রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন চ্যালেঞ্জিং : ডিসিসিআই

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৯:৩৯ পিএম, ১৩ জুন ২০১৯

প্রস্তাবিত বাজেটকে একটি ধারাবাহিক বাজেট বলে মন্তব্য করেছে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ড্রাস্ট্রি (ডিসিসিআই)। তাদের মতে এ ধরনের বড় বাজেট বাস্তবায়নের সক্ষমতা বৃদ্ধি, জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণ এবং দক্ষতা উন্নয়ন একান্ত অপরিহার্য। একই সঙ্গে বাজেটে বড় রাজস্ব আয়ের যে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে তা অর্জন চ্যালেঞ্জিং হবে।

বৃহস্পতিবার (১৩ জুন) ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেটের ওপর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় ডিসিসিআইর পক্ষ থেকে এমন কথা বলা হয়।

ঢাকা চেম্বার জানিয়েছে, বাজেটে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৭৭ হাজার ৮১০ কোটি টাকা। এর মধ্যে এনবিআরকে আদায় করতে হবে ৩ লাখ ২৫ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। বিগত অর্থবছরের তুলনায় এত বড় রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা চ্যালেঞ্জিং।

নতুন বাজেটে সামগ্রিক ঘাটতি থাকছে ১ লাখ ৪৫ হাজার ৩৮০ কোটি টাকা। ঘাটতি বাজেট পূরণে ৪৭ হাজার ৩৬৪ কোটি টাকা ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে অর্থায়ন করা হবে, যা সহনশীল বলে মনে করছে ডিসিসিআই। তবে এ জন্য বেসরকারিখাতে ঋণ প্রবাহ যেন কমে না যায় সেদিকেও সরকারকে খেয়াল রাখতে হবে।

আগামী অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আকার ২ লাখ ২ হাজার ৭২১ কোটি টাকা। এডিপিতে ব্যয় বৃদ্ধি দেশের অবকাঠামা উন্নয়নে গুরুত্বর্পূণ ভূমিকা রাখবে। তবে প্রতটি প্রকল্পে স্বচ্ছতা ও গুণগত মান নিশ্চিত করা, নিয়মিত পর্যবেক্ষণ ও সময়মতো বাস্তবায়ন নিশ্চিতের প্রস্তাব দেয়া হয়।

আর্থিক সংস্কার : বিগত অর্থবছরে বেসরকারিখাতে ঋণপ্রবাহ ছিল ১২ দশমিক ৫ শতাংশ। যদিও মুদ্রানীতি অনুযায়ী বেসরকারিখাতে ঋণপ্রবাহ ১৬ দশমিক ৫ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশষে হিসাবে খেলাপি ঋণ ১ লাখ ১০ হাজার ৮৭৩ কোটি টাকা। দেশের খেলাপি ঋণের ৪৮ শতাংশই হচ্ছে সরকারি ব্যাংকের।

এছাড়াও প্রস্তাবিত বাজেটে ‘ইনসলভেনসি অ্যান্ড ব্যাংক্রাপসি ল’ শিরোনামে একটি আইন প্রণয়নের প্রস্তাব করা হয়েছে এবং এ ধরনের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে ঢাকা চেম্বার।

সরকারি ব্যাংকগুলাতে পুনঃর্অথায়নরে জন্য প্রতিবছর বিপুল পরিমান অর্থ বাজেট থেকে বরাদ্দ রাখতে হয়। ফলে রাজস্বখাত থেকে আহরিত অর্থ উন্নয়ন প্রকল্পে ব্যয় করার ক্ষেত্রে চাপ সৃষ্টি হয়।

অন্যদিক প্রতিবছর খেলাপি ঋণের কারণে ঋণের সুদহার কমানো যাচ্ছে না। ফলে কস্ট অব ডুয়িং বিজনেসে বা ব্যবসা পরিচালন ব্যয় বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ অবস্থায় ব্যাংকিং খাতে সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা নিশ্চিতে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় ব্যাংকিং কমিশন গঠন, মার্জার ও অ্যাকুইজিসনের উদ্যোগকে স্বাগত জানায় ডিসিসিআই।

বাজেট প্রতিক্রিয়ায় ব্যাংক ঋণের সুদহার সিঙ্গেল ডিজেটে নিয়ে আসার প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়ে এ প্রস্তাব বাস্তবায়নে সরকারের দ্রুত কার্যকর উদ্যোগ কামনা করেছে ব্যবসায়ীদের এই সংগঠন।

সেই সঙ্গে ভ্যাট আইন বাস্তবায়নে জনগণের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধি ও ভ্যাট রিটার্ন পদ্ধতি সহজীকরণ করা প্রয়োজন। ভ্যাটের আইন সহজীকরণ ও হয়রানি যেন না হয় সে দিকে লক্ষ্য রাখার পরামর্শ দিয়েছে ডিসিসিআই।

কর্পোরেট ট্যাক্স : বিনিয়োগ পরিবেশের উন্নয়ন ও কর্পোরেট করহার হ্রাস না করলে সরকারের প্রত্যাশিত বেসকারি বিনিয়োগ বাড়বে না। আর বিনিয়োগ না বাড়লে বাজেটে নতুন র্কমসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে, তা অর্জন করা কঠিন হয়ে পড়বে। ইজ অব ডুয়িং বিজনেস উন্নয়নে ব্যবসা পরিচালন ব্যয় হ্রাসসহ সব ধরনের উদ্যোগ নেয়ার জন্য বাজেটে সুনির্দিষ্ট দিকনির্দেশনা প্রত্যাশা করছে ঢাকা চেম্বার।

ডিসিসিআই বলেছে তারা জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৮.২% এর লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব বলে মনে করে। তবে এর সুফল ভোগ করতে হলে কর্মসংস্থান সহায়ক প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করা এবং দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ আর্কষণ করা প্রয়োজন।

বিশেষ করে বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়াতে বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের অধীনে দেশের সব জেলায় ওয়ান স্টপ সার্ভিস বাস্তবায়ন এবং তাতে বেসরকারিখাতের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা জরুরি।

পাশাপাশি পুঁজিবাজারে লক ইন পিরিয়ড বা এক্সিট পিরিয়ড ৩ বছরের পরিবর্তে ১ বছর করার প্রস্তাব প্রশংসনীয় এবং শেয়ার মার্কেটে সুশাসন নিশ্চিত করা জরুরি।

নতুন উদ্যোক্তা সৃষ্টি ও বেকার যুবকদের কর্মসংস্থানের জন্য স্টার্ট আপ ফান্ড গঠন করার সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানিয়ে বলা হয়েছে একই সঙ্গে যোগ্য ও সম্ভাবনাময় এবং সৃষ্টিশীল উদ্যোক্তাদের এ ফান্ড প্রদান করা নিশ্চিত করতে হবে।

প্রস্তাবিত বাজেটে (২০১৯-২০) নতুন করে ৮০ লাখ করদাতা বাড়ানোর ঘোষণা এসেছে। বর্তমানে করদাতার সংখ্যা ২০ লাখ। নতুন ৮০ লাখ যোগ হলে করদাতার সংখ্যা দাঁড়াবে ১ কোটি।

ডিসিসিআই মনে করে উপজেলা পর্যায়ে করযোগ্য ব্যাক্তিকে ট্যাক্স নেটের আওতায় আনতে না পারলে ১ কোটি করদাতার সংখ্যা বাড়ানো সম্ভবপর নাও হতে পারে। বিদ্যমান করদাতাদের ওপর করবোঝা না বাড়িয়ে ট্যাক্স নেট বাড়ানোর এখনই উপযুক্ত সময়।

প্রস্তাবিত বাজেটে জমি ও অ্যাপার্টমেন্ট ক্রয়ের ক্ষেত্রে বিদ্যমান রেজিস্ট্রেশন ফি কমানোর সিদ্ধান্তকে ঢাকা চেম্বার সাধুবাদ জানিয়ে পাট পণ্যের বহুমুখীকরণে বিশেষ বরাদ্দ রাখার আহ্বান জানিয়েছে। এছাড়াও তৈরি পোষাক রফতানিতে ১% হারে ক্যাশ ইনসেনটিভ প্রদানের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে।

‘সমৃদ্ধ আগামীর পথযাত্রায় বাংলাদেশ : সময় এখন আমাদের, সময় এখন বাংলাদেশের’ নাম দিয়ে প্রস্তাবিত বাজেটের আকার ধরা হয়েছে পাঁচ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকা। চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরের মূল বাজেট চার লাখ ৬৪ হাজার ৫৭৩ কোটি টাকা। তবে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী, রাজস্ব আদায় করতে না পারায় ও উন্নয়ন প্রকল্পে পরিকল্পনা অনুযায়ী অর্থ খরচ করতে না পারায় চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের আকার নির্ধারণ করা হয় চার লাখ ৪২ হাজার ৫৪১ কোটি টাকা। অর্থাৎ আগামী বাজেটের আকার সংশোধিত বাজেট থেকে ৮০ হাজার ৬৪৯ কোটি টাকা বেশি।

বৃহস্পতিবার (১৩ জুন) জাতীয় সংসদে ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট উপস্থাপন হয়। এটি দেশের ৪৮তম এবং বর্তমান সরকারের তৃতীয় মেয়াদের প্রথম বাজেট। ‘সমৃদ্ধ আগামীর পথযাত্রায় বাংলাদেশ : সময় এখন আমাদের, সময় এখন বাংলাদেশের’ শিরোনামে প্রস্তাবিত বাজেটের আকার ধরা হয় পাঁচ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকা। দেশের ৪৮ বছরের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় বাজেট এটি।

বৃহস্পতিবার বেলা ৩টায় স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে বাজেট অধিবেশন শুরু হয়। বরাবরের মতো বাজেট পেশ করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। নতুন অর্থমন্ত্রী হিসেবে এটি তার প্রথম বাজেট। যদিও গত সরকারের পরিকল্পনামন্ত্রী হিসেবে অনেক বাজেট প্রণয়নে পরোক্ষভাবে জড়িত ছিলেন তিনি।

শুরুতে দাঁড়িয়ে বাজেট বক্তৃতা শুরু করলেও পরে স্পিকারের অনুমতি নিয়ে অর্থমন্ত্রী নিজ আসনে বসে প্রস্তাবিত ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেট উপস্থাপন করেন। কিন্তু বিকেল ৪টার পর অসুস্থ অর্থমন্ত্রীর পক্ষে প্রস্তাবিত বাজেট উপস্থাপন সম্ভবপর না হওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্পিকারের অনুমতি নিয়ে বাকি অংশ সংসদে উপস্থাপন করেন।

বেলা ৪টা ৪১ মিনিটে ‘প্রস্তাবিত বাজেট সংসদে উপস্থাপিত হলো’ মর্মে ঘোষণা দেন স্পিকার।

প্রস্তাবিত বাজেট পাস হবে ৩০ জুন। ১ জুলাই থেকে শুরু হবে নতুন অর্থবছর।

এর আগে মন্ত্রিসভা ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের অনুমোদন দেয়। বাজেট ঘোষণার আগে দুপুর ১টার একটু পর জাতীয় সংসদ ভবনে বিশেষ বৈঠকে মন্ত্রিসভা এ অনুমোদন দেয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে জাতীয় সংসদ ভবনে মন্ত্রিসভার এ বিশেষ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

উল্লেখ্য, চলতি অর্থবছর মূল বাজেটের আকার দাঁড়ায় চার লাখ ৬৪ হাজার ৫৭৩ কোটি টাকা। তবে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী, রাজস্ব আদায় করতে না পারা এবং উন্নয়ন প্রকল্পে পরিকল্পনা অনুযায়ী অর্থ খরচ করতে না পারায় চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের আকার নির্ধারণ করা হয় চার লাখ ৪২ হাজার ৫৪১ কোটি টাকা। অর্থাৎ আগামী বাজেটের আকার সংশোধিত বাজেট থেকে ৮০ হাজার ৬৪৯ কোটি টাকা বেশি।

এসআই/এমএমজেড/এমকেএইচ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।