অ্যান্ড স্পিনিং, গ্লোবাল ইন্স্যুরেন্স, নিউ লাইন ক্লোথিং, এসকে ট্রিমস, ইষ্টল্যান্ড ইন্স্যুরেন্স, ন্যাশনাল লাইফ ইন্স্যুরেন্স এবং প্যাসেফিক ডেনিমস।
অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের সার্বিক সূচক সিএএসপিআই এদিন ৮৬ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৬ হাজার ৫৭৫ পয়েন্টে। বাজারটিতে হাত বদল হওয়া ২৫৯টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে দাম বেড়েছে ১৫৮টির, কমেছে ৭৩টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ২৮টির দর। লেনদেন হয়েছে ৪২ কোটি ৪২ লাখ টাকা।
এমএএস/এমএসএইচ/পিআর