অপ্রদর্শিত অর্থ বন্ডে বিনিয়োগের সুযোগ চায় ডিএসই

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৪:৪২ পিএম, ১৬ জুন ২০১৯

ফ্ল্যাট, জমি কেনা এবং হাইটেক পার্ক ও ইকোনমিক জোনের মতো অপ্রদর্শিত অর্থ বিনা প্রশ্নে পুঁজিবাজারের সঙ্গে সম্পৃক্ত বন্ডে বিনিয়োগের সুযোগ দেয়ার দাবি জানিয়েছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)। একই সঙ্গে পাঁচটি দাবি পুনর্বিবেচনার দাবি জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।

নতুন করে কিছু দাবি জানালেও ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে যেসব প্রস্তাব করা হয়েছে, তাতে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি হবে এবং জাতীয় অর্থনীতি আরও গতিশীল হবে বলে মনে করে ডিএসই।

প্রতিষ্ঠানটি বলছে, এসব প্রস্তাবনার মাধ্যমে বেসরকারি খাত আরও শক্তিশালী এবং বিকশিত হয়ে দেশে বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি হবে। যা দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আরও আকৃষ্ট করবে।

রোববার (১৬ জুন) ডিএসইর প্রধান কার্যালয়ে ২০১৯-২০২০ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট ঘোষণার পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি করা হয়।

এ সময় ডিএসইর চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবুল হাশেম, ব্যবস্থাপনা পরিচালক কে এ এম মাজেদুর রহমান, পরিচালক রকিবুর রহমান, শরীফ আতিউর রহমান, মিনহাজ মান্না ইমন এবং মনোয়ারা হাকিম আলী উপস্থিত ছিলেন।

ডিএসইর পক্ষে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক রকিবুর রহমান বলেন, বাজেটে অপ্রদর্শিত আয় নির্দিষ্ট কর প্রদান সাপেক্ষে ফ্ল্যাট, জমি কেনা এবং ইকোনমিক জোনে বিনিয়োগ করার সুযোগ দেয়া হয়েছে। এতে অর্থ পাচার রোধ হবে এবং বিনিয়োগ বাড়বে। আমরা শেয়ার বাজারের সঙ্গে সম্পৃক্ত বন্ডেও অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের সুযোগ চাই। এতে পুঁজিবাজার উপকৃত হবে এবং বিনিয়োগ বাড়বে।

এদিকে বোনাস লভ্যাংশ এবং অতিরিক্ত রিজার্ভের ওপর ১৫ শতাংশ কর আরোপের বিষয়ে বাজেটে যে প্রস্তাব করা হয়েছে সে বিষয়ে ডিএসইর পরিচালকরা সংবাদ সম্মেলনে দুই রকম মত তুলে ধরেন। মিনহাজ মান্না ইমন প্রস্তাবের বিপক্ষে কথা বললেও রকিবুর রহমান প্রস্তাবের পক্ষে অবস্থান নেন। এর প্রেক্ষিতে ডিএসইর চেয়ারম্যান প্রতিষ্ঠানটির পক্ষে বলেন, বাজেটে যে প্রস্তাব করা হয়েছে আমরা তার পক্ষে।

এর আগে কে এ এম মাজেদুর রহমান বলেন, ২০১৯-২০২০ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে শেয়ারবাজারের জন্য যেসব প্রস্তাবাদি রাখা হয়েছে এতে বাজারে বিনিয়োগের অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি হবে এবং জাতীয় অর্থনীতি আরও গতিশীল হবে।

তিনি বলেন, তালিকাভুক্ত কোম্পানির শেয়ারে পুঁজি খাটিয়ে বিনিয়োগকারীরা নগদ লভ্যাংশ প্রাপ্তির প্রত্যাশা করে। কিন্তু কোম্পানিগুলোর মধ্যে নগদের পরিবর্তে বোনাস লভ্যাংশ দেয়ার প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। এতে বিনিয়োগকারীরা তাদের প্রত্যাশিত প্রাপ্য থেকে বঞ্চিত হন। ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে বোনাস লভ্যাংশের পরিবর্তে নগদ লভ্যাংশ প্রদানকে উৎসাহিত করার জন্য কোনো প্রতিষ্ঠান বোনাস লভ্যাংশ দিলে সেই প্রতিষ্ঠানকে বোনাস লভ্যাংশের ওপর ১৫ শতাংশ হারে কর প্রদানের বিধান প্রস্তাব করা হয়েছে।

কোম্পানির অর্জিত মুনাফা থেকে বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ দেয়ার পরিবর্তে রিটেইনড আর্নিংস বা বিভিন্ন ধরনের রিজার্ভ হিসেবে রেখে দেয়ার প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। এতে প্রত্যাশিত লভ্যাংশ প্রাপ্তি থেকে বিনিয়োগকারীরা বঞ্চিত হন এবং শেয়ারবাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। এ ধরনের প্রবণতা রোধে কোনো কোম্পানির আর্থিক বছরে রিটেইনড আর্নিংস, রিজার্ভ ইত্যাদির সমষ্টি যদি পরিশোধিত মূলধনের ৫০ শতাংশের বেশি হয় তাহলে যতটুকু বেশি হবে তার ওপর সংশ্লিষ্ট কোম্পানিকে ১৫ শতাংশ হারে কর প্রদানের প্রস্তাব করা হয়েছে। আমরা এসব প্রস্তাবকে অভিনন্দন জানাই- যোগ করেন মাজেদুর রহমান।

তিনি আরও বলেন, ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদেরকে প্রণোদনা প্রদান এবং শেয়ারবাজারকে শক্তিশালী করার জন্য ব্যক্তিশ্রেণির করদাতাদের জন্য পাবলিকলি ট্রেডেড কোম্পানি হতে প্রাপ্ত লভ্যাংশ আয়ের করমুক্ত সীমা ২৫ হাজার থেকে বাড়িয়ে ৫০ হাজার টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়েছে। এতে বিনিয়োগকারীরা শেয়ারবাজারে অধিক বিনিয়োগে উৎসাহিত হবে এবং বছরের তারল্য সরবরাহ বৃদ্ধি পাবে। একই সঙ্গে ব্যক্তি ও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগে উৎসাহিত হবে।

এছাড়াও প্রস্তাবিত বাজেটে ব্যাংক, শেয়ারবাজার, বীমা ও অন্যান্য আর্থিক খাতের সংস্থার ও উন্নয়নে সরকার নানামুখী কার্যক্রম গ্রহণ ও বাস্তবায়নে পর্যায়ক্রমে ব্যাংকের মূলধনের পরিমাণ বাড়ানো, ব্যাংক কোম্পানি আইনের সংস্কার, প্রয়োজনবোধে ব্যাংক একীভূতকরণ, খেলাপি ঋণ প্রহীতাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা, সুদের হার এক অংকে (সিঙ্গেল ডিজিট) নামিয়ে আনা এবং হোল্ডিং কোম্পানি ও সাবসিডিয়ারি কোম্পানিসমূহের কার্যক্রম যুগোপযোগী করার লক্ষ্যে ব্যাংক কোম্পানি আইনে প্রয়োজনীয় সংশোধন আনার কথা বলা হয়েছে। এগুলো বাস্তবায়ন হলে শেয়ারবাজারে আরও উন্নতি হবে।

পুনর্বিবেচনার দাবি জানানো ডিএসইর পাঁচ প্রস্তাবের মধ্যে রয়েছে-

১. স্টক এক্সচেঞ্জকে ডিমিউচ্যুয়ালাইজড পরবর্তী পাঁচ বছরের জন্য পূর্ণ কর অব্যাহতি দেয়া।

২. এসএমই মার্কেটের লেনদেনের ওপর উৎসে কর অব্যাহতি দেয়া।

৩. স্টক এক্সচেঞ্জের ট্রেডিং প্লাটফর্মের মাধ্যমে ট্রেজারি বিল এবং বন্ডের লেনদেনের ওপর কর অব্যাহতির বিষয়ে সুস্পষ্টকরণ।

৪. তালিকাভুক্ত ও অতালিকাভুক্ত কোম্পানির মধ্যে কর্পোরট কর হারের পার্থক্য ১০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২০ শতাংশ করা এবং

৫. স্টক এক্সচেঞ্জের ট্রেক হোল্ডারদের নিকট থেকে উৎসে কর সংগ্রহের হার হ্রাস করা।

এমএএস/এমএমজেড/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।