৫৩ দেশে শ্রমিক পাঠানোর সুযোগ আসছে
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৮:৪১ পিএম, ১৩ জুন ২০১৯
নতুন নতুন শ্রমবাজারের সন্ধানে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অধীন ‘আন্তর্জাতিক শ্রমবাজারে বাংলাদেশি অভিবাসী কর্মীদের কর্মসংস্থানের চাহিদা বিশ্লেষণ’ শীর্ষক একটি সমীক্ষা এরই মধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। এর ফলে ৫৩টি দেশে শ্রমবাজার সম্পর্কে ধারণা ও সুপারিশ পাওয়া গেছে, যা বৈদেশিক কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধি করবে বলে ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে জানানো হয়েছে।
‘সমৃদ্ধ আগামীর পথযাত্রায় বাংলাদেশ : সময় এখন আমাদের, সময় এখন বাংলাদেশের’ শিরোনামে ২০১৯-২০ অর্থবছরের জন্য ৫ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকার বাজেট পেশ করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এটি ক্ষমতাসীন সরকারের চলতি মেয়াদের প্রথম এবং দেশের ৪৮তম বাজেট।
বৃহস্পতিবার বিকেলে জাতীয় সংসদে ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেট উপস্থাপনকালে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, ‘আমি যতটুকু পড়তে পেরেছি বাকিটুকু মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ করছি। উনি পড়ে দেবেন।’ পরে জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর অনুমতিক্রমে বাজেট উপস্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, ‘প্রতিবছর বিপুল জনশক্তি শ্রমবাজারে প্রবেশ করছে। এ বিষয়কে মাথায় রেখে অভ্যন্তরীণ শ্রমবাজারের পাশাপাশি বৈদেশিক শ্রমবাজারের দিকে বিশেষ নজর দেয়া হয়েছে। আমাদের সফল কূটনৈতিক প্রচেষ্টায় মালয়েশিয়া ও দক্ষিণ কোরিয়ায় কর্মী প্রেরণ উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। বিদেশে কর্মী প্রেরণের ক্ষেত্রে দক্ষতা উন্নয়নের বিষয়ে আমাদের জোর প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে । আমাদের সময়মতো পরিকল্পনা গ্রহণ এবং তার সফল বাস্তবায়নের ফলে বিদেশে দক্ষ শ্রমিক প্রেরণের হার বৃদ্ধি পেয়েছে। যা বিদেশে আমাদের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করাসহ রেমিট্যান্স বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করছে।’
২০১৬ সালে ‘ফ্রি মালয়েশিয়া টুডে’ পত্রিকা মালয়েশিয়ার চাকরির বাজারে দক্ষ বৈদেশিক শ্রমশক্তির ওপর প্রকাশিত প্রতিবেদন প্রকাশ করে। সেখানে উল্লেখ করা হয়, মালয়েশিয়ায় বিভিন্ন শিল্প ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে ব্যবস্থাপনা পদে ও কারিগরি দক্ষতা প্রয়োজন এমন পদে কর্মরত বিদেশিদের মাঝে ৩৭ শতাংশই হচ্ছে বাংলাদেশের নাগরিক।’
বক্তৃতায় বলা হয়, নতুন নতুন শ্রমবাজারের সন্ধানে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অধীন ‘আন্তর্জাতিক শ্রমবাজারে বাংলাদেশি অভিবাসী কর্মীদের কর্মসংস্থানের চাহিদা বিশ্লেষণ’ শীর্ষক একটি সমীক্ষা এরই মধ্যে সম্পন্ন হয়েছে । এর ফলে ৫৩টি দেশে শ্রমবাজার সম্পর্কে ধারণা ও সুপারিশ পাওয়া গেছে, যা বৈদেশিক কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধি করবে। অভিবাসন ব্যয় নিয়ন্ত্রণ এবং বৈধ রিক্রুটিং এজেন্টগুলোর স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণ এবং নিরাপদ অভিবাসন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে আমরা আইনি কাঠামাতেও সংস্কার এনেছি। এ ধারাবাহিকতায় ‘বৈদেশিক কর্মসংস্থান ও অভিবাসী ব্যবস্থাপনা বিধিমালা ২০১৭’, ‘ওয়েজ ওর্নার্স কল্যাণ বোর্ড আইন, ২০১৮’ প্রণয়ন করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার বেলা ৩টায় স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে বাজেট অধিবেশন শুরু হয়। বরাবরের মতো বাজেট পেশ করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। নতুন অর্থমন্ত্রী হিসেবে এটি তার প্রথম বাজেট। যদিও গত সরকারের পরিকল্পনামন্ত্রী হিসেবে অনেক বাজেট প্রণয়নে পরোক্ষভাবে জড়িত ছিলেন তিনি।
শুরুতে দাঁড়িয়ে বাজেট বক্তৃতা শুরু করলেও পরে স্পিকারের অনুমতি নিয়ে অর্থমন্ত্রী নিজ আসনে বসে প্রস্তাবিত ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেট উপস্থাপন করেন। কিন্তু বিকেল ৪টার পর অসুস্থ অর্থমন্ত্রীর পক্ষে প্রস্তাবিত বাজেট উপস্থাপন সম্ভবপর না হওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্পিকারের অনুমতি নিয়ে বাকি অংশ সংসদে উপস্থাপন করেন।
বেলা ৪টা ৪১ মিনিটে ‘প্রস্তাবিত বাজেট সংসদে উপস্থাপিত হলো’ মর্মে ঘোষণা দেন স্পিকার।
প্রস্তাবিত বাজেট পাস হবে ৩০ জুন। ১ জুলাই থেকে শুরু হবে নতুন অর্থবছর।
এর আগে মন্ত্রিসভা ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের অনুমোদন দেয়। বাজেট ঘোষণার আগে দুপুর ১টার একটু পর জাতীয় সংসদ ভবনে বিশেষ বৈঠকে মন্ত্রিসভা এ অনুমোদন দেয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে জাতীয় সংসদ ভবনে মন্ত্রিসভার এ বিশেষ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
উল্লেখ্য, চলতি অর্থবছর মূল বাজেটের আকার দাঁড়ায় চার লাখ ৬৪ হাজার ৫৭৩ কোটি টাকা। তবে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী, রাজস্ব আদায় করতে না পারা এবং উন্নয়ন প্রকল্পে পরিকল্পনা অনুযায়ী অর্থ খরচ করতে না পারায় চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের আকার নির্ধারণ করা হয় ৪ লাখ ৪২ হাজার ৫৪১ কোটি টাকা। অর্থাৎ আগামী বাজেটের আকার সংশোধিত বাজেট থেকে ৮০ হাজার ৬৪৯ কোটি টাকা বেশি।
এমইউএইচ/এসআর/পিআর