চক্রবৃদ্ধির ‘ফাঁদে’ ঋণখেলাপিরা মাফ পাচ্ছেন

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৭:৪৪ পিএম, ১৮ মার্চ ২০১৯
ফাইল ছবি

খেলাপি ঋণ হওয়ার ক্ষেত্রে অনেকগুলো কারণের মধ্যে একটি হচ্ছে ব্যাংকগুলোর চক্রবৃদ্ধি সুদ। এ কারণে যারা খেলাপি ঋণের আওতায় পড়েছেন, তাদের বিষয়ে কী সিদ্ধান্ত আপনাদের? এক সাংবাদিকের এমন প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, ‘তাদের মাফ করে দেয়া হবে। সেগুলো আমরা কমিয়ে দেব। আগামী বাজেটের আগে থেকেই এই প্রক্রিয়া শুরু হবে।’

সোমবার সন্ধ্যায় এনইসি সম্মেলন কক্ষে রাষ্ট্র মালিকানাধীন বাণিজ্যিক ব্যাংক, বিশেষায়িত ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর পরিচালনা পর্ষদের সঙ্গে মতবিনিময় শেষে অর্থমন্ত্রী এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, ‘অসাধু ব্যবসায়ীদের ক্ষেত্রে দুপক্ষ দায়ী। যিনি অসাধু ব্যবসায়ী তিনি এবং তাকে যারা সাহায্য করেছেন তারাও। উভয়ের বিচার করা হবে। আমরা আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব।’

ব্যাংকিং খাতে যেসব অনিয়ম হয়েছে, তাদের বিচারের আওতায় আনা হবে। আপনার দায়িত্ব নেয়ার চার মাস হতে চলল, সেটার দৃশ্যমান অগ্রগতি কত দূর? এই প্রশ্নের জবাবে মুস্তফা কামাল বলেন, দৃশ্যমান পদক্ষেপ নিতে হলে আমাকে সময় দিতে হবে। আমি পদক্ষেপ নেব, সেজন্য কাজ করছি। যেখানে আইনে ব্যত্যয় আছে, সেগুলো সংশোধন করে কাজে হাত দেব, যাতে আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে কেউ বের হতে না পারে।

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা কাউকে কষ্ট দেব না। একটা প্রতিষ্ঠান তৈরি করা অনেক কষ্টের কাজ। প্রতিষ্ঠান বন্ধ করা অনেক সহজ। আমরা চাই প্রতিষ্ঠানগুলো ঠিকভাবে চলুক। যারা অন্যায় করেছে, তারাও যদি এসে বলে, আমি অন্যায় করছি, টাকা শোধ করে দেব- তাহলে তাদেরও মাফ করে দেব। দেশের স্বার্থে এ কাজটি করা হবে।’

মুস্তফা কামাল বলেন, ‘আমি একটা জায়গায় হাত দেব। যেভাবে ব্যাংকের বোর্ডগুলো পরিচালিত ও গঠিত হচ্ছে, সেখানে সত্যিকারভাবে যারা ব্যাংকিং বোঝেন, তাদের হাতে দায়িত্ব তুলে দেয়ার জন্য আমি প্রধানমন্ত্রীকে বলব। প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন নিয়ে এই কাজটি করা হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘চাকরি নাই কিছু নাই, ব্যাংকের পরিচালক বানিয়ে দিলেন– এসব আর হবে না। এখন সত্যিকারভাবে, যথাযথভাবে এদের সাক্ষাৎকার নিয়ে, যার যোগ্যতা আছে, কাজ করতে পারবে, ব্যাংকিং বোঝে, অ্যাকাউন্টিং বোঝে, আইন বোঝে, এর সঙ্গে প্রাসঙ্গিক সবকিছু বোঝে– তাদের আমি ব্যাংকের পরিচালক বানাব।’

অর্থমন্ত্রী বলেন, আপনারা আমাকে সব বিষয়ে সুপারিশ করবেন, ব্যাংকের ব্যাপারে সুপারিশ করবেন না। (ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের উদ্দেশে) ঠিক আছে? নাকি রাগ করছেন? রাগ করলে কিছু করার নেই। এখন সাক্ষাৎকারে পাস করতে হবে। পাস না করলে হবে না।

কাউকে জেলে পাঠাতে চান না উল্লেখ করে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘ব্যাংক যদি খারাপই হবে, তাহলে কীভাবে আমরা সমৃদ্ধি অর্জন করছি? সুতরাং এটা সঠিক নয়। আমাদের লক্ষ্য হবে ভালোদের সাহায্য করা, খারাপদের শাস্তির ব্যবস্থা করা। শাস্তির ব্যবস্থাটাও আমরা কাউকে জেলে পাঠিয়ে করতে চাই না। আমরা চাই, ব্যবসায়ীরা ব্যবসা করুক। একটা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে আরেকটা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে সেখানে নিয়ে আসা ১০ বছরের কাজ।’

তিনি বলেন, দেশে ব্যাংক কয়টা, ৬২টা। ১৬০ বা ১৬৩ মিলিয়ন মানুষের জন্য এগুলো অনেক বেশি নয়। আমি এখনও বলব বেশি নয়। বিদেশের একটা ব্যাংকের ব্রাঞ্চে যে সম্পদ, তা আমাদের বেসরকারি খাতের সব ব্যাংকের সম্পদের সমান। সুতরাং নম্বর কতটা হলো সেটা দেখে যদি আতঙ্কিত হয়ে যাই, তাহলে সেটা হবে না। এগুলো ঠিকভাবে চালাতে হবে। চালাতে পারলে নাথিং লাইক দ্যাট (সব সমস্যার সমাধান)।

দেশের সব মানুষকে আবার ব্যাংকমুখী করার জন্য চেষ্টা করা হবে বলেও জানান অর্থমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আমরা আগামীতে চেষ্টা করব, কিছু প্লেইন অঞ্চলে পিছিয়ে পড়া এলাকা, রংপুর বিভাগের একাধিক জেলায় ক্রপ ইন্স্যুরেন্স করার। একটা বা দুটা হাওরে আমরা ক্রপ ইন্স্যুরেন্স করব। একটা শক্তিশালী অর্থনীতি যেভাবে আচরণ করে, সেভাবে আমরাও শুরু করব।’

পিডি/এমএসএইচ/এমএস/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।