রিজার্ভ খেয়ে মূলধন ঘাটতির শঙ্কা : কর অব্যাহতি চায় ডিএসই

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৫:৪৮ পিএম, ০২ এপ্রিল ২০১৯

রিজার্ভ ভেঙে শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশ দিয়ে মূলধন ঘাটতির শঙ্কায় পড়েছে দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)। এমন পরিস্থিতিতে পরিচালন মূলধন ঘাটতির হাত থেকে রক্ষা পেতে সরকারের কাছে কর অব্যাহতি চেয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কাছে পাঠানো আগামী অর্থবছরের (২০১৯-২০) বাজেট প্রস্তাবনায় এ সুবিধা চাওয়া হয়েছে। কর অব্যাহতি সুবিধা না দেয়া হলে পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকারী প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলেও অভিমত দিয়েছে ডিএসই।

ডিমিউচ্যুয়ালাইজেশন (ব্যবস্থাপনা থেকে মালিকানা পৃথক করা) হওয়ার পর সরকার ২০১৪-১৫ অর্থবছর থেকে পাঁচ বছর স্টক এক্সচেঞ্জকে বিশেষ কর ছাড় সুবিধা দেয়। ক্রমহ্রাসমান হারে দেয়া এই কর ছাড়ার কারণে ২০১৪-১৫ ও ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ডিএসইকে কর দিতে হয়নি। আর ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৬০ শতাংশ, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৪০ শতাংশ এবং ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ২০ শতাংশ কর ছাড় পায় প্রতিষ্ঠানটি।

সরকারের দেয়া কর ছাড়ের এই বিশেষ সুবিধা চলতি অর্থবছরে শেষ হয়ে যাওয়ার কারণে আগামী অর্থবছর থেকে ডিএসইকে সম্পূর্ণ কর দিতে হবে। এরই প্রেক্ষিতে সরকারকে কর না দিতে পরিচালন মূলধন ঘাটতির শঙ্কা এবং বিনিয়োগকারীদের ক্ষতির আশঙ্কা প্রকাশ করে ২০১৬-১৭, ২০১৭-১৮ এবং ২০১৮-১৯ এই তিন অর্থবছরের জন্য সম্পূর্ণ কর অব্যাহতি চেয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।

এ বিষয়ে ডিএসইর পক্ষ থেকে এনবিআরকে বলা হয়েছে, ডিএসই ২০১৭-১৮ অর্থবছরে শুধুমাত্র ৬ কোটি টাকা নেট পরিচালন মুনাফা করেছে। এখনই যদি আবার এই আয়ের ওপর করারোপ করা হয় সেক্ষেত্রে স্টক এক্সচেঞ্জ শিগগিরই পরিচালন মূলধনের ঘাটতির সম্মুখীন হবে, যা সরকারের ডিমিউচ্যুয়ালাইজড এক্সচেঞ্জ-এর সফলতার ব্যাপারে ঐকান্তিক প্রচেষ্টা ও স্বদিচ্ছার ব্যত্যয় ঘটাবে বলে প্রতীয়মান হয়।

‘ডিমিউচ্যুয়ালাইজেশনের পূর্বে এক্সচেঞ্জের আয় করমুক্ত ছিল। এখন যদি আয়কর আরোপ করা হয় তবে সরকার, এক্সচেঞ্জসমূহসহ দেশের সকল বিনিয়োগকারী প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে’ এমন কথাও বলেছে ডিএসই।

কর অব্যাহতি পাওয়ার যুক্তি হিসেবে ডিএসই আরও বলেছে, বর্তমানে ডিএসই পরিচালন ক্ষতির সম্মুখীন। এমতাবস্থায়, এক্সচেঞ্জের আয়’র ওপর যদি কর আরোপ করা হয় সেক্ষেত্রে এক্সচেঞ্জ তার অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার স্বার্থে লেনদেন ফি’র হার বাড়িয়ে দিতে বাধ্য হবে, যা প্রকারান্তে সাধারণ বিনিয়োগকারীর ওপরই বর্তাবে। ফলে বর্তমান প্রেক্ষাপটে পুঁজিবাজারের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়বে, যা শিল্প ও বাণিজ্যিক উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করবে। করের কারণে লেনদেন ফি বাড়িয়ে দিলে ট্রেডের (লেনদেন) পরিমাণ ব্যাপক হারে হ্রাস পাবে, ফলশ্রুতিতে এই খাতেও প্রচুর রাজস্ব হ্রাস পাবে।

পরিচালন ক্ষতির সম্মুখীন ও মূলধন ঘাটতিতে পড়ার শঙ্কা প্রকাশ করে সরকারের কাছে কর অব্যাহতি চাইলেও টানা তিন বছর প্রতিষ্ঠানটি রিজার্ভ ভেঙে শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশ দিয়েছে। এই লভ্যাংশ দিতে ডিএসইকে ডেভলপমেন্ট ও বিল্ডিং ফান্ডের মতো বিশেষায়িত তহবিলের অর্থও নিতে হয়েছে।

এদিকে বাজেট প্রস্তাবনায় তালিকাভুক্ত ও অতালিকাভুক্ত কোম্পানির মধ্যে কর্পোরেট কর হারের পার্থক্য বাড়ার দাবি জানিয়েছে ডিএসই। এ বিষয়ে প্রতিষ্ঠানটি বলেছে, তালিকাভুক্ত ও অতালিকাভুক্ত কোম্পানির মধ্যে বর্তমানে কার হারের পার্থক্য ১০ শতাংশ। এটাকে বাড়িয়ে ২০ শতাংশ করা উচিত। যা অধিক মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানি ও স্থানীয় ব্লু-চিপ কোম্পানিকে এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত হতে উৎসাহিত করবে।

এমএএস/জেএইচ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।