কেউ বিক্রি করতে চাচ্ছে না ব্যাটবিসির শেয়ার
লভ্যাংশপ্রাপ্ত যোগ্য বিনিয়োগকারী নির্ধারণ হয়ে গেলেও পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বহুজাতিক কোম্পানি ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো বাংলাদেশ কোম্পানির (ব্যাটবিসি) শেয়ার কেউ বিক্রি করতে চাচ্ছেন না। রোববার লেনদেনের শুরু থেকে দফায় দফায় দাম বাড়িয়ে বেশকিছু বিনিয়োগকারী কোম্পানিটির শেয়ার কিনতে প্রস্তাব দেয়। কিন্তু যাদের কাছে কোম্পানিটির শেয়ার রয়েছে তারা কেউ বিক্রি করতে রাজি হননি। এমনকি লেনদেন শুরুর দাম থেকে প্রায় ১০০ টাকা দাম বাড়িয়েও প্রতিষ্ঠানটির শেয়ার কেনা সম্ভব হয়নি।
শেয়ারহোল্ডারদের জন্য মোটা অংকের লভ্যাংশ ঘোষণার কারণে সাম্প্রতিক সময়ে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে কোম্পানিটির শেয়ারের বেশ চাহিদা বেড়ে যায়। ফলে দুই মাসের বেশি সময় ধরে শেয়ারবাজারে মন্দাভাব দেখা দিলেও কোম্পানিটির শেয়ারের দাম বাড়ার ধারা অব্যাহত রয়েছে।
গত দুই মাসে তালিকাভুক্ত তিন শতাধিক প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমেছে। এর মধ্যে ১০ শতাংশের ওপরে দাম কমেছে প্রায় ২০০টি প্রতিষ্ঠানের। বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের এমন পতনের মধ্যেই লভ্যাংশ ঘোষণার প্রভাবে রেকর্ড ডেটের আগেই গত দুই মাসে ব্যাটবিসির শেয়ার দাম বেড়েছে ৩০ শতাংশের ওপরে।
তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, ডিসেম্বর মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো কোম্পানির শেয়ার দাম বাড়ছে। তবে ১২ মার্চ বড় লভ্যাংশ ও মূলধন বাড়ানোর ঘোষণা আসার পর শেয়ার দামে বড় উলম্ফন হয়। অতীতের সকল রেকর্ড ভেঙে নতুন উচ্চতায় পৌঁছে যায় কোম্পানির শেয়ার দাম।
গত বছরের ১৩ ডিসেম্বর কোম্পানিটির শেয়ারের দাম ছিল ৩ হাজার ৩৯৮ টাকা ৫০ পয়সা। যা অনেকটা টানা বেড়ে চলতি বছরের ১১ মার্চ লেনদেন শেষে দাঁড়ায় ৩ হাজার ৯৪৯ টাকা ৫০ পয়সায়। অর্থাৎ তিন মাসে কোম্পানিটির শেয়ার দাম বাড়ে ৫৫১ টাকা।
এরপর ১২ মার্চ সকালে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) মাধ্যমে লভ্যাংশ হিসেবে ব্যাটবিসির ৫০০ শতাংশ নগদ ও ২০০ শতাংশ বোনাস শেয়ার এবং অনুমোদিত মূলধন অনুমোদিত ৬০ কোটি থেকে বাড়িয়ে ৪৫০ কোটি টাকা করার ঘোষণা আসে।
এমন বড় ঘোষণা আসায় ডিএসইতে ওইদিন কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন শুরু হয় ৫ হাজার ১০০ টাকায়। এরপর তা আরও বেড়ে এক পর্যায়ে ৫ হাজার ৫০০ টাকায় উঠে যায়। অর্থাৎ এক লাফে কোম্পানিটির শেয়ার দাম বাড়ে ১ হাজার ৫৫১ টাকা।
লেনদেনের শেষ পর্যন্ত কোম্পানির শেয়ার দামের এই উলম্ফন না টিকলেও আগের দিনের তুলনায় শেয়ার দাম ১৬ দশমিক ৪৭ শতাংশ বেড়ে ৪ হাজার ৫৮০ টাকায় দাঁড়ায়। এরপর তা বাড়তে রেকর্ড ডেটে দাঁড়ায় ৪ হাজার ৫৬৫ টাকায়।
রেকর্ড ডেটের পর রোববারই কোম্পানিটির শেয়ারের প্রথম লেনদেন দিবস। ফলে ২০০ শতাংশ লভ্যাংশ দেয়ার কারণে আজ কোম্পানিটির শেয়ারের লেনদেন শুরুর দাম দাঁড়ায় ১ হাজার ৫২১ টাকা ৮০ পয়সা।
তবে প্রায় ৯০ টাকা বাড়িয়ে শুরুতেই ১ হাজার ৬১০ টাকা করে প্রতিষ্ঠানটির ৫০টি শেয়ার কেনার প্রস্তাব আসে। কিন্তু এ দামে কেউ শেয়ার বিক্রি করতে রাজি হয়নি। এরপর কয়েক দফা দাম বাড়িয়ে এক পর্যায়ে ১ হাজার ৬১৬ টাকা ৯০ পয়সা দরে ১ লাখ ৫৮ হাজার ৩৭৬টি শেয়ার কেনার প্রস্তাব আসে। এ দামেও কেউ শেয়ার বিক্রি করতে রাজি হয়নি। ফলে ক্রেতা থাকলেও প্রতিষ্ঠানটি শেয়ারের বিক্রেতা শূন্য হয়ে পড়েছে।
ডিএসইর তথ্য অনুযায়ী, কোম্পানিটির মোট শেয়ার সংখ্যা ৬ কোটি। এর মধ্যে কোম্পানিটির উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের হাতেই রয়েছে ৭২ দশমিক ৯১ শতাংশ শেয়ার। সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে আছে মাত্র দশমিক ৬৮ শতাংশ। বাকি শেয়ারের মধ্যে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে ৯ দশমিক ৭৬ শতাংশ এবং সরকারের কাছে দশমিক ৬৪ শতাংশ আছে। আর বিদেশিদের কাছে ১৬ দশমিক শূন্য ১ শতাংশ শেয়ার রয়েছে।
এমএএস/এসআর/এমএস