সেই ৩৫ কোটি টাকার উৎসের খোঁজে নামছে দুদক

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৯:৫৬ পিএম, ১৪ মে ২০১৯

বেসরকারি ন্যাশনাল ক্রেডিট অ্যান্ড কমার্স (এনসিসি) ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোসলেহ উদ্দিন আহমেদের ব্যাংক হিসাবে প্রায় ৩৫ কোটি টাকার উৎস খতিয়ে দেখতে শিগগিরই নামছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

এনসিসির এমডির ব্যাংক হিসাবে থাকা ওই টাকার উৎস খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নিতে গত ৭ মে দুদকে চিঠি দেয় বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)।

এ বিষয়ে দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা (উপ পরিচালক) প্রণব কুমার ভট্টাচার্য্য জাগো নিউজকে বলেন, এনসিসি ব্যাংকের এমডির ব্যাংক হিসাবে অস্বাভাবিক লেনদেনের বিষয়ে বিএফআইইউ গত সপ্তাহে একটি চিঠি দিয়েছে। দুদকের সচিব বিভাগ থেকে চিঠিটি কমিশনে পাঠানো হয়েছে। শিগগিরই এ বিষয়ে কমিশন সিন্ধান্ত নেবে।

দুদকের একজন কর্মকর্তা জানান, ৩৫ কোটি টাকার উৎসের খোঁজে শিগগিরই নামবে দুদক।

বিএফআইইউয়ের বিশেষ অনুসন্ধানে এনসিসির এমডির বিভিন্ন হিসাবে প্রায় ৩৫ কোটি টাকার লেনদেন বেরিয়ে এসেছে।

বিএফআইইউর অনুসন্ধান তথ্য অনুযায়ী, কয়েকটি ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও ব্রোকারেজ হাউসে মোসলেহ উদ্দিনের নিজের ও তার স্ত্রীর নামে বড় অংকের লেনদেন হয়েছে। সংস্থাটি এমডির পাঁচটি ব্যাংক হিসাব জব্দ করেছে। ব্যাংকগুলো হলো- এনসিসি, যমুনা, প্রাইম, সিটি ও প্রিমিয়ার। একই সঙ্গে রিলায়েন্স ফাইন্যান্স ও ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের হিসাবও জব্দ করেছে বিএফআইইউ।

প্রতিবেদনে বিএফআইইউ বলেছে, ব্যাংকের শীর্ষ পর্যায়ে থাকা অবস্থায় মোসলেহ উদ্দিন আহমেদে ক্ষমতার অপব্যবহার, দুর্নীতি ও কর ফাঁকির মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অবৈধ অর্থের মালিক হয়েছেন।

জানা গেছে, যমুনা ব্যাংকের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) পদ থেকে ২০১৫ সালের ৯ ডিসেম্বর এনসিসি ব্যাংকে অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এএমডি) পদে যোগ দেন মোসলেহ উদ্দিন। ২০১৭ সালের আগস্টে তিনি এমডির দায়িত্ব পান।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে এনসিসি এমডি মোসলেহ উদ্দিন আহমেদ জাগো নিউকে বলেন, ‘একটি লেনদেনের তথ্য এসেছে। আমি তথ্য দিয়েছি। আমি পাঁচ কোটি টাকার একটি জমি বিক্রি করেছি। ওই টাকা আমার একটা অ্যাকাউন্টে ঢুকেছে। ওই টাকা ফিক্স ডিপোজিট করেছি। সেটা আবার আমার অ্যাকাউন্টে এসেছে। ওই টাকা আবার আরেকটা অ্যাকাউন্টে স্থানান্তর করেছি। এভাবেই লেনদেন বেড়েছে।’

কোনো গ্রাহকের অর্থ তার অ্যাকাউন্টে ঢুকে নাই দাবি করে তিনি বলেন, ‘লেনদেন দিয়ে একটি মানুষের কিছু বুঝা যায় না। কোনো গ্রাহকের এক পয়সাও আমার অ্যাকাউন্টে ঢুকেনি। আমার জমি বিক্রির টাকা এখানে এসেছে।’

৩৫ কোটি টাকার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘যে অ্যামাউন্টের কথা বলা হয়েছে, এটি আমার ৩০ বছরের অ্যাকাউন্টের লেনদেনের মোট হিসাব যোগ করে বলেছে। আসলে কত টাকা আছে, এটা তারা ভালো জানেন।’

দুদকে বিএফআইইউয়ের পাঠানো তথ্য অনুযায়ী, এনসিসি ব্যাংক ভবন শাখায় মোসলেহ উদ্দিন আহমেদের হিসাবে প্রতি মাসের বেতনবাবদ পাঁচ লাখ ৯৯ হাজার ৮৪০ টাকা জমা হয়। ওই শাখাতেই একটি বৈদেশিক মুদ্রার হিসাবে তার নামে বিভিন্ন সময়ে জমা হয়েছে ১৩ হাজার ডলার।

বিদেশি লেনদেন প্রসঙ্গে এনসিসির এমডি বলেন, ‘বিদেশ থেকে কোনো টাকা আসেনি। আমার ভাগনি বিদেশে চলে যাওয়ার সময় তাদের এক কোটি টাকা সঞ্চয় ছিল, তা পে-অর্ডারের মাধ্যমে আমার অ্যাকাউন্টে পাঠিয়েছে; বিনিয়োগ করার জন্য। সেই টাকা আমি একটা ফিক্স ডিপোজিট করেছি। সেই টাকা তাদের অ্যাকাউন্ট থেকে আমার অ্যাকাউন্টে এসেছে এফডিআরের মাধ্যমে। এ বিষয়টি ব্যাখ্যা ও প্রয়োজনীয় তথ্য বাংলাদেশ ব্যাংকে দিয়েছি।’

বিএফআইইউয়ের তদন্তে দেখা গেছে, ২০১৫ সালে যমুনা ব্যাংক ছেড়ে আসলেও ওই ব্যাংকে মোসলেহ উদ্দিনের অ্যাকাউন্টে নিয়মিত টাকা জমা হয়েছে। যমুনা ব্যাংকে মোসলেহ উদ্দিনের নামে একটি হিসাবে ছয় কোটি এবং স্ত্রী লুনা শারমিনের সঙ্গে একটি যৌথ হিসাবে সাড়ে তিন কোটি টাকা রয়েছে।

২০১৮ সালের ৫, ১২, ১৫ ও ২৫ এপ্রিল ওই দুই অ্যাকাউন্টে ওই সাড়ে ৯ কোটি টাকা জমা হয়। এর মধ্যে চার কোটি টাকা এসেছে যমুনা ও এনসিসি ব্যাংকের গ্রাহক ওয়েস্টার্ন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের কাছ থেকে।

দি সিটি ব্যাংকে মোসলেহ উদ্দিন আহমেদ, তার স্ত্রী লুনা শারমিন ও তাদের যৌথ নামে মোট তিনটি অ্যাকাউন্টের তথ্য এসেছে বিএফআইইউয়ের প্রতিবেদনে। বিভিন্ন সময়ে মোট সাড়ে ৬ কোটি টাকা জমা হয়েছে এসব অ্যাকাউন্টে।

এ ছাড়া প্রাইম ব্যাংকের ইসলামী ব্যাংকিং শাখায় ৪ কোটি ৩৩ লাখ টাকা এবং প্রিমিয়ার ব্যাংকে ২ কোটি ৮ লাখ টাকা জমা হয়েছে এমডি মোসলেহ উদ্দিনের নামে।

রিলায়েন্স ফাইন্যান্সে তার নামে ৪ কোটি টাকা এবং ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ে ২ কোটি টাকার মেয়াদি আমানত রয়েছে। এর বাইরে সিটি ব্রোকারেজ, এনসিসি সিকিউরিটিজ, সিএসএমএল সিকিউরিটিজ ও ই-সিকিউরিটিজে মোসলেহ উদ্দিনের হিসাবে জমা রয়েছে ২ কোটি ২৬ লাখ টাকা।

এদিকে গত বছরের ৩০ জুনভিত্তিক এনবিআরে দাখিল করা বিবরণীতে মোসলেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, তার কাছে সব মিলে ২ কোটি ৬৭ লাখ টাকা জমা আছে। আর ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৮৮ লাখ টাকা আয় করেন।

এ প্রসঙ্গে বিএফআইইউ বলছে, আয়কর বিবরণীতে মোসলেহ উদ্দিন অসত্য তথ্য দিয়েছেন, যা অর্থ পাচার প্রতিরোধ আইন, ২০১২–এর ২ (শ) মোতাবেক ‘কর সংক্রান্ত অপরাধ’।

এসআই/জেডএ/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।