ঊর্ধ্বমুখী রেখে শবে বরাতের ছুটিতে শেয়ারবাজার
সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কঠোর আন্দোলনের হুমকির পর বৃহস্পতিবার (১৮ এপ্রিল) দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) এবং অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) মূল্যসূচকের বড় উত্থান হয়েছে। ফলে টানা পতন থেকে বেরিয়ে সূচক ঊর্ধ্বমুখী রেখে শবে বরাতের ছুটিতে গেল শেয়ারবাজার।
এর আগে বুধবার (১৭ এপ্রিল) দরপতনের প্রতিবাদে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সামনে বিক্ষোভ করে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন। সেই সঙ্গে আগামী মঙ্গলবারের (২৩ এপ্রিল) মধ্যে বাজারের স্বার্থে দাবি মেনে না নেয়া হলে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এক্সচেঞ্জ অ্যান্ড কমিশনের (বিএসইসি) সামনে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলা হবে বলে হুমকি দেন তারা।
বিক্ষোভ থেকে বিনিয়োগকারীরা বিএসইসির চেয়ারম্যান খায়রুল হোসেনের পদত্যাগ, জেড ক্যাটাগরি এবং ওটিসি মার্কেট বন্ধ, ইস্যু মূল্যের নিচে অবস্থানরত কোম্পানিগুলোকে ইস্যু মূল্যে বাইব্যাক, তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোকে ন্যূনতম ১০ শতাংশ লভ্যাংশ বাধ্যতামূলক, খন্দকার ইব্রাহীম খালেদের তদন্ত কমিটির রিপোর্ট অনুযায়ী দোষীদের আইনের আওতায় এনে শাস্তির ব্যবস্থা এবং আইপিও ও প্লেসমেন্ট শেয়ারের অবৈধ বাণিজ্য বন্ধের দাবি জানান।
সে হিসাবে বিনিয়োগকারীদের বেঁধে দেয়া সময়ের আগে শেয়ারবাজারে আরেক কার্যদিবস লেনদেন হবে। কারণ শুক্র ও শনিবার স্বাভাবিক নিয়মে শেয়ারবাজারের লেনদেন বন্ধ থাকবে। রোববার শবে বরাত উপলক্ষে লেনদেন হবে না।
বিনিয়োগকারীদের এই হুমকির মধ্যেই বৃহস্পতিবার শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরু হয়। তবে আগের কায়েক কার্যদিবসের মতো এদিনও লেনদেন শুরুর দিকে পতনের আভাস দিতে থাকে। কিন্তু বেলা ১১টার পর থেকে ঊর্ধ্বমুখী হওয়ার আভাস মেলে। সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে সূচক ঊর্ধ্বমুখী হতে থাকে। ফলে দিনের লেনদেন শেষে দেখা মেলে বড় উত্থান।
লেনদেন চলাকালেই বাজারে গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে শেয়ারবাজারের চলমান সমস্যা সমাধানে ডিএসই থেকে বিএসইসির কাছে একগুচ্ছ প্রস্তাব দেয়া হচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে- ভালো কোম্পানি আনতে আইপিও প্রক্রিয়ায় সংস্কার ও সঠিক দর নির্ধারণে বুক বিল্ডিং সংশোধনীর প্রস্তাব, প্রাইভেট প্লেসমেন্টে কম ও আইপিওতে বেশি শেয়ার ইস্যু, উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের লক-ইন শেয়ারে সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি অব বাংলাদেশ লিমিটেড (সিডিবিএল) দ্বারা বিশেষভাবে নজরদারি রাখা, গ্রামীণফোনের ওপর এনবিআর আরোপিত কর জটিলতার সমাধান ইত্যাদি।
ডিএসই’র এই উদ্যোগের ইতিবাচক প্রভাব পড়ে সার্বিক শেয়ারবাজারে। ফলে একের পর এক প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বাড়তে থাকে। দিন শেষে ডিএসইতে লেনদেনে অংশ নেয়া ২৪৮টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বাড়ার তালিকায় নাম লেখায়। বিপরীতে দাম কমেছে ৫৭টির। অপরিবর্তিত রয়েছে ৪০টির দাম।
বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম বাড়ায় ডিএসই’র প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স আগের কার্যদিবসের তুলনায় ৬১ পয়েন্ট বেড়ে ৫ হাজার ৩২১ পয়েন্টে উঠেছে। অপর দুটি সূচকের মধ্যে ডিএসই-৩০ আগের দিনের তুলনায় ১৭ পয়েন্ট বেড়ে ১ হাজার ৮৯৭ পয়েন্টে এবং ডিএসই শরিয়াহ সূচক ১০ পয়েন্ট বেড়ে ১ হাজার ২২৭ পয়েন্টে অবস্থান করছে।
মূল্যসূচকের এই উত্থানের পাশাপাশি ডিএসইতে বেড়েছে লেনদেনের পরিমাণ। দিনভর বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ৩৫২ কোটি ১৩ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ৩১৪ কোটি ৫৪ লাখ টাকা। সে হিসেবে আগের কার্যদিবসের তুলনায় লেনদেন বেড়েছে ৩৭ কোটি ৫৯ লাখ টাকা।
টাকার অঙ্কে এদিন ডিএসইতে সব থেকে বেশি লেনদেন হয়েছে বাংলাদেশ সাবমেরিন ক্যাবলসের শেয়ার। কোম্পানিটির ১৭ কোটি ৫৫ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। এর পরই রয়েছে ইউনাইটেড পাওয়ার জেনারেশন। কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন হয়েছে ১৭ কোটি ৫০ লাখ টাকার। ১২ কোটি ৫০ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনে এর পরই রয়েছে মুন্নু সিরামিক।
লেনদেনে এরপর রয়েছে- ফরচুন সুজ, বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশন, ন্যাশনাল টিউবস, স্ট্যান্ডার্ড সিরামিক, এস্কয়ার নিটিং, মুন্নু জুট স্টাফলার্স এবং ইস্টার্ন ক্যাবলস।
অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের সার্বিক মূল্যসূচক সিএসসিএক্স ১১০ পয়েন্ট বেড়ে ৯ হাজার ৮৪২ পয়েন্টে অবস্থান করছে। বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ১৮ কোটি ৭৮ লাখ টাকা। লেনদেন হওয়া ২৩৬টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১৭৬টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ৪৪টির। দাম অপরিবর্তিত রয়েছে ১৬টির।
এমএএস/এমবিআর/পিআর