আশাহত বিনিয়োগকারীরা, রেকিট বেনকিজারের দরে ধস

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৬:৪৯ পিএম, ১৬ এপ্রিল ২০১৯

 

লভ্যাংশ ঘোষণাকে কেন্দ্র করে পুঁজিবাজারে তালিকভুক্ত বহুজাতিক কোম্পানি রেকিট বেনকিজারের শেয়ার দাম ৫ মাসের ব্যবধানে বেড়ে দ্বিগুণ ছাড়িয়ে যায়। তবে প্রতিষ্ঠানটি বিনিয়োগকারীদের জন্য ‘প্রত্যাশিত’ লভ্যাংশ ঘোষণা না করায় মঙ্গলবার শেয়ারের দরে ধস নামে। একদিনে কোম্পানির শেয়ার দর কমেছে ছয়’শ টাকার ওপরে।

ডেটল, মরটিন, হারপিক, ভ্যানিশ, লাইজল ও ভিটসহ কয়েকটি প্রসাধন পণ্য নিয়ে বাংলাদেশে ব্যবসা করা রেকিট বেনকিজার পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয় ১৯৮৭ সালে। ভালো ব্যবসার পাশাপাশি শেয়ারহোল্ডারদের মোট অঙ্কের লভ্যাংশ দেয়ার কারণে প্রতিষ্ঠানটির শেয়ার বরাবরই বিনিয়োগকারীদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে।

তবে সাম্প্রতিক সময়ে কোম্পানিটির শেয়ারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের চাহিদা অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় বেশ বেড়ে যায়। তালিকাভুক্ত আরেক বহুজাতিক কোম্পানি ব্রিটিশ আমেরিকান টোবাকো বাংলাদেশের বড় লভ্যাংশ ঘোষণা বিনিয়োগকারীদের এই চাহিদা বাড়ার পিছনে বড় ভূমিকা রাখে। গত ১২ মার্চ শেয়ারহোল্ডারদের জন্য ব্রিটিশ আমেরিকান টোবাকোর পক্ষ থেকে ৫০০ শতাংশ নগদ ও ২০০ শতাংশ বোনাস শেয়ার লভ্যাংশ ঘোষণা আসে।

শেয়ারবাজারের বিনিয়োগকারীদের মধ্যে গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে স্বল্প মূলধনের বহুজাতিক কোম্পানির রেকিট বেনকিজারও এবার নগদ লভ্যাংশের পাশাপাশি বোনাস লভ্যাংশ ঘোষণা করবে। এমন গুঞ্জনের ফলে ১২ মার্চ রেকিট বেনকিজারের শেয়ারের দাম বাড়ে ১৪০ টাকা। পরের দু’দিন দাম বাড়ার এই প্রবণতা অব্যাহত থাকলে মাত্র তিন কার্যদিবসে কোম্পানিটির শেয়ার দাম বাড়ে ৪৪২ টাকা।

তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, ১২ মার্চ থেকে রেকিট বেনকিজারের শেয়ারের দাম বাড়ার পালে বড় ধরনের হাওয়া লাগলেও কোম্পানিটির শেয়ার দাম গত অক্টোবর থেকেই বাড়ছে। ১০ অক্টোবর রেকিট বেনকিজারের শেয়ারের দাম ছিল ১ হাজার ৬৭৬ টাকা ২০ পয়সা। সেখান থেকে কয়েক ধাপে বেড়ে ১১ মার্চ কোম্পানিটির শেয়ার দাম দাঁড়ায় ২ হাজার ৮০৪ টাকায়। এরপর তা বাড়তে বাড়তে ২১ মার্চ ৩ হাজার ৫৯৬ টাকায় পৌঁছে যায়। এরপর কয়েক দফা দাম ওঠা নামার মাধ্যমে সোমবার (১৫ এপ্রিল) লেনদেন শেষে দাঁড়ায় ৩ হাজার ১০৫ টাকা।

এ পরিস্থিতিতে মঙ্গলবার সকালে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের মাধ্যমে ২০১৮ সালের সমাপ্ত হিসাববছরের জন্য কোম্পানিটির ৭০০ শতাংশ লভ্যাংশ ঘোষণার সংবাদ আসে। যার সম্পূর্ণটায় নগদ। অর্থাৎ যারা কোম্পানিটি থেকে বোনাস শেয়ার লভ্যাংশ হিসেবে পাওয়ার আশা করেছিলেন তাদের সেই আশা পূরণ হয়নি। শুধু তাই নয়, শেষ তিন বছরের মধ্যে কোম্পানিটি সর্বনিম্ন লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। এর আগে ২০১৭ সালে ৭৯০ শতাংশ এবং ২০১৬ সালে ৭৭৫ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছিল কোম্পানিটি।

বিনিয়োগকারীদের এমন আশাভঙ্গের কারণে মঙ্গলবার লেনদেনের শুরুতেই রেকিট বেনকিজারের শেয়ারের দাম নেতিবাচক প্রবণতা দেখা দেয়। সময় গড়ানোর সঙ্গে কোম্পানির শেয়ারের দরপতন বাড়তে থাকে। প্রতিষ্ঠানটির লেনদেন শুরুর মূল্য ৩ হাজার ১০৫ টাকা ৪০ পয়সা নির্ধারণ করা হলেও লেনদেন শুরু হয় ২ হাজার ৮০০ টাকা থেকে; অর্থাৎ লেনদেনের শুরুতেই শেয়ার দাম কমে যায় ৩০৫ টাকা। আর দিনের শেষ লেনদেন হয় ২ হাজার ৪৯০ টাকায়। অর্থাৎ একদিনে কোম্পানিটির শেয়ার দাম কমেছে ৬১৫ টাকা ৪০ পয়সা বা ১৯ দশমিক ৮২ শতাংশ।

এদিকে রেকিট বেনকিজারের পাশাপাশি মঙ্গলবার একটি (মেরিকো বাংলাদেশ) বাদে সবকটি বহুজাতিক কোম্পানির শেয়ারের দরপতন হয়েছে। অথচ ব্রিটিশ আমেরিকান টোবাকো বাংলাদেশের লভ্যাংশ ঘোষণা আসার পর মন্দ বাজারেও সবকটি বহুজাতিক কোম্পানির শেয়ার দাম বেড়ে ছিল।

এমএএস/জেএইচ/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।