এবার শেয়ারবাজারে বড় দরপতন
টানা দুই কার্যদিবস বড় উত্থানের পর সোমবার দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) এবং অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সবকটি মূল্যসূচকের বড় পতন হয়েছে। সেই সঙ্গে কমেছে লেনদেনের পরিমাণও।
বিশ্লেষকরা বলছেন, গত কয়েকদিনে শেয়ারবাজারে মূল্যসূচকের যে চিত্র দেখা গেছে, তা কিছুটা হলেও অস্বাভাবিক। আজ বড় উত্থান তো কাল বড় দরপতন- এটা শেয়ারবাজারের স্বাভাবিক ধর্ম হতে পারে না। শেয়ারবাজারে উত্থান-পতন থাকবে, তবে এসব উত্থান-পতনে একটা ধারাবাহিকতা থাকা উচিত।
সরকারের সিদ্ধান্ত শেয়ারাজারে বিনিয়োগের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ইনভেস্টমেন্ট কর্পোরেশন অব বাংলাদেশকে (আইসিবি) ৮৫৬ কোটি টাকা দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়ায় গতকাল (রোববার) ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ১০৮ পয়েন্ট বেড়ে যায়।
আর নতুন অর্থবছরের বাজেটে বিনিয়োগকারীদের জন্য বিশেষ সুবিধা দেয়া হবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) চেয়ারম্যানের এমন মন্তব্যে বৃহস্পতিবার ডিএইর প্রধান সূচক বাড়ে ৮৩ পয়েন্ট। অর্থাৎ টানা দুই কার্যদিবসে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক বাড়ে ১৯১ পয়েন্ট।
পরপর দুই কার্যদিবস শেয়ারবাজারে এমন তেজীভাব দেখা দিলেও সোমবার তা অব্যাহত থাকেনি। বরং এদিন লেনদেনের শুরু থেকেই একের পর এক প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমেছে। এতে মূল্যসূচকের বড় পতন ঘটেছে।
দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আগের কার্যদিবসের তুলনায় ৫২ পয়েন্ট কমে ৫ হাজার ৩৪২ পয়েন্টে নেমে গেছে। অপর দুই সূচকের মধ্যে ডিএসই শরিয়াহ সূচক ৬ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ২৩৩ পয়েন্টে। আর ডিএসই-৩০ সূচক ২০ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ৮৮১ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।
মূল্যসূচকের এই পতনের দিনে ডিএসইতে সিংহভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমেছে। দিনভর বাজারটিতে লেনদেনে অংশ নেয়া ৬০টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বেড়েছে। বিপরীতে কমেছে ২৫৮টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ২৭টির দাম।
মূল্যসূচক ও সিংহভাগ প্রতিষ্ঠানের দর পতনের পাশাপাশি ডিএসইতে কমেছে লেনদেনের পরিমাণ। আজ দিনভর ডিএসইতে মোট ৪৬৭ কোটি ৩৪ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয়েছিল ৫৩৫ কোটি ৯৫ লাখ টাকার শেয়ার। সেই হিসাবে আজ ৬৮ কোটি ৬১ লাখ টাকার শেয়ার কম লেনদেন হয়েছে।
ডিএসইর এক সদস্য বলেন, দেশের শেয়ারবাজারে বেশ কিছু দিন ধরেই মন্দাভাব চলছে। এখান থেকে বাজার ঘুরে দাঁড়াবে, এটাই স্বাভাবিক ছিল। কিন্তু পর পর দুই কার্যদিবস শেয়ারবাজারে যে উত্থান হয়েছিল তা যুক্তিসংগত না। আবার আজ যে বড় পতন হলো সেটাও স্বাভাবিক না। শেয়ারবাজারের উত্থান-পতনের ক্ষেত্রে একটি ধারাবাহিকতা থাকা উচিত। মূলত বাজারের ওপর বিনিয়োগকারীদের আস্থা বেশ দুর্বল, যে কারণে এমন বড় উত্থান আবার বড় দরপতনের ঘটনা ঘটছে।
তিনি বলেন, শেয়ারবাজার এখন খারাপ হওয়ার কোনো যুক্তি সংগত কারণ নেই। কিন্তু নির্বাচনের পর টানা যে উত্থান হয়েছিল তা স্বাভাবিক ছিল না। যে কারণে আজ বাজার এমন ভোগান্তি পোহাচ্ছে। ওই সময় দায়িত্বশীলরা বাজারের অস্বাভাবিক উত্থান থামাতে পদক্ষেপ নিলে এখন এই অবস্থা হতো না।
এদিকে লেনদেন কমার দিনে ডিএসইতে টাকার অংকে সব থেকে বেশি লেনদেন হয়েছে ফরচুন সুজের শেয়ার। কোম্পানিটির মোট ৩৫ কোটি ৯৩ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। ১৭ কোটি ৩১ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনে দ্বিতীয় স্থানে এস্কয়ার নিট কম্পোজিট এবং ১২ কোটি ৬৫ লাখ টাকা লেনদেনে তৃতীয় স্থানে উঠে এসেছে ন্যাশনাল পলিমার।
এছাড়া লেনদেনের শীর্ষ ১০ কোম্পানির মধ্যে রয়েছে- লিগাসি ফুটওয়্যার, মুন্নু সিরামকি, ন্যাশনাল টিউবস, জিনেক্স ইনসোসিস, বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশন, ব্র্যাক ব্যাংক এবং ইউনাইটেড পাওয়ার জেনারেশন।
অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএসসিএক্স আজ ৬৩ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ৯ হাজার ৯২৫ পয়েন্টে। বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ২০ কোটি ৩১ লাখ টাকার শেয়ার ও মিউচ্যুয়াল ফান্ড ইউনিট। লেনদেন অংশ নেয়া ২৩৬টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দাম বেড়েছে ৫১টির, কমেছে ১৬৭টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ১৮টির।
এমএএস/এমএমজেড/পিআর