ব্লু ইকোনমি খাতে বাজেট বরাদ্দ রাখার তাগিদ

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৭:১১ পিএম, ১৪ মে ২০১৯

সামুদ্রিক সম্পদ কাজে লাগিয়ে দেশকে অর্থনৈতিকভাবে আরও শক্তিশালী করতে সরকারের উদ্যোগে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে ব্লু ইকোনমি জোন গড়ে তোলা হয়। প্রত্যক্ষভাবে চারটিসহ মোট ১৭টি মন্ত্রণালয়ের ব্লু ইকোনমি নিয়ে কাজ করার কথা। কিন্তু বাস্তবে তেমন কোনো কাজই হচ্ছে না।

কারণ সরকার খুব আগ্রহের সঙ্গে ব্লু ইকোনমি জোন করলেও তা পরিচালনার জন্য বাজেটে কোনো অর্থ বরাদ্দ রাখেনি। ফলে এসব জোনের কার্যক্রমও অনেকটা মুখ থুবড়ে পড়ার অবস্থা। এমতাবস্থায় আন্তঃমন্ত্রণালয় সমন্বয় সেল গঠন করার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

মঙ্গলবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারের পেট্রোবাংলা ভবনে গ্রীনটেক ফাউন্ডেশন কর্তৃক আয়োজিত ‘প্রি-বাজেট ডিসকাশন অন ব্লু ইকোনমি’ শীর্ষক আলোচনা সভায় সংশ্লিষ্টরা এসব কথা বলেন। গ্রীনটেক ফাউন্ডেশনের ভাইস চেয়ারম্যান ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএ’র সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ড. এ কে এম সাইফুল মজিদের পরিচালনায় এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিশিষ্ট পরিবেশবিদ ও গবেষক ড. আতিক রহমান।

সভায় অন্যান্যদের মধ্যে আরও বক্তব্য দেন অতিরিক্ত সচিব ড. গোলাম শফিউদ্দিন এনডিসি, ঢাকা বিশ্বিবিদ্যালয়ের সমুদ্র বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান মো. জোবায়ের আলম, উত্তরা ইউনিভার্সিটির সহকারী অধ্যাপক ড. দিলরুবা চৌধুরী, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব খোরশেদ আলম, গ্রীনটেক ফাউন্ডেশনের সিইও লুৎফুর রহমান, সাংবাদিক গাজী আনোয়ার প্রমুখ।

ড. আতিক রহমান বলেন, আমাদের দেশের সমুদ্র অর্থনৈতিক এরিয়া অনেক বেশি। কিন্তু আমরা সমুদ্রের সম্পদ কীভাবে আহরণ করবো, তার জন্য সঠিক গবেষণা দরকার। সরকার চারটি মন্ত্রণালয়ে ব্লু ইকোনোমি সেল গঠন করেছে। কিন্তু মন্ত্রণালয়গুলো তেমন ভূমিকা রাখতে পারছে না। মন্ত্রণালগুলোর উচিৎ ব্লু ইকোনমি বিষয়ে এবং সমুদ্র সম্পদ নির্ণয়ে গবেষণাধর্মী প্রকল্প হাতে নেয়া। এতে আমরা সমুদ্র থেকে কী পরিমাণ মৎস্য আহরণ করব তার সঠিক পরিমাপ করা যাবে। আবার গভীর সমুদ্র থেকে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ আহরণেও একটা সমীক্ষা চালানো সম্ভব হবে।

তিনি বলেন, যত দ্রুত সম্ভব আন্তঃমন্ত্রণালয় সমন্বয় সেল গঠন করে বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণ করতে হবে। আর এসব প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে সমুদ্র অর্থনীতির কাছাকাছি পৌঁছাতে হবে। সমুদ্র সম্পদ আহরণের সক্ষমতা গড়ে তুলতে হবে। এ জন্য বিনিয়োগের বিকল্প নেই। আর এ বিনিয়োগ প্রথম সরকারের পক্ষ থেকেই করতে হবে। ব্লু ইকোনমির সুফল পেতে বাজেটে বরাদ্দ জরুরি। এখাতে জাতীয় বাজেটে বরাদ্দ না থাকায় বিশাল অঙ্কের সামুদ্রিক সম্পদ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে দেশ।

তিনি আরও বলেন, আমাদের জনসংখ্যা ব্যাপক হারে বাড়ছে। সে তুলনায় গ্রোথ বাড়ছে না বরং কমে যাচ্ছে। গ্রোথ বাড়াতে হলে আমাদের নিজেস্ব সম্পদ আহরণের দিকে গুরুত্ব দিতে হবে। এ ক্ষেত্রে সামুদ্রিক সম্পদই হতে পারে আমাদের অর্থনীতির মুল চালিকাশক্তি।

ড. গোলাম শফি উদ্দিন বলেন, ব্লু ইকোনমির বিষয়ে আমরা ইউনিক আইডিয়া নিয়ে এগোচ্ছি। প্রত্যক্ষভাবে চারটি মন্ত্রণালয়ে ব্লু ইকোনোমি জোন গঠন করা হলেও প্রত্যক্ষভাবে এর সঙ্গে ১৭টি মন্ত্রণালয় কাজ করছে। সরকার মনে করেছে সেল হওয়া দরকার তাই হয়েছে। কিন্তু সেলগুলো টাকার অভাবে তাদের কার্যক্রম চালাতে পারছে না। ভালো উদ্যোগও অর্থের অভাবে বাস্তবায়ন হচ্ছে না।

ব্লু ইকোনোমির কাজ এগিয়ে নিতে কী পরিমাণ অর্থ প্রয়োজন হবে সে বিষয়ে মন্ত্রণালয়গুলোকে একত্রে বসে সিদ্ধান্ত নিতে হবে । সে অনুযায়ী সরকারের সঙ্গে আলাপ আলোচনা করতে হবে। সমুদ্র সম্পদ কাজে লাগাতে হলে আলাদাভাবে বাজেটে বরাদ্দ রাখতে হবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

খোরশেদ আলম বলেন, ব্লু ইকোনমি আমাদের দেশের সম্ভাবনাময় খাত। কিন্তু দুঃখের বিষয়, এ বিষয়ে চারটি মন্ত্রণালয়ে সেল গঠন করা হলেও তা আজ পর্যন্ত কোনো প্রকল্প তৈরি করতে পারেনি। এটা আমাদের জন্য বড় ব্যর্থতা। প্রকল্প হাতে না নিলে অর্থ বরাদ্দ আসবে কীভাবে?

তিনি বলেন, শুধু অর্থ বরাদ্দের কথা বললে হবে না, মন্ত্রণালয়কগুলোকে প্রজেক্ট দাঁড় করাতে হবে। কাজের জায়গায় যেতে হবে। তাহলে অর্থের বরাদ্দ চলে আসবে।

এমইউএইচ/এমএসএইচ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।